হাওড়া স্টেশন। —ফাইল চিত্র।
কোটি কোটি টাকার আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত কর্মী থাকলেও, কেন্দ্রের নির্দেশের জেরে কাগজ না থাকায় হাওড়ায় রেলের ছাপাখানার ২৯১ জন কর্মীর কাজ নেই। রেল সূত্রের দাবি, এই পরিস্থিতিতে গত মে মাসে রেল মন্ত্রকের নির্দেশিকায় ছাপাখানা বন্ধ করে যন্ত্রপাতি ও জমি বিক্রির পাশাপাশি কর্মীদের বদলির কথা বলা হয়েছে। ফলে সংরক্ষিত, অসংরক্ষিত টিকিট, রিজ়ার্ভেশন স্লিপ, মানি ভ্যালু (টাকার মূল্য বহন করে এমন সরকারি কাগজ) থেকে নতুন নিযুক্ত কর্মীদের সার্ভিস ফাইলের নথি-সহ সব রকম ছাপার কাজই সেখানে উঠে যাওয়ার মুখে। রেলের কর্মী ইউনিয়নের অভিযোগ, একই কাজ বহু ক্ষেত্রে বেশি টাকায় বাইরে থেকে করানো হচ্ছে। যা সংস্থা ‘বন্ধ’ করার ‘চক্রান্ত’ বলছেন তাঁরা। যদিও গত ৮ ডিসেম্বর এক প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রাজ্যসভায় জানান, রেলের তিনটি ছাপাখানা চাহিদা অনুযায়ী কাজ করছে।
মোদী জমানায় সব ছাপাখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রেল। ১৪টির মধ্যে ২০১৭-এ ৯টি বন্ধ হয়। পরে বাকি পাঁচটি ছাপাখানাও (মুম্বই, হাওড়া, দিল্লি, চেন্নাই, সেকেন্দরাবাদে) গুটোনোর তৎপরতা শুরু হয়। এর মধ্যে চেন্নাই এবং দিল্লিতে কর্মীর অভাবে উৎপাদন বন্ধ। টিকে রয়েছে হাওড়া, মুম্বই, সেকেন্দরাবাদেরটি।
প্রায় ১৭০ বছরের পুরনো হাওড়ার ছাপাখানায় ২০১৪-এ ২২ কোটি টাকায় আধুনিকীকরণ হয়। বার্সেলোনা থেকে আধুনিক প্রযুক্তির মুদ্রণ যন্ত্র আসে। রেল সূত্রে খবর, সেখানে পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব-মধ্য, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল এবং মেট্রো রেলের প্রয়োজনীয় জিনিস ছাপা হয়। কোভিডের আগেও পূর্ব রেলের ৫০ কোটির বেশি অসংরক্ষিত টিকিট ছাপা হয়েছে। পূর্ব রেলে আগামী মার্চ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কোটির চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়াও ১.২ কোটি রিজ়ার্ভেশন স্লিপ, বিধায়কদের কুপন, ক্রেডিট নোট, বিভিন্ন মানি ভ্যালু, ট্রেন চলাচল এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ কাগজ-সহ বহু জরুরি নথি ছাপা হয়।
সূত্র বলছে, গুরুত্বপূর্ণ নথি ছাপতে জলছাপ (ওয়াটার মার্ক) দেওয়া যে কাগজ লাগে, সরকারি নির্দেশে তা এখন হাওড়ার ছাপাখানা নিজে কিনতে পারে না। মুম্বইয়ের ছাপাখানার মাধ্যমে আনতে হয়। ফলে প্রায়ই কাগজ না থাকায় কাজ হয় না। এই পরিস্থিতিতে এসেছে কেন্দ্রের কারখানা বন্ধের নির্দেশ। মানিভ্যালু ছাপার কাজ আরবিআই অনুমোদিত ছাপাখানার হাতে দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য উপকরণ বাইরে থেকে ছাপাতে বলা হয়েছে।
রেল কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ছাপাখানায় অনেক উদ্বৃত্ত কর্মী। এখন অনলাইনে আসন সংরক্ষণ হয়, কম খরচে বাইরে ছাপার কাজ হয়। ছাপাখানা নিজস্ব আয়ের চেষ্টাও করেনি। ফলে প্রয়োজন ফুরোচ্ছে। যদিও কর্মী সংগঠনের দাবি, টিকিটে বিজ্ঞাপন ছাপার অনুমতি পাওয়ার পরে তাঁরা ১.৪০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন জোগাড় করেছেন। ট্রেন চালনা সংক্রান্ত কাগজ বাইরে ছাপা হলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তাঁরা। ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘পরিকাঠামো থাকলেও কাজের সুযোগ না দিয়ে সংস্থাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। সম্পত্তি বিক্রিই ওদের লক্ষ্য ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy