নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
নজর এখন বাজেটে নিবদ্ধ। সাধারণ মানুষের আশা, চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে তাঁদের খানিকটা স্বস্তি দিতে ঝুলিতে কিছু দাওয়াই রাখবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তবে লগ্নিকারীরা একটু সংশয়ে। মূলধনী লাভকর নিয়ে নতুন করে নাড়াচাড়া করবেন না তো নির্মলা? আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সম্পদ কর অথবা উত্তরাধিকারী কর বসাবেন না তো? পরিবর্তন যা-ই আসুক, পছন্দ না হলে তরতরিয়ে ওঠা বাজারে ধস নামতে পারে। শুক্রবার সেনসেক্স যে ৮১ হাজারের ঘর থেকে প্রায় ৭৩৯ পয়েন্ট পড়ে ফের ৮০ হাজারে নেমেছে, তার কিছুটা এই আশঙ্কা থেকেই। নতুন শিখরে ওঠা বাজারে অনেকে লাভের টাকা ঘরে তুলে নিয়েছেন। দেশবাসীর জন্য বাজেটে যদি ভাল কিছু থাকে, তবে তা নতুন কর কাঠামোয় রাখা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন (যা দুই কর কাঠামোতেই পাওয়া যায়) বাড়ানো হতে পারে বলেও আশা অনেকের।
লোকসভা ভোট এবং তার পরে কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে বিজেপি আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। সামনে কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। এ বার সেগুলিতে সাফল্য পাওয়ার জন্য আমজনতাকে খুশি করার মতো নানা রকম প্রস্তাব সীতারামনের বাজেটে থাকতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। এ ছাড়া, অর্থমন্ত্রীকে মাথায় রাখতে হবে শরিক দলগুলির দাবি-দাওয়াও। মাঝখানে শুধু আজকের দিন। কাল সকাল ১১টায় তিনি নতুন সংসদে পেশ করবেন ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেট। প্রাক্-বাজেট চর্চা শেষ হয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন বাজেট-বিশ্লেষণে। বাজার আন্দোলিত হবে মূলত বাজেটের বিভিন্ন প্রস্তাবকে কেন্দ্র করেই। বিভিন্ন আশা-আশঙ্কায় ভর করে আজ শেয়ার সূচক চঞ্চল থাকতে পারে।
খাদ্য-সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ফের লাগামছাড়া। জুনে মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকটা বেড়েছে খুচরো ও পাইকারি, দুই বাজারেই। টানা কয়েক মাস নামার পরে জুনে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি আবার ৫% ছাড়িয়েছে (৫.০৮%)। খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে তা আরও চড়ে ৯.৩৬%। অন্য দিকে, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ মাসে সব থেকে বেশি, ৩.৩৬%। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ১১%। এই পরিস্থিতিতে সুদ কমানোর কথা কেউ মুখেও আনছেন না। বরং বাজেটকে সামনে রেখে একের পর এক দাবি উঠেছে আয়কর কমানোর। যাতে সাধারণ মানুষের পকেটে একটু বেশি টাকা-পয়সা থাকে এবং কেনাকাটা বাড়াতে পারেন তাঁরা।
তবে লগ্নি বাড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডে। গত ছ’মাসে সেখানে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ কোটি টাকা। ফলে ফান্ডে মোট সম্পদ বেড়ে পৌঁছেছে ৬১.১৫ লক্ষ কোটিতে। উঁচু করের হার এবং বাজারে পণ্যের চড়া দামের মোকাবিলা করতে বেশি আয়ের খোঁজে এখন বহু মানুষ ফান্ডের লগ্নিতে ঝুঁকছেন। সে ক্ষেত্রে স্বল্প বিত্তের মানুষ সাধ্যের গিয়ে বাড়িয়ে কিছুটা বাধ্য হয়ে ফান্ড-শেয়ারের লগ্নিতে ঝুঁকছেন কি না, এই প্রশ্নও উঠছে। কারণ, এই ধরনের লগ্নিতে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, ঝুঁকি অত্যধিক।
জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু সংস্থার চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) আর্থিক ফল। সব থেকে ভাল ফল করেছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। টিসিএস, এইচসিএল টেক-এর পরে ইনফোসিসের নজরকাড়া মুনাফা হয়েছে। উইপ্রোর ফলও ভাল হয়েছে। এপ্রিল-জুনে ইনফোসিসের লাভ ৭% বেড়ে পৌঁছেছে ৬৩৬৮ কোটি টাকায়। পর পর ভাল ফল আসতে থাকায় বৃহস্পতিবার ৬২৭ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স নতুন নজির গড়ে। প্রথমবার সূচকটি ঢুকে পড়ে ৮১ হাজারের ঘরে। একই দিনে ২৪,৮০০ অঙ্কে পৌঁছে রেকর্ড গড়ে নিফ্টিও।
এ ছাড়া, ভাল আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্ক। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ৩৫% বেড়ে পৌঁছেছে ১৬,১৭৫ কোটি টাকায়। ৮১% বেড়ে কোটাক ব্যাঙ্কের লাভ ছুঁয়েছে ৬২৪৯ কোটি। আরবিএল এবং ইয়েস ব্যাঙ্কেরও তা যথাক্রমে ২৯% এবং ৪৬% বেড়েছে। প্রায় ১৪% বেড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা পৌঁছেছে ৩৬৭৯ কোটি টাকায়। হিসাবের খাতা পোক্ত হয়েছে বজাজ অটোরও। লাভ ১৯% বেড়ে হয়েছে ১৯৮৮ কোটি টাকা। তবে একটু হলেও হতাশ করেছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়। দেশের এই বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থার নিট লাভ ৫.৪% কমে নেমে এসেছে ১৫,১৩৮ কোটি টাকায়। ফলাফলের প্রভাব ইতিমধ্যেই বাজারে পড়তে শুরু করেছে। ভাল রকম দাম বেড়েছে বেশ কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারের। শনিবার যারা ফল প্রকাশ করেছে, তাদের শেয়ারের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে আজ বাজার খুললে।
১২ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে নতুন নজির গড়েছে ভারতের বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার। প্রায় ৯৭০ কোটি ডলার বেড়ে পৌঁছেছে ৬৬,৬৮৫ কোটিতে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy