প্রতীকী ছবি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে লাগাতার বেড়ে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব বাজারে ব্যারেল পিছু ১০০ ডলারের উপরে ঘোরাফেরা করেছে অশোধিত তেল (ব্রেন্ট ক্রুড)। যা দেশের জ্বালানিকেও মাত্রাছাড়া করে পণ্যের দামকে ঠেলে তুলেছে। এ বার সেই ব্রেন্টই নামল ১০০ ডলারের নীচে। ফলে প্রশ্ন উঠল, এর প্রতিফলন দেশে দেখা যাবে তো? নাকি বরাবরের মতো দাম কমার সুরাহা থেকে বঞ্চিতই হবেন সাধারণ মানুষ?
সোমবার ব্রেন্ট ছিল ব্যারেল পিছু ৯৮.২২ ডলার। আর এক অশোধিত তেল ডব্লিউটিআই ৯৩.৬৩ ডলার। রাশিয়া থেকেও সস্তায় কিছু তেল আমদানি করছে ভারত। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা সূত্রের যুক্তি, বিশ্ব বাজারের দামের প্রভাব ভারতে পড়ে সপ্তাহ দুয়েক পর। ডলার-টাকার বিনিময় মূল্য এবং আন্তর্জাতিক পেট্রল-ডিজ়েলের দামও ধরা হয় হিসাবে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অশোধিত তেল এতটা নীচে নামায় চলতি মাসেই অন্তত কিছুটা কমা উচিত পেট্রল-ডিজ়েল।
তবে অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা মনে করাচ্ছে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যে ভাবে দেশে চড়তে শুরু করে জ্বালানি, কমে যাওয়ার প্রতিফলন সে ভাবে দেখা যায় না। উদাহরণ হিসেবে আঙুল গত নভেম্বরের দিকে। কেন্দ্র যে সময় পেট্রলে ৫ টাকা এবং ডিজ়েলে ১০ টাকা উৎপাদন শুল্ক কমিয়েছিল। তাতে কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে পেট্রল কমে হয় ১০৪.৬৭ টাকা। ডিজ়েল ৮৯.৭৯ টাকা। তার পরে ৪ নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ১৩৭ দিন তা স্থির ছিল। অথচ ওই নভেম্বরেই এক সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড নেমেছিল ৮০ ডলারের কাছে। পরে ৭৮ ডলারে নামে। ১ ডিসেম্বর আরও নীচে, ৬৮.৯৪ ডলার। ডব্লিউটিআই-ও হুড়মুড়িয়ে পড়ছিল। কিন্তু ভারতে দাম আর কমেনি। অথচ আমদানি খরচ বৃদ্ধির যুক্তিতে দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট মিটতেই। পেট্রল পৌঁছয় নজিরবিহীন উচ্চতায়। কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে তার লিটার এখন ১১৫.১২ টাকা। ডিজ়েল রাজ্যের কোথাও ফের ১০০ টাকা পেরিয়েছে, কোথাও তার মুখে। কলকাতায় ৯৯.৮৩ টাকা। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, অশোধিত তেলের দর নামার সুবিধা দেশে না পৌঁছনোর রেওয়াজ কি এই চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারেও বহাল থাকবে?
ইতিধ্যেই জ্বালানির উপরে চড়া কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক আরও কমানোর দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের যুক্তি, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মনমোহন সিংহের জমানায় ব্রেন্ট ক্রুড ১১০ ডলার ছাড়িয়েছিল। কিন্তু পেট্রল-ডিজ়েল ১০০ টাকা হয়নি। সুতরাং শিল্প এবং আমজনতার স্বার্থে এ বার অন্তত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির দাম কমানো উচিত।
মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ আটকাতে পারে, হুঁশিয়ারি উপদেষ্টা সংস্থাগুলির। প্রয়োজনের ৮৫% তেলই আমদানি করে বলে ভারতকে নিয়ে উদ্বেগ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম কমালে বৃদ্ধির আঁচও গায়ে লাগে কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy