ফাইল চিত্র।
আবার কোভিড আক্রান্ত ভারতীয় অর্থনীতি। সবেমাত্র ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে আছড়ে পড়ল সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম দফায় দৈনিক সংক্রমণ ১ লক্ষের মধ্যে বাঁধা থাকলেও, দ্বিতীয় ঝাপটায় তা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছে ১.৫০ লক্ষ। যে হারে অতিমারি ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে সকলেই আতঙ্কিত। পাশাপাশি বাড়ছে দৈনিক মৃত্যুও। সব থেকে শোচনীয় অবস্থা মুম্বই, তথা মহারাষ্ট্রের, যেটি ভারতের ব্যবসায়িক রাজধানী। বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়েছে আঞ্চলিক এবং আংশিক লকডাউন। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে কোনও কোনও রাজ্যে পুরো লকডাউনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ফের ধাক্কা খাওয়ার উপক্রম হয়েছে শিল্প-বাণিজ্যের। গত বছরের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে নিজের রাজ্যে ফিরতে শুরু করেছেন। রাজ্যে রাজ্যে পুরো লকডাউন করতে হলে ফের চাহিদা এবং উৎপাদন মার খাবে। নতুন করে ধাক্কা খাবে শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার ১০ থেকে ১২ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও, করোনার কারণে শেষমেষ তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তা এখনই অনুমান করা শক্ত।
কোভিড আতঙ্ক পেয়ে বসেছে শেয়ার বাজারকেও। নতুন অর্থবর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল সেনসেক্স ৫২১ পয়েন্ট বেড়ে ফের ৫০ হাজার পার করলেও পরের দিনই খুইয়ে বসে ৮৭১ পয়েন্ট। তার পরে ক’দিন ওঠানামা করে সপ্তাহের শেষে সূচক বন্ধ হয় ৪৯,৫৯১ পয়েন্টে। নিফ্টি সপ্তাহ শেষ করে ১৪,৮৩৫ পয়েন্টে। সংক্রমণে যদি দ্রুত রাশ টানা না-যায় তবে আগামী দিনে অনিশ্চয়তা আরও চেপে বসবে বাজারে।
যেমন ভাবা হয়েছিল তার সঙ্গতি রেখে এই দফায় রেপো রেট অপরিবর্তিত রেখেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ ব্যাঙ্কে সুদের হার কমছে না। শীর্ষ ব্যাঙ্কের আশা, চলতি অর্থবর্ষে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হারকে বেঁধে রাখা যাবে ৪.৪ থেকে ৫.২ শতাংশের মধ্যে। পদক্ষেপ করা হয়েছে দ্রুত বেড়ে ওঠা বন্ড ইল্ডকে কিছুটা নামিয়ে আনার জন্য। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বছরের প্রথম তিন মাসে বাজার থেকে আরবিআই ১ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের বন্ড কিনে নেবে। এর ফলে এক দিকে যেমন বন্ডের চাহিদা বাড়বে, অন্য দিকে তেমনই বাজারে বাড়বে টাকার জোগান। ফলে বাড়বে বন্ডের দাম, নামবে ইল্ড।
বস্তুত, ইল্ড কমতে শুরু করেছে বুধবার আরবিআই ঋণনীতি ঘোষণার পর থেকেই। ১ এপ্রিল ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড ছিল ৬.১৭ শতাংশ। গত শুক্রবার তা নেমে এসেছে ৬.০১ শতাংশে। বাজারে বন্ডের দাম বাড়ায় বন্ড ফান্ডগুলি আবার তাদের হারানো জমির কিছুটা উদ্ধার করতে পেরেছে।
সর্বোচ্চ জায়গা থেকে কিছুটা নীচে থাকলেও, পরিস্থিতির বিচারে দুই সূচকই এখনও যথেষ্ট উঁচু জায়গায়। ভাল রকম বেড়ে আছে মিড ক্যাপ (বাজারে মোট শেয়ার মূল্যের নিরিখে মাঝারি মাপের সংস্থা) এবং স্মল ক্যাপ (বাজারে শেয়ার মূল্যের নিরিখে ছোট মাপের) সূচকও। এই অবস্থায় বেশ সজাগ হয়ে পা ফেলতে হবে
শেয়ার বাজারে।
আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ২০২০-২১ বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের পালা। আগের বছর মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার কারণে তুলনামূলক ভাবে এ বারের শেষ চার মাসে ফলাফলে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত অর্থবর্ষে নিট প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৯.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা, যা পরিবর্তিত অনুমিত আয়ের তুলনায় ৫% বেশি। বেড়েছে জিএসটি বাবদ আয়ও। মার্চে এই খাতে সংগৃহীত হয়েছে ১.২৪ লক্ষ কোটি টাকা, যা সর্বকালীন রেকর্ড। এই সব তথ্য ইঙ্গিত দেয় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। অতিমারি ফের তাতে জল ঢালল কি না, বোঝা যাবে আরও কিছু দিন পরে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy