রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে গড় মূল্যবৃদ্ধির হার হবে ৬.৭%। প্রতীকী ছবি।
এই দফায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি নির্ধারণ কমিটি রেপো রেট (যে সুদের হারে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) বাড়িয়েছে ৩৫ বেসিস পয়েন্ট। ঠিক যেমনটা আঁচ করেছিল বাজার। এর ফলে বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ধরনের ঋণে ফের সুদ বাড়তে শুরু করেছে। মূল্যবৃদ্ধি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই ভবিষ্যতে সুদ আরও কিছুটা বাড়াতে হতে পারে, এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। আজ দুপুর ১২টায় প্রকাশিত হবে নভেম্বরে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার। যার প্রভাব দেখা যাবে শেয়ার এবং বন্ড (ঋণপত্র) বাজারে। মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামালে উজ্জীবিত হতে পারে দু’টিই। আগামী কাল জানা যাবে নভেম্বরে আমেরিকায় খুচরো মূল্যবৃদ্ধি কত ছিল। ভারত-সহ গোটা বিশ্বের বাজারে প্রভাব পড়বে তারও। এই অবস্থায় দেশ জুড়ে লগ্নির সঠিক পথ খুঁজছেন মানুষ। চড়া মূল্যবৃদ্ধির জমানায় হাতে বাড়তি টাকা থাকলে, তা কোথায় জমা করলে রিটার্ন একটু বেশি পাওয়া যাবে, চর্চা চলছে তাই নিয়েই।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে গড় মূল্যবৃদ্ধির হার হবে ৬.৭%। অর্থাৎ নিজেদেরই বেঁধে দেওয়া ২% থেকে ৬% সহনসীমার উপরে। সুদ বৃদ্ধি এবং বিশ্ব বাজারের কারণে আর্থিক বৃদ্ধির অনুমান ৭% থেকে কমিয়ে ৬.৮% করেছে তারা। তবে আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, হার কমলেও জিডিপি বৃদ্ধির নিরিখে বিশ্বের মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকবে ভারত।
গত মে থেকে ডিসেম্বরে পাঁচ দফায় রেপো মোট বেড়েছে ২২৫ বেসিস পয়েন্ট। অনুমান, ফেব্রুয়ারিতে তা বাড়ানো হতে পারে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট। অর্থাৎ এ বার রেপো হয়েছে ৬.২৫%। এর পরে পৌঁছতে পারে ৬.৫০ শতাংশে। অক্টোবরের মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৬.৭৭%। মার্চের মধ্যে কিছুটা মাথা নামিয়ে তা ৬ শতাংশের নীচে গেলে হয়তো দাঁড়ি পড়বে সুদ বৃদ্ধির রাস্তায়।
ঋণে লাগাতার সুদ বাড়লেও, অক্টোবরে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির খুচরো বিক্রি বেড়েছে ২৫.৭১%। মাসিক ঋণ শোধের কিস্তি (ইএমআই) বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও নভেম্বরে ১৫% বেড়ে মুম্বইতে বাড়ি বিক্রির সংখ্যা ছুঁয়েছে ৮৭৫৬টি। বিক্রি বাড়ছে অন্যান্য বড় শহরেও। বাড়ি-গাড়ির বিক্রি বাড়লে উপকৃত হয় বেশ কিছু সহায়ক শিল্পও।
ঋণের পাশাপাশি অল্পবিস্তর সুদ বাড়ানো হতে পারে ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসির (ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান) জমায়। একটু মাথা তুলেছে বন্ড ইল্ডও। এই দফায় ব্যাঙ্কের জমায় সুদ বাড়ানো হলে তা সম্ভবত করা হবে ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে। কারণ বড় মেয়াদে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলে, রেপো এবং সেই সঙ্গে ব্যাঙ্ক ঋণ এবং জমায় সুদের হার কমানো হতে পারে।
সাধারণ মানুষ এই উঠতি সুদের বাজারে খোঁজ নিচ্ছেন, কোথায় টাকা রাখা যায়। ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের কোনও কোনও প্রকল্পের সুদ অনেক দিন বাদে পিছনে ফেলেছে মূল্যবৃদ্ধির (৬.৭৭%) হারকে। এই দু’টি জায়গা ছাড়া টাকা রাখা যেতে পারে ‘AAA’ রেটিংয়ের এনবিএফসির জমা প্রকল্প, মিউচুয়াল ফান্ডের বন্ড ফান্ড ও ব্যালান্সড ফান্ড এবং জীবন বিমা কোম্পানির অ্যানুইটি প্রকল্পে। রেপো কমতে শুরু করলে বাড়বে বন্ডের দাম এবং নামতে শুরু করবে ইল্ড। এই কথা মাথায় রেখে অন্তত পক্ষে তিন বছরের বেশি টাকা রাখলে কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স-এর (মূল্যবৃদ্ধি সূচক) সুবিধা পাওয়া যায়। তাতে মূলধনী লাভের উপরে করের দায় অনেক কম হয়।
এলআইসি-সহ বিভিন্ন জীবন বিমা কোম্পানির ইসু করা অ্যানুইটিতে ব্যাঙ্কের তুলনায় কিছুটা কম আয় হলেও, দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রকল্পের সুবিধা বেশি হতে পারে। ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য প্রকল্পে সুদের হার নেমে আসবে। কিন্তু অ্যানুইটি কিনলে যে রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে, তা পাওয়া যাবে আজীবন। মূল্যবৃদ্ধি কমার সম্ভাবনা থাকলে এই প্রকল্পে অবসরের কিছু টাকা রাখার কথা ভাবা যেতে পারে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন মেয়াদে মূল্যবৃদ্ধির হার নামবে ৫ শতাংশে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy