Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

পরিবেশ ও উন্নয়নে ভারসাম্যের খোঁজ

দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে বীরভূমের ডেউচা পাঁচামি কয়লা ব্লকটি একক ভাবে হাতে পেয়েছে রাজ্য।

n মহম্মদবাজার এলাকায় ভাঁড়কাটা অঞ্চলের পাথর খাদান। এটি প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকার মধ্যে পড়ছে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

n মহম্মদবাজার এলাকায় ভাঁড়কাটা অঞ্চলের পাথর খাদান। এটি প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকার মধ্যে পড়ছে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত ও দয়াল সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:২২
Share: Save:

উন্নয়ন মানেই পরিবেশ ধ্বংস নয়। উন্নয়ন মানেই বাপ-ঠাকুরদার আমলের জীবনযাত্রা থেকে স্থানীয়দের উপড়ে ফেলা নয়।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ঠিক হলে ডেউচা পাঁচামির বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও বনাঞ্চল, দুইয়েরই পুনরুজ্জীবন সম্ভব। এই ভারসাম্য রাখার পথে এগোতে চায় রাজ্যও। প্রশাসন জানিয়েছে, প্রথম ধাপে আংশিকভাবে কাজ শুরুর জন্য তাই বেছে নেওয়া হচ্ছে এমন এলাকা, যেখানে মানুষের বসবাস নেই।

দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে বীরভূমের ডেউচা পাঁচামি কয়লা ব্লকটি একক ভাবে হাতে পেয়েছে রাজ্য। রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে সেটি বরাদ্দ করেছে কয়লা মন্ত্রক। লগ্নি টানতে ওড়িশার আকরিক লৌহ সম্পদের সঙ্গে রাজ্যের এই বিপুল কয়লার ভাণ্ডার টক্কর দিতে পারবে বলে দাবি শিল্প মহলের। রাজ্যেরও দাবি, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকার উন্নয়ন হবে। নতুন কর্মসংস্থানেরও দরজা খুলবে।

কিন্তু এই উন্নয়নও সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক নয় বলে দাবি পরিবেশকর্মীদের। রাজ্য বারবারই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও বিভিন্ন গণ সংগঠন ও পরিবেশবিদদের পাল্টা দাবি, এতে বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। বিশেষ করে আদিবাসীদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।

পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী জয়া মিত্রের দাবি, কয়লা খনি হলে বীরভূমের অবশিষ্ট ওই বনাঞ্চলও নষ্ট হয়ে যাবে। জেলার অন্যত্রও তা ঘটেছে। তাঁর মতে, আদিবাসীদের সামাজিক জীবন সব দিক দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের পুনর্বাসন তাই বাস্তবে অসম্ভব। তাঁর প্রশ্ন, প্রযুক্তিগত ভাবে ওই কয়লা খনি থেকে আদৌ কি কয়লা তোলা সম্ভব? উষ্ণায়নের বিতর্কের মধ্যে কেনই বা কয়লার জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়া?

পরিবেশের প্রেক্ষিতে কয়লা নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা কিছুটা মানলেও কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পার্থসারথি ভট্টাচার্যের যুক্তি, আমেরিকা বা অন্য দেশের মতো তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসের তেমন ভাণ্ডার নেই ভারত ও চিনের। তারা কয়লার উপরেই নির্ভরশীল। তাই দেশের উন্নয়নে কয়লা ভাণ্ডারকে উপেক্ষা করা ভারতের পক্ষে সহজ নয়।

তবে কয়লা খনির জন্য কোনও বসতিকে সরাতে হলে আগে পুনর্বাসন পরিকল্পনার উপর জোর দিচ্ছেন তিনিও। তাঁর দাবি, ঝাড়খণ্ডের রাজমহলে ইস্টার্ন কোল ফিল্ডের কয়লা খনির জন্য আদিবাসীদের কাছ থেকে তাঁরা জমি নিয়েছিলেন ঠিক পুনর্বাসন দিয়েই। তিনি বলেন, ‘‘পরিবর্তে কতটা জমি আদিবাসীরা পেলেন, তার চেয়েও বড় হল তাঁদের সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতি বজায় রেখে তাঁদের উন্নত জীবনযাপনের পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া। যেমন জলের জোগান, হাসপাতাল, রাস্তা, ইত্যাদি তৈরি। জমি না-দিলে জমিদাতার যা আয় হত বা যে ভাবে তিনি ছিলেন, জমি দিলে যাতে তার চেয়ে যাতে বেশি কিছু পান, সে ভাবেই পুনর্বাসন প্যাকেজ তৈরি জরুরি। রাজমহলে সফল ভাবে তা করেই বছরে ১.৫ কোটি টন কয়লা তোলা হচ্ছে।’’

প্রশ্ন রয়েছে বনাঞ্চলের সংরক্ষণ নিয়েও। পার্থবাবুর দাবি, ঠিক ভাবে এগোলে খনি অঞ্চলেই নতুন বনাঞ্চল তৈরি সম্ভব। তিনি জানান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের সিংগ্রাওলি খনি প্রকল্পে ১ একর জমির বদলে ২.৫ একর বনাঞ্চল তৈরি হয়েছে।

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, কয়লা উত্তোলনের আগে পরিবেশ ও পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Deucha Coal Mine State Government Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy