বম্বে হাউসে রতন টাটা। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।
সাইরাস মিস্ত্রি তাঁর অপসারণ নিয়ে মুখ খুলে রতন টাটাকে কাঠগড়ায় তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাব দিল টাটা গোষ্ঠী।
টাটা সন্সের পরিচালন পর্ষদের সদস্যদের পাঠানো গোপন ই-মেল কেন সংবাদমাধ্যমের হাতে গেল, এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি টাটাদের বক্তব্য, সাইরাস যে সব অভিযোগ করেছেন, সে সবই ভিত্তিহীন। তাদের প্রতি বিদ্বেষ থেকেই ওই সব অভিযোগ করা হয়েছে। যার লক্ষ্য, সার্বিক ভাবে টাটা গোষ্ঠী এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে কয়েক জন ব্যক্তির ভাবমূর্তিতে আঘাত করা। প্রয়োজনে উপযুক্ত প্রমাণ-সহ জবাব দেওয়া হবে বলেও বৃহস্পতিবার টাটা সন্সের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
গত সোমবার আচমকাই টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাইরাসকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় চার মাসের জন্য অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে ফেরেন রতন টাটা। বুধবার প্রকাশ্যে আসে পরিচালন পর্ষদকে পাঠানো সাইরাসের চিঠি। তাতে তিনি কার্যত নাম করেই দুষেছেন টাটাকে। সাইরাসের অভিযোগ, চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর কাজের স্বাধীনতা ছিল না। আড়াল থেকে ছড়ি ঘোরাতেন টাটা। তাঁর আমলে নেওয়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত— যেমন ন্যানো প্রকল্প, ব্রিটেনে ইস্পাত কারখানা কেনা ইত্যাদি নিয়েও চিঠিতে প্রশ্ন তোলেন সাইরাস। অভিযোগ করেন, লোকসান হলেও এই সব প্রকল্প একজন ব্যক্তির আবেগের কারণে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর তা নিয়েই তাঁর সঙ্গে যাবতীয় গোলমাল। টাটারা যে মূল্যবোধ নিয়ে ব্যবসা করেন বলে দাবি করেন, তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাইরাস।
এ দিন পাল্টা তোপ দাগার সময়ে খানিকটা সেই মূল্যবোধের যুক্তিতেই নাম না-করে মিস্ত্রির সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে টাটা সন্স। তাদের দাবি, পরিচালন পর্ষদ কর্তাদের কাছে পাঠানো গোপন চিঠি আমজনতার দরবারে অশোভন ভাবে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
পাশাপাশি, গত প্রায় এক দশক ধরে টাটাদের নেওয়া ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত থেকে নিজের যে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা সাইরাস করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। টাটা সন্স বলেছে, সাইরাস মিস্ত্রি ২০০৬ সাল থেকে পরিচালন পর্ষদে রয়েছেন। ২০১১-র নভেম্বরে তিনি ডেপুটি চেয়ারম্যান হন। পরের বছর চেয়ারম্যান। ফলে টাটা গোষ্ঠী-সহ তাদের বিভিন্ন শাখা সংস্থার পরিচালনার কৌশল, কৃষ্টি, মূল্যবোধ সম্পর্কে তিনি পুরোমাত্রায় অবগত। সংস্থা পরিচালনায় নিয়ম ভাঙার যে-সব অভিযোগ এখন তিনি তুলছেন, সে সব সিদ্ধান্ত তিনিই এক সময়ে সমর্থন করেছেন।
টাটা সন্সের দাবি, তাদের মূল্যবোধ শুধু পর্ষদ কক্ষেই আবদ্ধ নয়। বরং ৬ লক্ষ কর্মীর শক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আজকের টাটা গোষ্ঠী। মিস্ত্রি সেই কর্মীদের কাছেও টাটা গোষ্ঠীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন, যা ক্ষমার অযোগ্য।
মিস্ত্রির দাবি ছিল, তিনি ছিলেন ‘নাম-কা-ওয়াস্তে’ চেয়ারম্যান। এ দিন সেই অভিযোগও উড়িয়ে টাটা সন্স-এর দাবি, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ, সব কিছুই সামলানোর জন্য তাঁকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল পর্ষদ।
তবে বোর্ড ও মিস্ত্রির মধ্যে দূরত্ব যে বাড়ছিল, তা এ দিন টাটা সন্স-এর বিবৃতিতেও স্পষ্ট। তাদের দাবি, পর্ষদের সদস্যরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে নানা কারণে মিস্ত্রি তাঁদের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলছিলেন। তাঁরা ব্যবসার কিছু সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বারবার প্রশ্ন ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মিস্ত্রি ও পর্ষদের মধ্যে এই দূরত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল টাটা ট্রাস্ট-ও। কিন্তু সে সব গুরুত্ব পায়নি। তাই চেয়ারম্যান বদলের ভাবনা।
মিস্ত্রিকেই কার্যত কটাক্ষ করে টাটা সন্স বলেছে, সমস্যা থেকে পালিয়ে যাওয়া কিংবা সেগুলি নিয়ে বারবার অভিযোগ তোলা টাটাদের পন্থা নয়। টাটাকে কাঠগড়ায় তোলা মিস্ত্রি আদতে টাটা সাম্রাজ্যের কর্ণধার হিসেবে কতটা দক্ষ, এ দিনের বিবৃতিতে সে প্রশ্নই কার্যত জনতার দরবারে ছুড়ে দিতে চেয়েছে টাটা সন্স।
তবে এই বিতর্কে ইতিমধ্যেই মিস্ত্রি ও টাটা, উভয়েই বিভিন্ন জনের সমর্থন পাচ্ছেন। মারুতি-সুজুকির চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব যেমন ন্যানো তৈরির ভাবনার জন্য প্রশংসা করেছেন রতন টাটা-র। তেমনই এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেছেন, যে ভাবে মিস্ত্রিকে সরানো হয়েছে তা নীতিগত ভাবে ভুল।
টাটা-মিস্ত্রি বিতর্কে নজর রাখছে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি। টাটাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য তলব করেছে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জও। তবে টাটা স্টিল-সহ এই গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থা বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে, স্বচ্ছতার সঙ্গেই তারা আর্থিক হিসেব জমা দিয়েছে। বিমান পরিবহণ ব্যবসায় টাটাদের নতুন করে পা-রাখা নিয়ে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় বিমান মন্ত্রকও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
টাটা-সাইরাস বিতর্কের প্রভাব শেয়ারহোল্ডারদের উপর পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। যেমন টাটাদের বিভিন্ন সংস্থায় প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার লগ্নি রয়েছে জীবনবিমা নিগমের। এ দিন রতন টাটা নিগমের কার্যকরী চেয়ারম্যান ভি কে শর্মার সঙ্গে দেখা করেন। টাটা গোষ্ঠী সেই সাক্ষাতের কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু জানাতে চায়নি।
তির সাইরাসকে
• সংস্থার বিবাদ প্রকাশ্যে টেনে এনেছেন মিস্ত্রি
• ধাক্কা খেয়েছে টাটা গোষ্ঠীর ভাবমূর্তি
• ব্যবসা পরিচালনার নিয়ম ভাঙার অভিযোগ অযৌক্তিক
• চেয়ারম্যান হয়ে স্বাধীনতা না-পাওয়ার ক্ষোভ ভিত্তিহীন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy