প্রতীকী ছবি।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ব্যাঙ্ক কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, গ্রামে-মফস্সলে গিয়ে মেলা বসিয়ে ঋণ বিলি করুন। যাতে বাজারে নগদের জোগান বাড়ে। মানুষের হাতে টাকা আসে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে তো!
ঠেলায় পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ঋণ মেলা করে ঋণ বিলি করেছে। ছোট-মাঝারি শিল্পকে দেদার ঋণ বিলি করা হয়েছে। নগদ পুঁজির অভাব থাকলে ২৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বার দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে, ধার শোধ হবে তো? ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণের বোঝা বা অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) আবার বেড়ে যাবে না তো? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, অর্থনীতির করুণ দশার ফলে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ আগামী এক বছরে বাড়তে পারে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তা পৌঁছতে পারে ৯.৯ শতাংশে। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে ছিল ৯.৩%। তার মধ্যে ঋণ মেলায় বিলি করা ঋণ যদি শোধ না-হয়, তা হলে এনপিএ-র বোঝা আরও বাড়বে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পরে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে মোট ৪.৯১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ বিলি হয়েছে। এর মধ্যে ২.২০ লক্ষ কোটি ঋণ দেওয়া হয়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে। ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলিকে ৭২,৯৮৫ কোটি। এই ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলিকে দেওয়া ঋণ নিয়েই চিন্তা বাড়ছে অর্থ মন্ত্রক ও ব্যাঙ্কের কর্তাদের।
অর্থ মন্ত্রকের ব্যাঙ্ক বিষয়ক দফতরের এক কর্তার বিশ্লেষণ, প্রথমে নোট বাতিল ও তার পরে জিএসটি— এই দুইয়েরই সব থেকে বেশি ধাক্কা লেগেছিল ছোট-মাঝারি শিল্পের উপরে। অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে এই শিল্পকে তাই বেশি নগদ জোগানো দরকার ছিল। তা করতে গিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে যেমন কার্যত ঋণ বিলির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তেমনই নির্দেশ গিয়েছে, আগামী মার্চ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ শোধের টাকা না-এলেও এগুলিকে অনুৎপাদক সম্পদের বলে তকমা দেওয়া যাবে না।
এখানেই চিন্তা ব্যাঙ্ক কর্তাদের। কারণ, নোটবন্দি-জিএসটির ধাক্কায় ধুঁকতে থাকা ছোট-মাঝারি শিল্পকে ঋণ দেওয়া এমনিতেই ঝুঁকির। তার মধ্যে তাড়াহুড়ো করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টায় ঋণ বিলি করতে গিয়ে, লাভজনক ব্যবসায় টাকা ঢালা হচ্ছে কি না, তা ঠিক মতো খতিয়ে দেখা হয়নি।
এমনিতেই মোদী সরকার এক বছর আগে ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য ৫৯ মিনিটে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ মঞ্জুরের প্রকল্প চালু করেছিল। বাজেটের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেখানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা এ বিষয়ে কেন্দ্রকে সতর্ক করে দেন। সেখানেও যুক্তি ছিল একই। তাড়াহুড়ো করে ঋণ মঞ্জুর করতে গিয়ে তা শোধ হবে কি না, তার সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে না। একই ভাবে কেন্দ্রের মুদ্রা যোজনা নিয়েও সতর্ক করেছিলেন তাঁরা। বলেছিলেন, এই প্রকল্পে ঋণ থেকে এনপিএ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে।
২০১৫ সালে ছোট-মাঝারি শিল্পকে সাহায্য করতেই ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে মুদ্রা যোজনা চালু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, সরকারি ব্যাঙ্কের দেওয়া ২.৪৩ কোটি মুদ্রা ঋণের মধ্যে ১২.৩ লক্ষ এনপিএ হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের বিশ্লেষণ, যে সব সংস্থা ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রেই শোধ না-করার হার বেশি। ব্যবসা ডোবা, নোট বাতিল, জিএসটির ধাক্কায় নগদের জোগান কমা যার কারণ। তার সঙ্গে সব দিক খতিয়ে না-দেখে কেন্দ্রের চাপে ঋণ বিলিও আরেকটি কারণ।
মন্ত্রকের এক কর্তার আফশোস, ‘‘প্রথমে মুদ্রা, তার পরে ৫৯ মিনিটে ঋণ মঞ্জুর, এ বার ঋণ মেলা— বারবার সেই একই ভুল হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy