গত সপ্তাহে দেশ-বিদেশ থেকে কিছু ভাল খবর পেয়েছে বিনিয়োগের বাজার। ফাইল চিত্র।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে কোন ক্ষেত্রে ভারত কতটা এগোতে পেরেছে, তার হিসেব-নিকেশ চলছে দেশ জুড়ে। আতসকাচের তলায় অর্থনীতি। তবে লগ্নিকারীদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, গত সপ্তাহটা বিশ্ব তথা ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে কেমন গেল এবং কেমন যেতে পারেআগামী দিনগুলি।
চড়া সুদ, বেকারত্ব, কমে যাওয়া রফতানি, বাড়তে থাকা আমদানি, রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি, টাকার পড়তি দাম নিয়ে উদ্বেগ বহাল দেশে। তার মধ্যেই গত সপ্তাহে দেশ-বিদেশ থেকে কিছু ভাল খবর পেয়েছে বিনিয়োগের বাজার। এতে অন্যান্য দেশের মতো ভারতীয় শেয়ার বাজারও তেতে উঠেছে। এর অন্যতম কারণ আমেরিকা এবং ভারতে মূল্যবৃদ্ধির হারের কিছুটা মাথা নামানো। এমন নয় যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এটা স্পষ্ট, দাম বৃদ্ধির হার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়ার পরে লাগাতার সুদের হার বৃদ্ধির সুফল হিসেবে তা কমতে শুরু করেছে। মূল্যবৃদ্ধি এখনও যথেষ্ট উঁচুতে থাকলেও, আপাতত আর মাথা তুলবে না বলেই ধারণা।
আমেরিকায় দাম কমেছে গ্যাস, তামা, গম-সহ কয়েকটি পণ্যের। বেড়েছে কর্মসংস্থান। জুলাইয়ে ৫.২৮ লক্ষ নতুন কাজ তৈরি হয়েছে। এই সব তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ হয়তো আর ততটা চড়া হারে সুদ বাড়াবে না। ফলে চাঙ্গা সে দেশের শেয়ার বাজার। এর প্রভাব পড়েছে ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে।
এ দেশেও খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার জুনের ৭.০১% থেকে জুলাইয়ে নেমেছে ৬.৭১ শতাংশে। যদিও তা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ৬% সহনসীমার উপরে। তবে আশা করা যায় আগামী দিনে আরও কমবে। বিশেষত বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দাম যেহেতু ব্যারেল পিছু ১০০ ডলারের নীচে নেমেছে। যা একটা সময় ১৩৯ ডলারে পৌঁছেছিল। জ্বালানির দাম যদি আর না বাড়ে অথবা আরও মাথা নামায়, তবে তা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে ভারতীয় অর্থনীতির কাছে। মনে করা হচ্ছে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও সুদ বাড়ানোর ব্যাপারে এর পরে কিছুটা নরম মনোভাব নিতে পারে। যে কারণে গত সপ্তাহে লগ্নিকারীরা শেয়ার কিনেছেন, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পুঁজি ফিরেছে, উঠেছে সূচক। চার দিনে সেনসেক্স ১০৭৫ পয়েন্ট উঠে পৌঁছেছে ৫৯,৪৬৩ অঙ্কে। সর্বোচ্চ শিখর ৬১,৭৬৬ থেকে এখন সে মাত্র ২৩০৩ পয়েন্ট বা ৩.৭৩% পিছনে। বাজারের এই তেজী ভাব বজায় থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে রেকর্ডও গড়তে পারে। নিফ্টি গত সপ্তাহে ৩০১ বেড়ে থিতু হয়েছে ১৭,৬৯৮-এ।
উত্থানে আরও জ্বালানি জোগাতে পারে জুনে ১২.৩% শিল্প বৃদ্ধির খবর। কারণ, বাজারের পক্ষে এটা সদর্থক বার্তা। শিল্পোৎপাদন বাড়ছে মানে, অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে। অর্থনীতিতে সেই উন্নতির আভাস মেলায় ইতিমধ্যেই এ দেশে ফিরতে শুরু করেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। অগস্টের প্রথম দু’সপ্তাহেই ২২,৪৫২ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে তারা। এদের লগ্নি জারি থাকলে বাজার তার তেজী ভাব ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ায় বাড়ছে শেয়ার নির্ভর ফান্ডের রিটার্ন।
এপ্রিল-জুনে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলও মোটের উপরে ভাল হয়েছে এ বার। গত সপ্তাহে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকটির ফল প্রকাশ করেছে যারা, তাদের মধ্যে এয়ারটেলের লাভ বেড়েছে ৫ গুণেরও বেশি (১৬০৭ কোটি টাকা), কোল ইন্ডিয়ার বেড়েছে ১৭৮%, হিন্দালকোর ৪৮% বেড়ে নিট লাভ উঠেছে ৪১১৯ কোটি টাকায়। টাটা কনজ়িউমারের লাভ বেড়েছে ৩৮% এবং সিইএসসি-র ৬%। স্টিল অথরিটির কমেছে ৭৯%। সব মিলিয়ে মেঘ না কাটলেও, বহু দিন পরে ভাল লাগার আবহ তৈরি হচ্ছে শেয়ার বাজারে।
এই অবস্থায় অবশ্য বার বার ঋণে সুদ বাড়লেও, ব্যাঙ্ক আমানতে তা তেমন বাড়ছে না। শেয়ার এবং ফান্ডে লগ্নিকারীরা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলেও, তাই দুশ্চিন্তা বহাল সুদ নির্ভর প্রবীণ নাগরিকদের।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy