পরিকল্পনার পরে বছর গড়িয়ে গিয়েছে। এখনও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে জল সরবরাহের জন্য বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে দরপত্র চাইতে পারেনি হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। অভিযোগ, অর্থ দফতরের গড়িমসির কারণেই গত ছ’মাসের বেশি একচুলও এগোয়নি প্রকল্প।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই পেশাদার সংস্থার সহায়তায় প্রকল্পের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা তৈরি হয়ে যায়। উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে। এর পরে দরপত্রও তৈরি হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, দফায় দফায় প্রশ্ন তোলে অর্থ দফতর। প্রত্যেক বার দরপত্র সংশোধন করে নগরোন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে অর্থ দফতরে পাঠানো হয়। এবং প্রতিবারই অর্থ দফতরের কাছ থেকে ফাইল ফেরত পেতে কমপক্ষে দেড় মাস লেগে যায়।
আর, এই লালফিতের ফাঁসে আটকে রয়েছে মোটা অঙ্কের সরকারি আয়ের সম্ভাবনাও। পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, অর্থ দফতরের সবুজ সঙ্কেত পেলেই কাজ শুরু করে দিতে পারে পর্ষদ। তিনি বলেন, ‘‘শিল্প, আবাসন ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক পরিকাঠামোর জন্য জলের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু দরপত্র চাইতে অহেতুক দেরি হচ্ছে।’’ অর্থ দফতরের তরফে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সরকারি কোষাগারের হাল ফেরানো— এই জোড়া সুবিধার দিকে নজর রেখে ফের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে জল সরবরাহের পথে হাঁটতে চাইছে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। ২০০৮-এ তত্কালীন বাম সরকারের আমলে তৈরি হয় আলাদা সংস্থা হলদিয়া ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। সরকারি-বেসরকারি গাঁটছড়া বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে তৈরি এই সংস্থার শরিক ছিল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ, জামশেদপুর ইউটিলিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস কোম্পানি (জাসকো) ও মালয়েশিয়ার সংস্থা রানহিল ইউটিলিটিজ। কিন্তু লাভজনক না-হওয়ায় এই গাঁটছড়া মুখ থুবড়ে পড়ে। জলের যে-চাহিদার হিসেব কষে ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছিল বেসরকারি কনসোর্টিয়াম, তা বাস্তবে ছিল অনেক কম।
ফলে প্রকল্পে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয় হলদিয়ার এই শিল্প পরিস্থিতি। বিশ্ব জুড়ে মন্দা থেকে শুরু করে পরিবেশগত কারণে নতুন শিল্প গঠনে কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা। সঙ্গে ছিল সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কালো ছায়া। সব মিলিয়ে থমকে গিয়েছিল বিনিয়োগের ধারা।
তেল-গ্যাস খনন, শোধনাগার, বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র, সিমেন্ট, কাগজ, বন্দর, বিমানবন্দর, বড় সড়ক থেকে শুরু করে শিল্প তালুক, বায়োটেক পার্ক, চর্ম প্রক্রিয়াকরণ-সহ যাবতীয় ভারী শিল্প পরিবেশগত নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। ফলে তৈরি হয়নি নতুন শিল্প, বাড়েনি জলের চাহিদাও। স্রেফ চাহিদার অভাবে নতুন প্লান্ট গড়েও তা চালু করতে পারেনি জাসকো। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী দু’টি প্লান্ট বাবদই পর্ষদকে টাকা দিতে হচ্ছিল।
লোকসানের বোঝা বাড়িয়ে পরিষেবা চালু রাখতে রাজি হয়নি বেসরকারি সংস্থা দু’টি। ফলে গোটা দায় পর্ষদের ঘাড়ে চেপে বসে। ২০১৩-র সেপ্টেম্বরে উঠে যায় নতুন শিল্প গঠনে পরিবেশ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা। এর পরে ফের বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে জল সরবরাহ পরিকল্পনা করে হলদিয়া পর্ষদ। তবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য আপাতত অর্থ দফতরের অনুমোদনের দিকে তাকিয়ে পর্ষদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy