Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Shalimar

Shalimar Coconut oil: বঙ্গ সংস্কৃতি আর গুণমানকে দেশের সামনে এনেছিলেন বাঙালি ব্যবসায়ী প্রকৃতিনাথ

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতে তখন চারপাশে অশান্ত সময়। কিন্তু ২৩ বছরের প্রকৃতিনাথ তার পরোয়া না করেই ঠিক করেন, ব্যবসা করবেন।

প্রকৃতিনাথ ভট্টাচার্য।

প্রকৃতিনাথ ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ১৫:০৬
Share: Save:

বাঙালিরা নাকি ভাল ব্যবসায়ী হতে পারে না! বাঙালি মানেই গোলগাল সুখী-সুখী মানুষ। যারা মাথা খাটাতে পারে কিন্তু গায়ে-গতরে খাটতে পারে না। বাঙালিদের নিয়ে এমন ধারণা পোষণ করেন এক শ্রেণির অবাঙালিরা। যদিও আট দশক আগে, ভারত যখন আদপে স্বাধীনই হয়নি, তখন এক বাঙালিই দেখিয়ে দিয়েছিলেন, অতি সাধারণ পণ্যকেও কী ভাবে অসাধারণ ভাবে পেশ করা যায়। গ্রাহককে আকর্ষণ করা যায় সেই পণ্য ব্যবহার করতে।

বাংলার ওই ব্যবসায়ীর নাম প্রকৃতিনাথ ভট্টাচার্য। ১৯৪১ সালে নারকেল তেল প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘শালিমার’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। যা বর্তমানে একটি সর্বভারতীয় খাদ্যপণ্যের সংস্থা।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতে তখন চারপাশে অশান্ত সময়। কিন্তু ২৩ বছরের প্রকৃতিনাথ তার পরোয়া না করেই ঠিক করেন, ব্যবসা করবেন। বাংলার সর্বত্র সহজে পাওয়া যায় যে নারকেল তেল, সেই নারকেল তেলকেও ব্র্যান্ডিং করে যে ব্যবসা করা সম্ভব, তা এর আগে আর কোনও বাঙালি ব্যবসায়ী ভাবেননি।

কলকাতার যুবক প্রকৃতিনাথের হাতে তখন মূলধন তাঁর অদম্য সাহসটুকু। আর ইচ্ছে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার। ব্যবসা শুরুর প্রথম চার বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁর কারখানায় তৈরি নারকেল তেলের কৌটো সাইকেলে বোঝাই করে তিনি নিজেই পৌঁছে দিতেন দোকানে দোকানে।

ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে ব্যবসা। তেলের গুণমান বাংলার গ্রাহকদের মন জিতেছে বুঝে প্রকৃতিনাথও আশ্বস্ত হন তাঁর ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে। চেতলার ছোট দু’কামরার ঘরে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। চারবছর পর সেই ঠিকানা বদলায়। উত্তর কলকাতার নারকেলডাঙায় আরও বড় কারখানা তৈরি করেন ওই বাঙালি ব্যবসায়ী। অর্থের জোগান দিয়েছিলেন তাঁর অংশীদার পঞ্চানন মণ্ডল। প্রকৃতিনাথের ব্যবসায়িক বুদ্ধির উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন তিনি।

শালিমার এ ভাবেই এগোচ্ছিল। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যবসায় গতি আসে। সদ্য ইংরেজদের কবলমুক্ত ভারত তখন নিজেদের সংস্কৃতিকে উদ্‌যাপন করার একটি সুযোগও ছাড়ছে না। প্রকৃতিনাথের ব্যবসায়িক মেধা সেই সুযোগ চিনে নিতে দেরি করেনি। দ্রুত শালিমারের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেন তিনি। একের পর হাতে আঁকা বিজ্ঞাপন, যার এক একটি বঙ্গজীবন, বঙ্গসংস্কৃতির ঝকঝকে আয়না। বাঙালির ঠাকুর-দেবতাও স্থান পেয়েছিলেন সেই সব বিজ্ঞাপনে।

প্রকৃতিনাথ সেই সময় একটি নীতি নিয়েছিলেন— এক বিজ্ঞাপন দ্বিতীয়বার ব্যবহার না করার। ফলে একের পর এক নতুন বিজ্ঞাপনের ধারাবাহিক তৈরি হয়। যা আজও সংগ্রাহকদের কাছে অমূল্য।

পরবর্তীকালে বাংলায় যখন রাজনৈতিক অশান্তি তীব্র হচ্ছে, তখন দক্ষিণ ভারতে তেল উৎপাদনের নতুন কারখানা তৈরি করেন প্রকৃতিনাথ। দক্ষিণ ভারতে শালিমারের এই যাত্রা ছিল তাদের ব্যবসার একটি বড় মাইলফলক। কারণ, এর পর ধীরে ধীরে গোটা ভারতে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে প্রকৃতিনাথের শালিমার। যা কালক্রমে নারকেল তেলের পাশাপাশি অন্য খাদ্যপণ্যও প্রস্তুত করতে শুরু করে।

১৯৮৮ সালে প্রয়াত হয়েছেন প্রকৃতিনাথ। তবে ব্যবসায় তাঁর আবেগ ততদিনে সঞ্চারিত হয়েছে তাঁর পরবর্তী প্রজন্মেও। প্রকৃতিনাথের ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর দেখানো পথেই নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Shalimar Coconut Oil Prakritinath Bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy