প্রতীকী ছবি।
বহাল আছে ‘বুল রান’। গত সপ্তাহে নতুন উচ্চতা পেয়েছে শেয়ার বাজার। মঙ্গলবার প্রথম বার সেনসেক্স ঢোকে ৪৪ হাজারের ঘরে। পরে অবশ্য নেমে আসে। তবে পরের দিন ফের ৪৪ হাজার পেরিয়ে গিয়ে তা আর নামেনি। বন্ধ হয় ৪৪,১৮০ অঙ্কে।
১০ নভেম্বর প্রথম সেনসেক্স থেমেছিল ৪৩ হাজারের উপরে। এর পরে মাত্র ছ’টি লেনদেনে সূচক পরের হাজার ধাপ পার হয়। এতটা ওঠায় গত বৃহস্পতিবার লগ্নিকারীদের লাভ ঘরে তোলার তাগিদে বাজার ৫৮০ পয়েন্ট নামে। কিন্তু তার খানিকটা শুধরে শুক্রবার ফের ২৮২ পয়েন্ট উঠে দাঁড়ায় ৪৩,৮৮২-তে। ওই দিন নিফ্টি ছিল ১২,৮৫৯ অঙ্কে।
দিওয়ালির সপ্তাহখানেক আগে থেকেই বাজার তেজি। কিছু শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত, করোনার প্রতিষেধক ২-৩ মাসের মধ্যে পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা, কেন্দ্রের নতুন আর্থিক প্যাকেজ ইত্যাদি উত্থানে মদত জুগিয়েছে। আর সরাসরি তাকে ঠেলে তুলেছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি। নভেম্বরের ৩ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ভারতে একনাগাড়ে শেয়ার কিনেছে তারা। করোনা বিদায়ের পরে দেশ দ্রুত বৃদ্ধির কক্ষপথে ফিরবে, এই ভরসা সংস্থাগুলির মনে বদ্ধমূল। এই সময়ে প্রত্যেক দিন তারা যত টাকার শেয়ার বেচেছে, তার থেকে বেশি মূল্যের কিনেছে। গত সপ্তাহের চারটি লেনদেনে বিদেশি লগ্নিকারীদের নিট লগ্নি ছিল ১৪,৯৪১ কোটি টাকা।
তবে এই লগ্নি যেমন বাজারকে শক্তি জোগাচ্ছে, তেমন ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। কারণ, এরা যখন লাভ ঘরে তুলতে বা অন্য কোনও কারণে শেয়ার বিক্রি করতে নামবে, তখন আচমকাই বাজার দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তা ছাড়া, সূচকের বর্তমান উচ্চতা দেশ এবং বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়।
শেয়ার বাজারের মতোই তেজি বন্ডের বাজার। দাম বাড়ায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড কমে ৫.৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাই বেড়েছে বন্ড ফান্ডের ন্যাভ। ফলে খুশি ইকুইটি এবং বন্ড ফান্ড, দুই ক্ষেত্রের লগ্নিকারীরাই।
খুশির জোয়ার
•সব নজির ভেঙে সেনসেক্স সর্বকালীন উচ্চতায় (৪৪,১৮০) পা রাখে বুধবার। রেকর্ড গড়ে প্রায় ১৩ হাজারের কাছে (১২,৮৫৯) থিতু হয়েছে নিফ্টি-ও।
•শেয়ারে নাগাড়ে আসছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি। নভেম্বরে এখনও পর্যন্ত তারা ভারতের বাজারে ঢেলেছে নিট ৪৯,৫৫৩ কোটি টাকা।
•তেজি বন্ডের বাজার। বাড়ছে বন্ড ফান্ডের ন্যাভ। ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড কমে ৫.৮৭%।
•২-৩ মাসে একাধিক করোনার প্রতিষেধক পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা।
তবুও আশঙ্কা
• বিদেশি লগ্নিকারীরা হঠাৎ শেয়ার বিক্রি করতে নামলে বাজারে ধস নামতে পারে।
•দেশে-বিদেশে তাক লাগানো বা এখনই সব সঙ্কট কেটে যাওয়ার মতো কোনও অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াই সূচকের এতটা উত্থান ধরে রাখা যাবে তো? গত সপ্তাহে নজিরবিহীন ওই দৌড় সত্ত্বেও শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ প্রথম ১০টি মূল্যবান সংস্থার মধ্যে পাঁচটিরই শেয়ারের মোট মূল্য এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি কমেছে।
•বন্ড ইল্ডের সঙ্গে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হারের সম্পর্ক আছে। ইল্ড নামছে, তা হলে সেই সব সঞ্চয়ের সুদও তো আরও কমতে পারে। অথচ মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলছে আরও।
বন্ডের ইল্ড কমায় অবশ্য ফের ভয় বাড়ছে পিপিএফ, এনএসসি-র মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ কমার। কারণ কিছু স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ বন্ডের ইল্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গড় ইল্ড নীচের দিকেই থাকলে আশঙ্কা থাকবে পরের দফায় (১ জানুয়ারি থেকে) ওই সব প্রকল্পে সুদ কমার। কমতে কমতে নামী ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতেও সর্বোচ্চ সুদ নেমেছে প্রায় ৫.৫ শতাংশে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ হার ৬.৩%। অথচ মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা তুলছে। অক্টোবরে পাইকারি বাজারে তা বেড়ে হয়েছে ১.৪৮%, যা আট মাসে সর্বোচ্চ। একই মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারও বেড়ে হয়েছে ৭.৬১%। দুই বাজারের হারই ঊর্ধ্বমুখী থাকায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সম্ভবত এখনই ফের সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy