Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sensex

Share Market: নতুন বছরে বাজারের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ওমিক্রন

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:১০
Share: Save:

বার বার করোনার কামড়ে বাজারে ছোট-বড় পতন হলেও, ২০২১ সালটা কিন্তু মোটের উপরে লগ্নিকারীদের হাত ভরিয়ে দিয়েছে। সুযোগ করে দিয়েছে ভাল আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির। বছরের শেষে সারা বিশ্বের পাশাপাশি ওমিক্রন ভারতে আঘাত হানলেও, তা কিন্তু বুলদের বাজার থেকে পুরোপুরি হটাতে পারেনি। বস্তুত, গত শুক্রবার সেনসেক্স ৪৬০ পয়েন্ট বেড়ে বছর শেষ করেছে ৫৮,২৫৪ অঙ্কে। আগের বছর একই দিনে সূচকটির অবস্থান ছিল ৪৭,৭৫১। অর্থাৎ, এক বছরে বাজার উঠেছে ১০,৫০৩ পয়েন্ট বা প্রায় ২২%। একই সময়ে নিফ্‌টি ১৩,৯৮২ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ১৭,৩৫৪ অঙ্কে পৌঁছেছে।

অক্টোবরে একটা সময়ে ৬২ হাজারের ঘরে ঢুকে পড়েছিল সেনসেক্স। সর্বোচ্চ সেই অবস্থানের থেকে সূচকটি এখন প্রায় ৭% নীচে। কিন্তু মোটের উপরে বড় শেয়ারগুলি (লার্জ ক্যার) এখনও যথেষ্ট ভাল উচ্চতায় রয়েছে। ভাল রকম বেড়েছে ছোট এবং মাঝারি মাপের শেয়ারগুলিও। ২০২১ সালে মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপ সূচক বেড়েছে যথাক্রমে ৫৮.৫% এবং ৬৬%।

তা ছাড়া, নতুন ইসুর দিক থেকেও ২০২১ সালটি ছিল শ্রেষ্ঠ বছর। গত বছর বাজারে প্রথম বার শেয়ার (আইপিও) ছেড়ে রেকর্ড সংখ্যক সংস্থা মোট ১.২০ লক্ষ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছে। যা নতুন নজির। এর আগে ২০১৭ সালে সব মিলিয়ে ৬৮,৭২৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল সংস্থাগুলি। এ দফায় সফল আইপিও-র সংস্থার তালিকায় রয়েছে জ়্যোম্যাটো, নায়কা, পলিসি বাজার ইত্যাদি। আবার পেটিএম এ যাবৎ বৃহত্তম ইসু (১৮,৩০০ কোটি টাকা) বাজারে আনলেও তা লগ্নিকারীদের লাভের মুখ দেখাতে পারেনি। নথিভুক্ত হওয়ার মাত্র দু’দিনের মধ্যে এই শেয়ারের দাম ইসুর দামের তুলনায় ৩৭% তলিয়ে যায়। ২১৫০ টাকায় বাজারে ছাড়া শেয়ারটি বছর শেষ করেছে ১৩৩৪ টাকায়। কবে শেয়ারটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে সম্পর্কে এখনও কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই।

এখন প্রশ্ন, ২০২২ সাল লগ্নিকারীদের পক্ষে কেমন যাবে। বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এ বার সম্ভবত ২০২১-এর পুনরাবৃত্তি হবে না। বরং মাঝে মধ্যে মাঝারি থেকে বড় সংশোধন দেখা দিতে পারে বাজারে। রিটার্ন দিলেও তা গত বছরের মতো হাত ভরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। ওমিক্রনের সংক্রমণ মাথাচাড়া দেওয়া ছাড়াও যে সমস্ত কারণে বাজার কিছুটা শঙ্কিত তা হল:

• সারা বিশ্বের মূল্যবৃদ্ধির দৈত্যের মাথাচাড়া দেওয়া।

• আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা।

• করোনার কারণে উৎপাদন, চাহিদা এবং ব্যবসায়িক কাজকর্মে আঘাত।

• পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের আর্থিক ত্রাণ গুটিয়ে আনার পরিকল্পনা।

• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ফের মাথা তোলা।

বিশেষজ্ঞদের অন্য একটি অংশ অবশ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আশাবাদী। তাঁরা মনে করছেন, বিভিন্ন আশঙ্কা সত্ত্বেও বাজার একেবারে তলিয়ে যাবে না। বরং অর্থনীতি থেকে ভাল খবর এলে তা মাঝে মধ্যেই মাথা তুলবে। সেই মূলধন ইতিমধ্যেই বাজারে রয়েছে। যেমন, নভেম্বরের পরে ডিসেম্বরেও জিএসটি বাবদ ভাল অঙ্কের টাকা এসেছে কেন্দ্রের কাজকোষে। অনেক শিল্প ক্ষেত্রই ফিরতে পেরেছে করোনার আগের অবস্থায়। সেমিকনডাক্টর চিপের অভাবের ফলে চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি তৈরি করা যায়নি। ফলে চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি গাড়ি শিল্প। কিন্তু অন্য দিকে আবাসনের চাহিদা গত কয়েক মাসে অনেকটাই বেড়েছে। এই সব পরিসংখ্যান অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।

কিন্তু এত কিছুর পরেও নতুন বছরে অর্থনীতির সব চেয়ে বড় মাথাব্যথা হতে চলেছে ওমিক্রন। যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। দেশের বিভিন্ন অংশে নতুন করে চালু হতে শুরু করেছে কড়া কোভিড বিধি। রবিবার এই সংক্রান্ত ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গও। ফের বন্ধ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন স্থান ইত্যাদি। যানবাহন পরিষেবাতেও রাশ টানা হচ্ছে। কোনও কোনও রাজ্যে আংশিক লকডাউনের কথাও ভাবা হচ্ছে। এই ধরনের পদক্ষেপ করতে হলে কিন্তু ফের উৎপাদন ধাক্কা খাবে। নতুন করে কাজ হারাতে পারেন অনেক মানুষ। বিশেষ করে হোটেল, রেস্তরাঁ এবং পর্যটন শিল্পে। সব মিলিয়ে এখন আশা-নিরাশায় দুলবে বাজার। অর্থাৎ, নতুন বছরের শুরুতে বাজারের অস্থির থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

Sensex Share Market Omicron
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy