নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথ ধরে ছুটছে সময়। শুধু টিকে থাকা নয়, ব্যবসার উন্নতি নিশ্চিত করতে হলেও সেগুলিকে গ্রহণ করতে হবে সংস্থা পরিচালনার কাণ্ডারিদের— বৃহস্পতিবার এবিপি গোষ্ঠী আয়োজিত ইনফোকমের দরজা খুলল এই বার্তা দিয়েই। তিন দিনের তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলন শেষ হবে শনিবার। তার শুরুর দিনটিতে মঞ্চে হাজির বক্তাদের কথার নির্যাস, পরিচালকই উপলব্ধি করবেন তাঁর ব্যবসাকে দিশা দেখাতে পারে নতুন কোন আবিষ্কার। যাঁরা সঠিক সময়ে ব্যবসায় সেটিকে শামিল করবেন, তাঁরাই দ্রুত এগিয়ে যাবেন। না হলে বিপন্ন হতে পারে অস্তিত্ব। তবে নতুন কিছু গ্রহণ করলে সাময়িক কিছু সমস্যাও হবে। নেতৃত্ব দেবেন যাঁরা, তাঁদের চ্যালেঞ্জ সমস্যাকে এড়িয়ে না গিয়ে তার মোকাবিলা করা। তবেই নিশ্চিত হবে উন্নতি।
অনুষ্ঠানের সূচনায় এবিপি গোষ্ঠীর সিইও ধ্রুব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’ভাবে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। একটি, গতানুগতিকতায় পারদর্শিতা অর্জন করে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। অন্যটি, গতানুগতিকতাকে ধাক্কা দিচ্ছে এমন কিছু বিষয় গ্রহণ করে, তাতে পারদর্শী হয়ে নতুন পথে এগিয়ে উন্নতির নতুন মাত্রা ছোঁয়া। এই উদ্ভাবনের যুগে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়কে গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। না হলে যাঁরা তা গ্রহণ করবেন, তাঁরা এগোবেন। যাঁরা করবেন না, তাঁদের দাঁড়িয়ে পড়তে হবে। এমনকি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে সঙ্কটে পড়তে পারে ব্যবসার অস্তিত্বও।’’
প্রধান বক্তা হিসেবে এ দিন ইনফোকমের মূল সুর বেঁধে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয়ের আন্তর্জাতিক বক্তা ম্যাথু গ্রিফিন। এ বারের সম্মেলন যে বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে, সেই ‘সাসটেনেবল ডিসরাপশন’ প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘গতানুগতিকতায় ধাক্কা দিতে না পারলে নতুন কিছু করা কঠিন। আর ধাক্কা দিতে পারে, এমন বিষয়গুলিই ‘ডিসরাপশন’। যা মূলত প্রযুক্তিভিত্তিক। যেমন, ডিজিটাল প্রযুক্তি। বাজার দখলে যার ব্যবহার অপরিহার্য।’’ ম্যাথুরও বার্তা, ধাক্কাকে এড়িয়ে না গিয়ে ব্যবসার উন্নততর স্তরে উত্তরণের জন্য কাজে লাগানোই দ্রুত পরিবর্তনশীল এই জগতে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য প্রয়োজন পরিচালকদের দূরদর্শিতা, উন্নতির আকাঙক্ষা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। বিষয়টি বোঝাতে আইবিএম এবং মাইক্রোসফটের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। জানান, এক সময় প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে আইবিএম ছিল শীর্ষে। কিন্তু পরবর্তীকালে বাজারে আসা ক্লাউড কম্পিউটার প্রযুক্তিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। অথচ মাইক্রোসফট ক্লাউডের ব্যবহার এবং ছোট কম্পিউটার তৈরিতে জোর দেওয়ায় উঠে আসে উপরে। তারা বুঝেছিল, ভবিষ্যতের বাজার ক্লাউড কম্পিউটারের। আইবিএম সময়ের সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তন না করার খেসারত গুনেছে। এই প্রসঙ্গে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার না করার জন্য বলিউডকেও সতর্ক করেছেন ম্যাথু। তাঁর দাবি, বলিউড কৃত্রিম মেধার ব্যবহার তেমন করছে না। অথচ এক দিন হয়তো দেখা যাবে এর হাত ধরে ঘরে বসে কয়েক মিনিটে ব্লকবাস্টার সিনেমা বানাচ্ছে ছোটরাও। গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে এসে কৃত্রিম মেধার ধাক্কাকে কাজে লাগাতে না পারলে ভবিষ্যতে ভুগতে হতে পারে মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র শিল্পকে।
নতুনকে গ্রহণের ধাক্কা সয়ে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ অবশ্য ইনফোকমের মঞ্চেই মিলেছে এ দিন, যখন মঞ্চে উঠেছেন দুই উদ্যোগপতি বোন নিশিতা এবং নিকিতা বেলারসিংহ। তাঁরা জানান, বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) একটি ‘ডিসরাপশন’। পেট্রল-ডিজ়েলের গতানুগতিক পথ ছেড়ে বহু সংস্থা সেগুলি তৈরি করছে। কিন্তু ইভি-তে প্রয়োজনীয় ব্যাটারির বাড়তে থাকা চাহিদা এবং তা পূরণে আমদানি নির্ভরতা দেখে তাঁরা ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ (পচনশীল) ব্যাটারি আনতে উদ্যোগী হন। দুই বোনের দাবি, ‘‘আমরাই দেশে প্রথম এমন ব্যাটারি বাজারে ছাড়ব। তা ইভি ছাড়াও সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগে।’’ নিশিতা-নিকিতার সংস্থা নেক্সাস পাওয়ার ভূবনেশ্বরে তৈরি। কর্মী প্রায় ৪৫ জন। চার বছর আগে তৈরি কারখানায় ব্যাটারি উৎপাদন শুরু হয়েছে। নিকিতা বলেন, ‘‘সংস্থা যাতে বাজারে টিকে থাকতে পারে, তাই গবেষণা-উন্নয়নে জোর দিচ্ছি। খুব শীঘ্রই বাণিজ্যিক ভাবে ব্যাটারি তৈরি শুরু হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)