বহু দিন ধরে ধুঁকতে থাকা ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) সরকারি সহায়তার প্রত্যাশায় বসেছিল। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, গত দু’তিন বছরের বাজেটে যে সব দাবি বারবার অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল, তারই কিছুটা ঝুলিতে এসেছে এ বার। শনিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি, তিন শিল্পেরই সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন। অনেকটা করে বাড়িয়েছেন ঋণ পাওয়ার সীমা। নির্মলা জানান, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলির লগ্নি ও ব্যবসার অঙ্কের যে সীমা ছিল, তা যথাক্রমে আড়াই গুণ ও দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে আরও বেশি সংস্থা যেমন এই শিল্পের আওতায় ঢুকবে, তেমনই বাড়বে কর্মসংস্থান।
বর্তমানে ক্ষুদ্র সংস্থাগুলির লগ্নির সীমা ২.৫ কোটি টাকা। ছোট ও মাঝারি হলে যথাক্রমে ২৫ কোটি ও ১২৫ কোটি টাকা। তিন ধরনের সংস্থায় মোট ব্যবসার অঙ্ক হতে হয় যথাক্রমে ১০ কোটি, ১০০ কোটি এবং ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে। বণিকসভা সিআইআই-এর এমএসএমই বিষয়ক পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান সঞ্জয় সাবরেওয়াল বলেন, ‘‘এই ক্ষেত্রের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকল এই বাজেট। সামগ্রিক বৃদ্ধির জন্য যে ভাবে সীমা বাড়ানো হয়েছে, তা অভূতপূর্ব।’’ সংগঠন ‘এমএসএমই ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’-এর রাজ্য শাখার প্রধান মমতা বিনানির মতে, নোটবন্দি, জিএসটি থেকে একের পর এক ধাক্কা এসেছে। কোভিডের পরেই ছোট শিল্পের যে সাহায্য দরকার ছিল, তা ২০২৫-এ এসে মিলল।
এমএসএমই-র ঋণ নেওয়ার সীমাও দ্বিগুণ করা হয়েছে। ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’-এ ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থার ক্ষেত্রে তা ৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। মাঝারিগুলি পাবে ২০ কোটি পর্যন্ত। ক্ষুদ্রগুলির জন্য আনা হচ্ছে বিশেষ ক্রেডিট কার্ড। যার মাধ্যমে সহজেই ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে তারা। শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়া বলেন, ‘‘দেশের সিংহভাগ সংস্থাই এমএসএমই। এই ঘোষণা কর্মসংস্থান তৈরি করবে। মাথা তুলবে রফতানি। দেশের মোট রফতানির ৪৫% এই ক্ষেত্র থেকে হয়। সব মিলিয়ে চাঙ্গা হবে অর্থনীতি।’’
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০৩০-এর মধ্যে ভারত থেকে ২ লক্ষ কোটি ডলার রফতানির যে লক্ষ্য স্থির হয়েছে, বাজেটের ব্যবস্থাগুলির তাকে ছোঁয়ার রাস্তা করে দিল। অর্থমন্ত্রী ২২৫০ কোটি
টাকা বরাদ্দে ‘এক্সপোর্ট প্রোমোশন মিশন’ তৈরির কথাও বলেছেন। এতে মূলত ছোট সংস্থাগুলিই বেশি উপকৃত হবে, মন্তব্য ভারত চেম্বারের সভাপতি এন জি খেতানের। ভারতীয় যুব শক্তি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী ভেঙ্কটরমন ভেঙ্কটেশন বলেন, ‘‘এ বার হয়তো ছোট শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। মহিলা, তফসিলি জাতি ও উপজাতির প্রতিনিধিদের জন্য মাইক্রো ক্রেডিট কার্ড ও মেয়াদি ঋণ চালুর সিদ্ধান্তে তাদের আর্থিক স্বাস্থ্য চাঙ্গা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)