—প্রতীকী চিত্র।
গত সপ্তাহটা ছিল নতুন ইসুর, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের লেনদেনের জন্য সদ্য খোলা নতুন শেয়ারের। আইপিও (বাজারে প্রথম বার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তোলা)-র হাট বসেছিল ২০ থেকে ২৪ নভেম্বর। একই সপ্তাহে একটি-দু’টি নয়, বাজারে এসেছিল পাঁচ-পাঁচটি নামী ইসু। প্রত্যেকটিতে লগ্নিকারীদের এতটাই আগ্রহ ছিল যে, একসঙ্গে এতগুলি সংস্থার আইপিও খোলা সত্ত্বেও কাউকে হা-হুতাশ করতে হয়নি। বরং সবক’টি উতরে গিয়েছে অত্যন্ত ভাল ভাবে। এগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি নজর কেড়েছে টাটা টেকনোলজিস-এর শেয়ার। ২০০৪ সালে টিসিএসের আইপিও-র ১৯ বছর পরে টাটা টেকনোলজিসের হাতে ধরে ফের নতুন ইসুর বাজারে পা রাখল টাটা গোষ্ঠী।
টাটাদের সংস্থার শেয়ার নিয়ে উদ্দীপনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। খোলার মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে তহবিল তোলার লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় আবেদন জমা পড়ে। শুক্রবার ইসুটি বন্ধ হলে দেখা যায়, এই আইপিও-তে জমা পড়েছে মোট ৭৩.৬ লক্ষ আবেদন, যা নতুন ইসুর জগতে একটি নতুন নজির। এর আগে এলআইসি বা জীবন বিমা নিগম প্রথম বার তাদের শেয়ার বিক্রির সময়ে ৭৩.৪ লক্ষ আবেদন পেয়েছিল। তবে সেটি ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। বেসরকারি টাটা টেকনোজিসের ৩০৪৩ কোটি টাকার ইসুতে শেয়ার কেনার আবেদন জমার সংখ্যা তার ৬৯.৪ গুণ। সংস্থার প্রতিটি শেয়ারের দাম রাখা হয়েছে ৪৭৫ টাকা থেকে ৫০০ টাকা।
ভাল সাফল্য পেয়েছে অন্য চারটি ইসুও। ২৮.৬ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়ান রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভলপমেন্ট এজেন্সির ২১৫১ কোটি টাকার আইপিও-তে। শেয়ার কেনার জন্য আবেদনের এই সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় ৩৮.৮ গুণ। একই সপ্তাহে বাজারে আসা ফ্লেয়ার রাইটিং, গান্ধার অয়েল এবং ফেড ব্যাঙ্ক ফিনান্স ইসুতে আবেদন জমা পড়ে যথাক্রমে প্রয়োজনের তুলনায় ৪৬.৭, ৬৪.১ এবং ২.২ গুণ। সবক’টি ইসু মিলিয়ে টাকার অঙ্কে মোট আবেদনের পরিমাণ ২.৬ লক্ষ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ভাল শেয়ারের জন্যে লগ্নিকারীদের কতটা খিদে রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হবে সবক’টি সংস্থা। একত্রে বাজার থেকে তুলবে ৭৩৮০ কোটি টাকার মূলধন। আশা করা যায়, নথিবদ্ধ হওয়ার পরে এই সব শেয়ারের মোট দাম (মার্কেট ক্যাপিটালাইজ়েশন) অনেকটাই বেড়ে যাবে। ফলে বাড়বে গোটা বাজারের মোট শেয়ার মূল্য।
বাজারে যত নতুন ভাল শেয়ার নথিবদ্ধ হবে, তত শ্রীবৃদ্ধি হবে তার। তবে আইপিও-তে ভাল সাড়া পেয়ে প্রচুর তহবিল তোলা শেয়ারের দর ক’দিন বাদে বাজারে নথিবদ্ধ হওয়ার পরে নেমে গিয়েছে, এমন উদাহরণও রয়েছে। নতুন ইসুতে এ ভাবে হাত পুড়লে বহু লগ্নিকারী শেয়ারের লগ্নি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। যেমনটা হয়েছিল এলআইসি এবং পেটিএম-এর শেয়ারের ক্ষেত্রে। এই দু’টি আইপিও-তে বিপুল সাড়া মিলেছিল। কিন্তু দু’টিই হতাশ করে তাদের প্রাথমিক লগ্নিকারীদের। এলআইসি এবং পেটিএমের শেয়ার প্রথম বার বাজারে বিক্রির জন্য আসার পরে দেড়-দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও সেগুলির দাম ইসুর দামের তুলনায় অনেকখানি নীচে। তবে সম্প্রতি কিছুটা উর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ভাল রকম বেড়েছে তলানিতে পড়ে থাকা সরকারি বিমা সংস্থাগুলির শেয়ার দর। শুক্রবার এলআইসি বেড়েছে ৯.৭১%। নিউ ইন্ডিয়া এবং জিআইসি-র শেয়ার দর বেড়েছে যথাক্রমে ২০% এবং ১৫.৪৫%।
বাজারে নতুন ইসু বা প্রথম বার কোনও সংস্থার শেয়ার বিক্রির জন্য আসা অর্থনীতির পক্ষে ভাল লক্ষণ। নতুন ইসুর অর্থ আসলে নতুন লগ্নি এবং তার হাত ধরে নতুন শিল্প সম্ভাবনা। শিল্প হলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ পথে বাড়ে কর্মসংস্থান। বাড়ে সরকারের কর বাবদ আয়। ভাল নতুন ইসুর এমন বিপুল চাহিদা শিল্প এবং শেয়ার বাজারের প্রতি লগ্নিকারীদের আস্থারই ইঙ্গিত দেয়। এই ভাবে বাজারে যত ছোট লগ্নিকারী আসবে, ততই তার মঙ্গল। চলতি সপ্তাহে নথিবদ্ধ হলে এবং নতুন শেয়ারগুলির ভাল লাভের সন্ধান দিলে শেয়ারগুলির প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও বাড়বে সন্দেহ নেই। তাই এখন সকলের নজর কী দামে কোন শেয়ার খোলে তার উপরে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy