শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাধবী পুরী বুচের বিরুদ্ধে এই পদে কাজ করার সময়েই স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছিল। আঙুল উঠেছিল নিয়ন্ত্রকের দিকে। বিরোধী শিবির সেবি ঢেলে সাজানোর দাবিও তোলে। নতুন চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পান্ডে এ বার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে কোমর বেঁধে নামলেন। সমালোচনা আটকাতে তিনি যে বদ্ধপরিকর, সেই প্রমাণ দিলেন তাঁর নেতৃত্বাধীন পরিচালন পর্ষদের প্রথম বৈঠকেই। যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পর্ষদের কোনও সদস্যে বিরুদ্ধে যাতে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ না উঠতে পারে তা নিশ্চিত করতে আরও কড়া নিয়ম আনা হবে। সে জন্য তৈরি হবে উচ্চ পর্যায়ের এক বিশেষ কমিটি। আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা এ সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দেবে।
আমেরিকার শেয়ার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ প্রথমে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছিল। পরে তারা বলে, যে সব বিদেশি সংস্থা বেআইনি লেনদেনের মাধ্যমে এই কাজ করে তাতে বুচ এবং তাঁর স্বামীর লগ্নি ছিল। এমনকি তাঁর নেতৃত্বাধীন সেবি যখন আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছিল তখনও। স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ ওঠে বুচের বিরুদ্ধে। সেই প্রক্ষিতেই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। একাংশের দাবি, খোদ সেবির বিরুদ্ধেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সেই সূত্রে মোদী সরকারের দিকেও। সেই সরকারেরই আমলা পান্ডে সেবির দায়িত্ব নিয়ে ছবিটা বদলাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। বুচ অবং আদানি অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
সরকারি, বেসরকারি বা শিক্ষা ক্ষেত্রের নিয়ম-কানুন তৈরিতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অথবা বিধিবদ্ধ সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি হবে কমিটি। কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “সেবির পর্ষদের সদস্য এবং আধিকারিকদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং নৈতিকতার মান সর্বোচ্চ হবে, এটা নিশ্চিত করতেই এখনকার কাঠামোকে আরও কঠোর করা হচ্ছে। এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে, যার মাধ্যমে স্বার্থের সংঘাতের ঘটনাগুলিকে আটকানো যাবে। সেটা নিশ্চিত করতে এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি যাতে প্রকাশ পায়, তা নিশ্চিত করতে চায় সেবি।’’
সেবির ওই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে আর্থিক বিশেষজ্ঞ এবং শেয়ার বাজার মহল। অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, “শেয়ার বাজারে এখন বহু সাধারণ মানুষ পুঁজি বিনোয়োগ করছেন। লেনদেনের ক্ষেত্রে বেআইনি কাজগুলি রোখাই সেবির কাজ। তাই সবার আগে প্রয়োজন তাদের নিজস্ব নৈতিকতার মান উন্নত করা। সেবির পরিচালন পর্যদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।’’ বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলেন, “বিশ্বের অন্যতম প্রধান শেয়ার বাজার হল ভারতের শেয়ার বাজার। সেবির পদক্ষেপ ভারতের শেয়ার বাজারের প্রতি শুধু ভারতীয় নয়, বিদেশি লগ্নিকারীদেরও আস্থা বাড়াতে সাহয্য করবে।’’
এ দিনের বৈঠকে বিদেশি লগ্নিকারীদের আকৃষ্ট করা এবং বিকল্প লগ্নি সংস্থা বা অলটারনেটিভ ইনভেস্ট ফান্ড-সহ আরও কিছু বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)