বীরভূমে মহম্মদবাজার ব্লকের ডেউচা পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকায় ‘জট’ কেটেছে। শীঘ্রই ফের খনির কাজ শুরু হবে, জানিয়েছেন জেলাশাসক। মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদা মৌজার তিন জায়গায় কাজ বন্ধ করিয়েছিলেন প্রকল্প এলাকা ঘেঁষা জনজাতি প্রধান সাগরবান্দি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। অবস্থা সামলাতে আলোচনার পথ নেয় জেলা প্রশাসন। সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল এলাকার মাঝি হারাম (মোড়ল) এবং খনির পক্ষপাতী স্থানীয় জনজাতিদেরও।
বৃহস্পতিবার সকালেই আন্দোলন তোলার কথা ছিল। প্রশাসনের দাবি, ফের কেউ ‘ভুল’ বোঝানোয় তা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন সাগরবান্দির মানুষজন। বিকেলে তাই সব পক্ষকে নিয়ে আবার বৈঠক করেন জেলাশাসক বিধান রায় ও পুলিশ সুপার আমনদীপ। বিধান বলেন, ‘‘বাইরের কিছু মানুষ ওঁদের ভুল বোঝাচ্ছিলেন, বিভ্রান্ত করছিলেন। নিজেরা তা বুঝতে পেরে আলোচনা করে আন্দোলন তুলে নিয়েছেন। কাজ ফের শুরু হবে।’’
বুধবার ডেউচায় তথ্যানুসন্ধানে যেতে চেয়ে বাধার মুখে পড়েন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাংতা মুন্সীর দাবি, প্রশাসনের মদতে তাঁদের দলকে কার্যত জবরদস্তি ঘেরাও করে রাখেন শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা। তাঁরা জেলাশাসকের কাছে প্রতিবাদপত্র জমা দিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন। পুলিশ নীরব দর্শক ছিল। অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘নেট বন্ধ করা এবং অন্যান্য গতিবিধিতে স্পষ্ট, ওখানে (ডেউচায়) একটা কিছু হচ্ছে এবং তা লুকানোর চেষ্টা চলছে। জনজাতিরা অনিচ্ছুক, জমি দিতে চান না। জোর করে উৎখাত করে জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের মন্তব্য, ‘‘যা বলার জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলবেন।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স-এ লেখেন, ‘‘স্থানীয় আদিবাসী মা-বোন ভাইদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে রাজ্য সরকারের রেজিস্টার্ড গুন্ডা (পুলিশ) বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারে প্রশাসন অত্যাচার শুরু করেছে। এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাইরে থেকে এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, জল, জঙ্গল, জমির অধিকারের এই লড়াইয়ে বিরোধী দলনেতা হিসেবে তিনি পাশে থাকবেন। ডেউচা পাঁচামিকে মুখ্যমন্ত্রী ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ বানাতে চাইছেন, অভিযোগ সিপিএমের। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী ডেউচা নিয়ে হঠাৎ বড় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। কার্যক্ষেত্রে পুলিশ এবং তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী নামিয়ে পাঁচামির মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন!’’
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘ডেউচা পাঁচামি প্রকল্পে রাজ্যের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। সেই সম্ভাবনাকে রাজ্য সরকার যখন বাস্তবায়িত করছে তখন বাংলা বিরোধী কিছু শক্তি হাত মিলিয়ে বাধা দিতে চাইছে। তবে তারা ব্যর্থ হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)