প্রতীকী ছবি।
ব্যাঙ্কে গ্রাহকের জমা থাকা আমানতের উপরে বিমার সুরক্ষা কবচ পোক্ত করার দাবি তুলল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মী ইউনিয়ন। তাদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে বিশ্বের অন্যান্য বহু দেশের থেকে পিছিয়ে ভারত। তাই গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে এ দেশে ন্যূনতম ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক জমাকে বিমার আওতায় আনার সওয়াল করেছেন ইউনিয়ন কর্তারা। এর পাশাপাশি, সব শহুরে সমবায় ব্যাঙ্ককে (আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক) পুরোপুরি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিও তোলা হয়েছে। যেগুলির পরিচালনায় এখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যেরও কিছুটা ভূমিকা থাকে। ব্যাঙ্কিং মহলের একাংশের যুক্তি, ব্যাঙ্কগুলিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতেই তাদের প্রতিটি বিষয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সর্বেসর্বা হওয়া জরুরি। যাতে পঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র কোঅপারেটিভ (পিএমসি) ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক নয়ছয়ের ঘটনা না-ঘটে।
এখন ব্যাঙ্কে গ্রাহকের আমানতের (সেভিংস ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, স্থায়ী আমানত-সহ বিভিন্ন খাতে জমা মিলিয়ে) অঙ্ক যা-ই হোক না কেন, তার বিমা করা থাকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কোনও কারণে ব্যাঙ্ক উঠে গেলে, গ্রাহক ১ লক্ষ পর্যন্ত ফেরত পাবেন নিজের আমানতের নিরিখে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আশ্বাস দিয়েছেন, ওই অঙ্ক আরও বাড়াবে কেন্দ্র। এ জন্য শীঘ্রই বিল আনবেন তাঁরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, সেই সুরক্ষা যেন বর্তমানে টাকার মূল্যের কথা মাথায় রেখে ও আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সঙ্গে কিছুটা সামঞ্জস্য রেখে হয়। কারণ, অল ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ওই অঙ্ক বহু দেশের চেয়ে ভারতে অনেকটাই কম।
মঙ্গলবার ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক জমায় বিমার অঙ্কের বিচারে বিশ্বে যে সব দেশ নীচের সারিতে, ভারত তার অন্যতম। আমাদের দাবি, বিমা বাড়িয়ে কমপক্ষে ১০ লক্ষ করা হোক। তবে তার পরেও আমেরিকা, চিন, ব্রাজিল-সহ আরও বহু দেশের থেকে তা চোখে পড়ার মতো কম থাকবে।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৮ সালে বিশ্ব জোড়া মন্দার পরে বহু দেশ তাদের ব্যাঙ্ক বিমার আওতায় আমানতের অঙ্ক বাড়িয়েছে। কিন্তু ভারতে তা হয়নি। এখানে সেই যে ১৯৯৩ সালের ১ মে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানতে বিমা পাওয়ার নিয়ম চালু হয়েছিল, তার পর থেকে ওই অঙ্কের বদল হয়নি।
কেন্দ্র ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অনেক সময়েই যুক্তি দেন যে, দেশে ব্যাঙ্ক ফেল করার ঘটনা নেই। তাদের দাবি, কোনও ব্যাঙ্কের আর্থিক হাল খারাপ হলে তাকে হয় কেন্দ্র টাকা দিয়ে সাহায্য করে বা শক্তিশালী ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশিয়ে ফেল হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো হয়। সমীরবাবুদের বক্তব্য, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে হয়তো কেন্দ্র ও ব্যাঙ্কের যুক্তি ঠিক। কিন্তু প্রতারণা যে ভাবে বাড়ছে ও অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় কিছু ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা যে ভাবে দুর্বল হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা শক্ত। বিশেষত ডিপোজিট ইনশিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশনের (ডিআইসিজিসি) রিপোর্ট যেখানে বলছে, ১৯৬২ সালে এই নিগম চালু হওয়ার পরে এ পর্যন্ত তারা ৩৫১টি সমবায় ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ৪৮২২ কোটি টাকা বিমার দাবি মিটিয়েছে। উল্লেখ্য, দেশের সব ব্যাঙ্কই ডিআইসিজিসির কাছেই বিমা করে। প্রতি ১০০ টাকা বিমাকৃত আমানতের জন্য তাদের ১০ পয়সা করে প্রিমিয়াম গুনতে হয়।
এ দিকে, সব শহুরে সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করতে সেগুলিকে পুরোপুরি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি তুলেছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্মী সংগঠন। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যৌথ ভাবে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের পরিচালন ব্যবস্থা, চেয়ারম্যান এবং এমডি-সহ সব কর্মী নিয়োগ ও পর্ষদ গঠনের দায়িত্ব রাজ্যের। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দেখে আরবিআই। সমীরবাবু বলেন, ‘‘এতে ব্যাঙ্কগুলির পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। যা বহু ক্ষেত্রে আর্থিক নয়ছয়ের উৎস হয়। তাই পুরো নিয়ন্ত্রণ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতায় আনা উচিত।’’ সম্প্রতি পিএমসি ব্যাঙ্ক কাণ্ড সামনে আসার পরেই সেখানে জমা টাকার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের দাবি, শীর্ষ ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণে এলে সমবায় ব্যাঙ্ক পরিচালনা নিয়ে সমস্যা কমবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy