—প্রতীকী ছবি।
খাদ্যপণ্য-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছুর দাম বেড়েছে দেশে।
জীবনযাপনের ন্যূনতম খরচ সামলাতে গিয়েই নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। এই পরিস্থিতিতে ফের টিভি দেখার খরচ বেড়ে গিয়ে খাঁড়ার ঘায়ের মতো আমজনতার ঘাড়ে কোপ বসাবে কি না, আচমকাই উঠেছে সেই প্রশ্ন। কারণ, চড়া মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি তুলে ধরে আবার মাসুল বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে চ্যানেল সংস্থাগুলি। তা বাস্তবায়িত হলে কেবল টিভিতে পছন্দের বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে আরও বেশি টাকা দিতে হবে গ্রাহকদের। যদিও এই প্রস্তাব মানতে রাজি নয় স্থানীয় কেব্ল পরিষেবা প্রদানকারীরা। গত বছর তাদের অনেকের আপত্তি থাকলেও, কিছু চ্যানেলের দাম এক দফা বেড়েছে। এ বার আরও বাড়লে গ্রাহক হারাতে হবে বলে আশঙ্কা করছে তারা। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বছর খানেক আগেও বিভিন্ন পে-চ্যানেলের (যেগুলি দাম দিয়ে দেখতে হয়) মাসুল বাড়ানো নিয়ে চ্যানেল সংস্থা, মাল্টি-সার্ভিস অপারেটর (এমএসও) এবং স্থানীয় কেব্ল অপারেটরদের (এলসিও) একাংশের মধ্যে বিরোধ বেঁধেছিল। যার ধাক্কায় কিছু দিন থমকে যায় বেশ কিছু জনপ্রিয় চ্যানেলের সম্প্রচার। সেই সময় টিভি দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন পরিষেবা গ্রহণকারী বহু মানুষ। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, ফের কি সেই আশঙ্কা দানা বাঁধছে?
দুশ্চিন্তা
■ বাড়তে পারে মূল্যবৃদ্ধিতে নাকাল সাধারণ মানুষের বিনোদনের খরচও।
■ আগামী মাস থেকে মাসুল বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে বিভিন্ন চ্যানেল সংস্থা।
■ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে টিভি দেখতে বেশি টাকা দিতে হতে পারে।
■ ব্যবসা হারানোর আশঙ্কায় এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে স্থানীয় কেব্ল অপারেটরদের একাংশ।
■ মাসুল বৃদ্ধির জন্য চাপ দেওয়া হলে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে একাংশ।
■ বিরোধের জেরে আগামী দিনে কেব্ল পরিষেবায় ধাক্কা লাগবে কি না, সেই সন্দেহও মাথাচাড়া দিচ্ছে।
সূত্রের খবর, সব কিছুর দাম বৃদ্ধির যুক্তিতেই চ্যানেল সংস্থ্যগুলি পরের মাস থেকে কিছু চ্যানেলের মাসুল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এখনও তাদের সঙ্গে এমএসও-গুলির এই নিয়ে চুক্তি হয়নি। আলোচনা রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে। এমএসও ও স্থানীয় কেব্ল সংস্থাগুলির একাংশ এ বারও প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, টিভির খরচ আরও বাড়লে পরিষেবা ছাড়তে বাধ্য হতে পারেন মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল অনেকে। তখন ব্যবসা হারিয়ে বিপাকে পড়বে তারাও। গত বছর এই ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক ট্রাইয়ের নতুন মাসুল নীতি কার্যকর করার পরে অধিকাংশ চ্যানেল সংস্থা তাদের জনপ্রিয় পে-চ্যানেলের মাসুল বাড়ায়। সেই মতো নতুন ভাবে চুক্তি করতে বলে এমএসও-গুলিকে। কিছু এমএসও সেই পথে হাঁটলেও, অনেকে
গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার যুক্তি দেখিয়ে চুক্তি না করায় বেশ কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় স্টার, জি, সোনির মতো সংস্থাগুলির একাধিক জনপ্রিয় পে-চ্যানেল। বিষয়টি আদালতে গড়ায়। পরে অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটে। তবে কিছু চ্যানেলের দাম শেষ পর্যন্ত বাড়ে। যে কারণে নয়া মাসুল নীতি গ্রাহকের খরচ কমাবে, ট্রাইয়ের এই দাবি মেলেনি বহু ক্ষেত্রেই। এ রাজ্যে এমএসও এবং কেব্ল সংস্থাগুলির একাংশের দাবি, এ বারের প্রস্তাবে পে-চ্যানেল ও একাধিক চ্যানেলকে নিয়ে গড়া প্যাকেজ বা বোকের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা। তবে ট্রাইয়ের নিয়ম, কোনও প্যাকেজের আওতায় যে সব চ্যানেল থাকবে, আলাদা করে সেগুলি কেউ পে চ্যানেল হিসেবে নিলে, কখনওই তার সর্বাধিক দাম ১৯ টাকার বেশি হবে না। সংশ্লিষ্ট মহলের একাশের আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে যেগুলির দাম তার চেয়ে কম রয়েছে, সেগুলিরও দাম কিছুটা বাড়িয়ে ট্রাই নির্ধারিত সর্বোচ্চ দামের মধ্যে রাখা হতে পারে। কেব্ল সংস্থাগুলির দাবি, গ্রাহকদের বেশির ভাগই আলাদা করে (আলা-কাট) চ্যানেল নির্বাচন করেন না। তাঁরা প্যাকেজ বা বোকে হিসেবে
একাধিক চ্যানেল নিতে আগ্রহী হন। তবে রাজ্যের অন্যতম এমএসও জিটিপিএল-কেসিবিপিএলের কর্তা বিজয় আগরওয়াল, অল বেঙ্গল কেবল টিভি অ্যান্ড ব্রডব্যান্ড অপারেটর্স ইউনাইটেড ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক চন্দ্রনাথ পাইন, বিশ্ব বাংলা কেব্ল টিভি অপারেটর্স ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক বিদ্যুৎ দেব অধিকারী প্রমুখ জানান, এখনও চুক্তি হয়নি। কলকাতায় কেবল টিভি মেলা নিয়ে সকলে ব্যস্ত। সেটি শেষ হলে বৈঠকে বসবেন। শেষ পর্যন্ত সত্যিই মাসুল বাড়লে আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছে দুই সংগঠন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy