Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Investments

লাগাতার লগ্নিতে আড়াল শেয়ার বাজারের আঘাত

সুদ কমার আবহ তৈরি হচ্ছে দেশে-বিদেশে। ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড এরই মধ্যে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। অর্থনীতির পরিস্থিতি বিচারে সেপ্টেম্বরে আমেরিকাও তা কমাতে পারে।

—প্রতীকী চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৪ ০৪:৪৬
Share: Save:

বাজেট আঘাত করেছিল বাজারকে। তবে মাত্র কয়েক দিনে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ছন্দে ফেরে সূচক। যদিও গভীরে ক্ষতটা রয়ে গিয়েছে। আসলে বাজেটের কিছু প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি লগ্নিকারীরা। তার পরেও সূচকে ধস নামেনি। বরং কিছু দিন পরে নতুন নজির গড়ে সেনসেক্স, নিফ্‌টি। এর মূল কারণ লাগাতার লগ্নির প্রবেশ। এর কান্ডারি মূলত মিউচুয়াল ফান্ড। তাতে যোগ হয়েছে বেশি লাভের আশায় বহু মানুষের শেয়ারে পুঁজি ঢালা।

বাজেটের যে প্রস্তাবগুলি বাজারে ক্ষত তৈরি করেছে, সেগুলি হল—

  • শেয়ার এবং তা নির্ভর ফান্ডে করা লগ্নিতে স্বল্পকালীন মূলধনী লাভকর ১৫% থেকে বাড়িয়ে ২০% করা।
  • দীর্ঘকালীন লাভকরে ছাড়ের মাত্রা ১ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.২৫ লক্ষ করা হলেও, তার বেশি মুনাফার ক্ষেত্রে করের হার ১০% থেকে বাড়িয়ে ১২.৫% করা।
  • ‘শেয়ার বাইব্যাক’ অর্থাৎ কোনও সংস্থা নিজের শেয়ার বাজার থেকে নিজেই কিনে ফিরিয়ে নিলে, লাভের উপর করের দায় সংস্থাটির থেকে সরিয়ে লগ্নিকারীদের ঘাড়ে চাপানো।
  • শেয়ারের আগাম লেনদেনে (ফিউচার অ্যান্ড অপশন) মাসুল বা এসটিটি অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া।

এই সব আঘাত আড়াল করতে অবশ্য বেশি সময় নেয়নি বাজার। এর অন্যতম কারণ, চড়া মূল্যবৃদ্ধি। যা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের খরচ বাড়িয়েছে। কমিয়েছে আয় এবং সঞ্চয়। ফলে অনেক লগ্নিকারী বেশি রিটার্নের আশায় ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘর থেকে টাকা দ্রুত শেয়ার এবং ফান্ডে সরানো বন্ধ করেননি। উপরন্তু এতে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের স্থির সুদের আয়ে বসা চড়া কর এড়ানো যায়। তবে এর ফলে ঋণের চাহিদা বাড়লেও, ব্যাঙ্কগুলিতে জমা সেই অনুপাতে বাড়ছে না। বিষয়টি ভাবাচ্ছে অর্থ মন্ত্রক এবং ব্যাঙ্কিং শিল্পকে। শেয়ার ভিত্তিক বিভিন্ন ফান্ডে শুধু জুলাইয়েই লগ্নিকারীরা খুলেছেন ৫৪ লক্ষ নতুন অ্যাকাউন্ট। ফলে ফান্ডে মোট ফোলিয়োর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩.৮০ কোটি। জুলাইয়ের শেষে ফান্ডে লগ্নি হওয়া মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫ লক্ষ কোটি টাকা।

বাজেট নিয়ে অখুশি প্রবীণ নাগরিকেরাও। তাঁদের বেশির ভাগকে নতুন কর কাঠামোয় যেতে হলেও, সেখানে বয়স্কদের জন্য কোনও সুবিধা নেই। ব্যাঙ্কে মেয়াদি আমানতকারীদের সিংহভাগ বয়স্ক মানুষ। অথচ নতুন কর কাঠামোয় ব্যাঙ্কের সুদে ছাড় নেই। ট্রেনের টিকিটে ছাড় আগেই উঠেছে। স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামে ১৮% জিএসটি গুনতে হয়। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের জমায় সুদ কমলে তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। কল্যাণকর রাষ্ট্রে প্রবীণদের নানা রকম সুবিধা দেওয়া হয়। যার অনেকগুলিই ভারতে পাওয়া যায় না।

সুদ কমার আবহ তৈরি হচ্ছে দেশে-বিদেশে। ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড এরই মধ্যে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। অর্থনীতির পরিস্থিতি বিচারে সেপ্টেম্বরে আমেরিকাও তা কমাতে পারে। ভারতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সেই পদক্ষেপ করতে পারে অক্টোবরে, যদি অগস্টেও খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার শীর্ষ ব্যাঙ্কের বাঁধা ৪% লক্ষ্যমাত্রার নীচে থাকে। জুলাইয়ে সবেমাত্র এই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। তবে খাদ্যপণ্যে এখনও চড়ে। লক্ষ্য পূরণে ধারাবাহিকতা আনতে হলে খাবারদাবারকে সস্তা হতে হবে।

সুদ কমানো শুরু হলে বাজার আরও চাঙ্গা হবে। একজন অভিজ্ঞ শেয়ার পণ্ডিতের মতে, সূচকে বড় পতন আসছে বলে যাঁরা বসে, তাঁদের হতাশ হতে হবে। কারণ— এক দিকে ভাল বর্ষা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে, অন্য দিকে উজ্জীবিত করবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে। সুদ কমতে শুরু করলে শিল্প ফের সুদিন দেখবে। কৃষি এবং শিল্প দুই-ই ভাল হলে, তার প্রভাব দেখা যাবে দেশের জাতীয় উৎপাদনে। তখন ধীরে ধীরে ভরবে বাজারের ক্ষত। আরও চড়বে সূচক। আরও লগ্নি টানবে ফান্ড।

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

investments Share Market Indian Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy