আমেরিকার বাজারে বিক্রির জন্য ঢোকা সমস্ত গাড়ি এবং তার যন্ত্রাংশে এপ্রিল থেকে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক চাপার কথা ঘোষণা হতেই উদ্বেগ ছড়াল দেশীয় শিল্পমহলে। ভারতের গাড়ি ও যন্ত্রাংশ সংস্থাগুলি কতটা মার খাবে, শুরু হল তা খতিয়ে দেখার কাজ। বৃহস্পতিবার নামল গাড়ি এবং তার যন্ত্রাংশ নির্মাতা সংস্থাগুলির শেয়ার দর। এই দুই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সিয়াম, ফাডা কিংবা অ্যাকমার মতো সংগঠনগুলি অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। জানিয়েছে, সম্ভাব্য প্রভাব খতিয়ে দেখে কথা বলবে তারা। তবে যন্ত্রাংশ সংস্থা জাতো ডায়নামিক্সের ডিরেক্টর রবি ভাটিয়ার দাবি, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জের পুরোপুরি এড়ানো না গেলেও, বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
বাণিজ্য সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা জিটিআরআই-ও জানিয়েছে, এ দেশের গাড়ি তৈরির সংস্থাগুলির উপর আমেরিকার বসানো চড়া আমদানি শুল্কের প্রভাব হবে খুব কম। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, ২০২৪-এ রফতানির হিসাব দেখলেই উদ্বেগ কমবে। গত বার ভারত থেকে আমেরিকায় মাত্র ৯০ লক্ষ ডলারের যাত্রিবাহী গাড়ি রফতানি হয়েছে। যা মোট যাত্রিবাহী গাড়ি রফতানির মাত্র ০.১৩%। এ ক্ষেত্রে মোট অঙ্ক প্রায় ৭০০ কোটি ডলার। পাশাপাশি, দেশের মোট ট্রাক রফতানির ০.৯% গিয়েছে সে দেশে। যার মোট মূল্য ১.২৫ কোটি ডলারের মতো। উল্লেখ্য, ভারত থেকে আমেরিকায় মূলত নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার যাত্রিবাহী গাড়ি, ট্রাকের মতো বড় গাড়ি এবং নির্দিষ্ট ক্ষমতার (৬৫০ সিসির বেশি) মোটরবাইক রফতানি হয়।
তবে শ্রীবাস্তবের মতে, আমেরিকার শুল্কে কিছুটা ভুগতে পারে গাড়ির চেসিস এবং ইঞ্জিনের রফতানি ব্যবসা। এগুলির মোট রফতানির প্রায় ১১.৫% ভারত থেকে আমেরিকায় যায়। মূল্য প্রায় ২.৮২ কোটি ডলার। অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে তা ২৯% বা প্রায় ২২ লক্ষ ডলার। তবে সামগ্রিক ভাবে জিটিআরআইয়ের দাবি, গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রেও আমেরিকায় রফতানির ক্ষেত্রে ভারত অনেক পিছিয়ে। মেক্সিকো বা চিনের ধারেকাছে নেই।
এই আশ্বাসের মধ্যেও প্রমাদ গুনছে টাটা মোটরস। কারণ তারাই আমেরিকায় সর্বাধিক যাত্রিবাহী গাড়ি বিক্রি করে। তাদের ল্যান্ড রোভারের প্রায় ২২% সে দেশে বিক্রি হয়েছে গত অর্থবর্ষে। সংখ্যার হিসেবে তা ৪ লক্ষের কিছু বেশি। তাদের ব্যবসায় আমেরিকার শুল্ক ভাল রকম ধাক্কা দেবে ধরে নিয়েই এ দিন ৫ শতাংশের বেশি পড়েছে সংস্থাটির শেয়ার দর। আইশার মোটরসের রয়্যাল এনফিল্ডের ৬৫০সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন বাইকও আমেরিকায় যায়। শুল্কের জেরে সেগুলির দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। মাদারসন কিংবা ভারত ফোর্জের মতো যন্ত্রাংশ নির্মাতারা জানিয়েছে, কিছুটা ধাক্কা লাগবে। তাই বিকল্প খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতের পাশাপাশি মাদারসনের কারখানা রয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। এই কারণে প্রভাব সীমিত হতে পারে বলেও আশা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)