দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি সরে গেলেও, সংস্থাটির রোজকার কাজে রাজ্য সব রকম সহযোগিতা করছে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎসচিব পঙ্কজ আগরওয়াল। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ডিভিসি-কে এখনই কোম্পানি আইন অনুযায়ী কর্পোরেট সংস্থায় পরিণত করার পরিকল্পনা নেই।
গত সেপ্টেম্বরে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া নিয়ে ডিভিসি-র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখান থেকে রাজ্যের প্রতিনিধি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। সংস্থার পর্ষদ থেকে ইস্তফা দেন রাজ্যের বিদ্যুৎসচিব শান্তনু বসু। দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি থেকে রাজ্যের সেচ দফতরের প্রধান ইঞ্জিনিয়ারও ইস্তফা দেন। মমতার অভিযোগ ছিল, ডিভিসি-র জলাধার থেকে জল ছেড়ে পরিকল্পিত ভাবে বাংলায় ‘ম্যান মেড বন্যা’ করা হয়েছিল। যদিও কেন্দ্রের দাবি ছিল, জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি ছিলেন। জল ছাড়ার আগে রাজ্য প্রশাসনকে নিয়ম মেনে সে কথা জানানোও হয়েছিল।
কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকারের হাতে ১৯৪৮ সালে তৈরি ডিভিসি-র যৌথ মালিকানা রয়েছে। ফলে শান্তনু ইস্তফা দেওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, ডিভিসি-র পরিচালন পর্ষদ থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎসচিব কী ভাবে ইস্তফা দিতে পারেন? সে ক্ষেত্রে সংস্থার কাজকর্মই বা কী ভাবে চলবে? পঙ্কজ অবশ্য আজ বলেন, ‘‘ডিভিসি-র রোজকার কাজে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে সব সাহায্য পাচ্ছি।’’ সূত্রের খবর, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগও রয়েছে।
সচিব এ দিন একই সঙ্গে জানান, ‘‘ডিভিসি-কে কোম্পানি আইনে কর্পোরেট সংস্থায় পরিণত করারও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের।’’ জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরই ডিভিসি-কে কর্পোরেট সংস্থায় পরিণত করার কথা বলেছিলেন। সে সময় সংস্থাটিকে ভেঙে তিনটি আলাদা সংস্থা তৈরির উদ্যোগও হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে এবং বাজারে সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তোলার পরিকল্পনা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ডান-বাম সমস্ত কর্মী সংগঠন আন্দোলন শুরু করেছিল। ডিভিসির বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
আজ পঙ্কজ বলেন, ‘‘ডিভিসি আইনত নিগম সংস্থা। তার বিভিন্ন শাখা কাজ করছে। নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য স্পেশাল পার্পাস ভেহিক্লও তৈরি হয়েছে। আলাদা ভাবে কোম্পানি আইনে কর্পোরেট সংস্থায় পরিণত করার পরিকল্পনা নেই।’’ সরকারি সূত্রের দাবি, কোনও দিনই ডিভিসি-র বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা ছিল না। তাদের কর্পোরেটে পরিণত করা হলেও তার যৌথ মালিকানা কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের হাতেই থাকত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)