আরও বেশি কর্মীর কাছে পৌঁছতে চলেছে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা। জানা গিয়েছে, পিএফ পেতে বেতনের ঊর্ধ্বসীমা এখনকার ১৫,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২১,০০০ টাকা হতে চলেছে। অর্থাৎ আগে মাসে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন হলে এই সুবিধা পাওয়া যেত। তার উপরে নয়। এ বার থেকে ২১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন হলেও পিএফের অন্তর্ভুক্ত হবেন কর্মী। খবর, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। নতুন নিয়ম বাস্তবায়িত হলে অবসরের সময়ে কর্মীরা আগের থেকে বেশি টাকা হাতে পাবেন। সেই সঙ্গে বাড়বে পেনশন এবং বিমার সুবিধাও।
পিএফের অছি পরিষদের সদস্য এবং টিইউসিসির সাধারণ সম্পাদক এস পি তিওয়ারি জানান, “কর্মী রাজ্য বিমা প্রকল্পে (ইএসআই) যেমন আরও বেশি কর্মীকে টানার জন্য বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ছে চলতি অর্থবর্ষ থেকে, তেমনই উদ্যোগ কর্মী পিএফে। অনেক দিন থেকে কর্মী ইউনিয়নগুলি দাবি করছিল, আরও কিছু মানুষের পিএফের সুবিধা পাওয়া প্রয়োজন। সে জন্য বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো দরকার। চূড়ান্ত কথাবার্তা চলছে। শীঘ্রই সেই সিদ্ধান্ত হবে।’’
পিএফের অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় কমিশনার রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, “এটা জরুরি ছিল। কারণ, বহু রাজ্যেই ন্যূনতম বেতন ১৫,০০০ টাকার বেশি। পিএফে বেতনের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ২১,০০০ টাকা হলে ন্যূনতম বেতন পান, এমন সব মানুষ এই সুবিধা পাবেন। সামাজিক সুরক্ষার বলয়ে ঢুকবেন একাংশ। এখন ঊর্ধ্বসীমা ১৫,০০০ টাকা হওয়ায় প্রয়োজন থাকলেও একাংশ বঞ্চিত হন।’’
পিএফ পাওয়ার জন্য এক সময়ে বেতনের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৬৫০০ টাকা। অর্থাৎ যাঁদের বেতন ৬৫০০ টাকা পর্যন্ত ছিল, তাঁরাই এই টাকা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। ২০১৪-র ১ সেপ্টেম্বর তা বাড়িয়ে করা হয় ১৫,০০০ টাকা। তাই এখনও বিভিন্ন সংস্থায় যে সব কর্মী ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান, তাঁরাই প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায়। কিছু বিশেষ শ্রেণির সংস্থায় অবশ্য ওই উর্ধ্বসীমা প্রযোজ্য নয়। তবে কোনও কর্মী চাকরিতে যোগদানের সময় তাঁর বেতন ১৫,০০০ টাকার মধ্যে থাকলেও পরে তা বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতনের ১২% টাকা নিয়োগকারীকে বাধ্যতামূলক ভাবে কর্মীর পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হয়। কর্মীর বেতন থেকেও একই হারে টাকা কেটে জমা পড়ে। তবে কেউ চাইলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৫,০০০ টাকার বেশি বেতনেও পিএফ কাটাতে পারেন। তবে ওই অতিরিক্ত টাকার উপর সংস্থার দায় থাকে না। পিএফ পেতে বেতনের উর্ধ্বসীমা ২১,০০০ টাকা করা হলে নিয়োগকারীকে তার উপরেই টাকা কাটিয়ে জমা দিতে হবে।
তিওয়ারি বলেন, এতে প্রথমত, অবসরের সময়ে কর্মীরা অনেক বেশি টাকা হাতে পাবেন। বাড়বে পেনশনও। এখন সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে ১৫,০০০ টাকা বেতনে পেনশন হিসাব হয়। সীমা ২১,০০০ টাকা হলে তার উপর হিসাব হবে। এ ছাড়া, পিএফে জমা টাকার উপর ভিত্তি করে চালু থাকা বিমা প্রকল্পেও (ইডিএলআই) বাড়তি সুবিধা পাবেন সদস্যেরা। বর্তমানে সদস্য কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে এই প্রকল্পের সুবাদে কমপক্ষে ৫০,০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে ৭ লক্ষ টাকা এককালীন হাতে পায় তাঁর পরিবার। ফলে ঊর্ধ্বসীমা ২১,০০০ টাকা হলে এই সুবিধাও বাড়বে বলে দাবি তাঁর।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)