লাগাতার পড়ে চলেছে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম। —ফাইল চিত্র।
বহু দিন ধরেই লাগাতার পড়ে চলেছে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম। তবে সেই পতন হতে দেখা গিয়েছে অল্প অল্প করে। কিন্তু শুক্রবার কার্যত ধস নামল ভারতীয় মুদ্রায়। সংশ্লিষ্ট মহলকে চমকে দিয়ে দিনের এক সময় ডলার উঠে গিয়েছিল ৫৩ পয়সা। নজিরবিহীন ভাবে পৌঁছেছিল ৮৫.৮০ টাকায়। পরে অবশ্য কিছুটা নেমে আসে। দিনের শেষে আমেরিকার মুদ্রা থিতু হয় ৮৫.৪৮ টাকায়। উত্থান ২১ পয়সা। তবে এটাও টাকার সর্বনিম্ন হওয়ার নতুন নজির। এর পরেই সংশ্লিষ্ট মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, আশঙ্কা ছিল ২০২৪ শেষ হবে ডলারের ৮৫ টাকা দামে। কিন্তু এমন চললে ২০২৫ শুরু হওয়ার আগেই তা ৮৬ টাকা ছুঁয়ে ফেলত পারে। নতুন বছরে কোথায় নামবে টাকা, সেটাই এখন প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা কারণে বিশ্ব জুড়ে ডলার ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। তার চাপে পড়েই মূলত তলিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় টাকা। সরকারি মহলের বার্তা, উন্নয়নশীল সব দেশের মুদ্রাই দুর্বল হচ্ছে। টাকার অবস্থা বরং তুলনায় ভাল।
আমেরিকার অর্থনীতিই ডলারের দাম বৃদ্ধির পিছনে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, দাবি একাংশের। তাঁরা মনে করছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আসনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই টাকার দামের পতনের গতি বেড়েছে। বন্ধন ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ সিদ্ধার্থ সান্যাল-সহ একাধিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বিশ্ব এটা ধরে নিয়েছে যে, আমেরিকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ট্রাম্প যে কোনও পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করবেন না। এতে অন্য দেশের কী ক্ষতি হল, ভ্রূক্ষেপ করবেন না তা নিয়ে। এমনকি আমদানি করা পণ্যের উপর মাত্রাছাড়া শুল্ক বসাতে পারেন তিনি, যেমনটা হুমকি দিয়েছেন। আর সেটা হলে আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধির মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা আঁচ করেই সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক সতর্ক। আর সুদ কমাতে চাইছে না। তারা আগে বলেছিল ২০২৫-এ ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানো হবে। কিন্তু এখন ৫০ বেসিস পয়েন্টের বেশি কমাবে না বলেই ইঙ্গিত। পাশাপাশি আমেরিকায় বন্ডের আয় (ইল্ড) বাড়তে শুরু করেছে। এই সব অনিশ্চয়তার জেরে লগ্নির ক্ষেত্র হিসাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে ডলারে লগ্নিই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ফলে বাড়ছে তার দামও।
এ দিকে চিনের শিল্পকে চাঙ্গা করতে ত্রাণ প্রকল্প চালু করেছে। সেখানে বর্তমানে শেয়ারের দামও তুলনায় কম। তাই ভারত-সহ উন্নয়নশীল দেশগুলির শেয়ার বাজার থেকে পুঁজি তুলে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি চিনে ঢালছে। এর ফলে ওই সব দেশে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। যা ডলারের দাম বাড়াচ্ছে। ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত বলেন, “তা ছাড়া সাধারণত বছরের শেষে আমদানিকৃত পণ্যের বকেয়া টাকা মেটানোর জন্য ডলারের চাহিদা বেড়ে থাকে। এ দিন ডলারের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা বড় কারণ বলে আমার ধারণা।’’
ডলারের দাম বাড়লে রফতানিকারীদের মুখে হাসি ফোটে। তবে রফতানিকারী সংস্থা নিফা এক্সপোর্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাকেশ শাহ বলেন, “একটা স্তর পর্যন্ত ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে রফতানিকারীদের টাকায় আয় বাড়ে। কারণ আমরা রফতানি পণ্যের দাম হিসাবে যে ডলার পাই সেটা ভারতে বিক্রি করি। কিন্তু ডলারের দাম বেশি বেড়ে গেলে আমাদের ক্রেতারাও রফতানি পণ্যের দাম সংশোধন করে।’’ তা ছাড়া তেলের আমদানি খরচ বাড়ার জন্যও তাঁরা উদ্বিগ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy