জুনের রফতানি শুধু যে কমল তা নয়। যেখানে বেশি রোজগার, সেখানেই পড়ল কোপ।
এমনিতেই বেকারত্ব নিয়ে নাস্তানাবুদ নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তাদের প্রথম জমানায় লোকসভা ভোটের প্রচার পর্যন্ত এ নিয়ে নাগাড়ে কেন্দ্রকে বিঁধেছে বিরোধীরা। দ্বিতীয় বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লির মসনদে ফিরলেও সেই কর্মসংস্থানের গেরো যে তাদের পিছু ছাড়েনি, তা স্পষ্ট হল ফের। সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে খোদ বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান জানিয়েছে, জুন মাসে দেশের রফতানি ৯.৭১% কমেছে। আর তার থেকেও বড় চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে, যেখানে বেশি সংখ্যায় শ্রমিক নিয়োগ হয়, সেই সব শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রেই রফতানি কমে যাওয়া। ফলে খোদ সরকারের অন্দরমহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিদেশে বিক্রি কমার সঙ্গে সঙ্গে এ বার প্রচুর কর্মী-শ্রমিক রোজগার হারাতে পারেন। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমনিতেই রফতানিকারী সংস্থাগুলি বরাত পেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঠিকায় শ্রমিক নিয়োগ করে। রফতানি মার খেলে বহু মানুষ কাজ হারাতে পারেন।’’
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, রত্ন-অলঙ্কার, চামড়া, পেট্রোপণ্য, সুতো ও তাঁত শিল্প, কার্পেট, সমুদ্রজাত পণ্যের মতো অধিকাংশ শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রে জুনের রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেকখানি কমেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রে রফতানি বাড়াতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘রফতানি বন্ধু’-র মতো একাধিক প্রকল্প চালু করে। তার পরেও বিদেশে বাণিজ্য এতখানি ধাক্কা খেল কেন?
ধাক্কা কোথায় কত
পণ্য আমদানি কমল*
রত্ন-অলঙ্কারে— ১০.৬ ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য— ২.৬ সুতো, তাঁতজাত পণ্য— ১৯.৭ হস্তশিল্প, হাতে তৈরি কার্পেট— ১২.৫ কার্পেট— ৫.১ চাল— ২৮.০৫ অন্যান্য খাদ্যশস্য— ৪৪.৪ তামাক— ১৭.১
*শতাংশ
বাণিজ্য মন্ত্রক এ জন্য দীর্ঘ দিন ধরে চলা মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজারের অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছে। দাবি করেছে, এ সবের জেরে বিশ্ব অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ার পাশাপাশি কমে গিয়েছে চাহিদাও। ফলে ভুগছে দেশীয় রফতানি। ভাটার টান চাল, অন্যান্য খাদ্যশস্য, তামাক, তৈলবীজের মতো কৃষিজাত পণ্যেও।
উঠছে প্রশ্ন
ক্ষমতায় এসেই মোদী সরকার যে রফতানি বাড়াতে নানা প্রকল্প আনল, তাতে লাভ কী হল? এ ভাবে কাজ কমলে কি প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি তৈরির স্বপ্ন ধাওয়া করা যাবে? রুজি-রোজগারের সমস্যা সামলানোর রাস্তা কী? চাহিদা বাড়ানোর দিশা কোথায়?
একাংশের মতে, রফতানি মার খাওয়ার অন্যতম আর একটি কারণ ইরানের উপর জারি হওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও। কারণ এর জেরে ওই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে বিস্তর সমস্যায় পড়েছে ভারত। যে জায়গা এ দেশের চাল, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ওষুধের মতো পণ্যের বড় মাপের বাজার। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, এই রুজি-রোজগারের সমস্যা সামাল দেওয়া হবে কীভাবে?
বস্তুত, মোদী জমানায় বেকারত্ব ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হারে পৌঁছেছে বলে মেনেছে খোদ কেন্দ্র। রফতানিকারীদের সংগঠন ফিয়োর সভাপতি শরদ কুমার সরাফ বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক অতীতে সমস্ত শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রে পণ্য রফতানি কমার ঘটনা এই প্রথম।’’
ভারতের মোট রফতানিতে শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রগুলির ভাগ ৪০ শতাংশের উপরে। ফলে অর্থনীতির এই বিরাট অংশের রোজগার কমলে, এমনিতেই কমতির দিকে থাকা দেশের বাজারের চাহিদা আরও কমে যাবে। তার উপরে জুনে আমদানিও প্রায় ৯% কমেছে। তার থেকেও স্পষ্ট, এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বাজারে কতখানি ধাক্কা খেয়েছে চাহিদা।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘জানুয়ারি-মার্চে বৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমেছিল। যার মূল কারণ ছিল বাজারে চাহিদা কমার ফলে কেনাকাটা তলানিতে ঠেকা ও সেই সঙ্গে বেসরকারি লগ্নিতে টান। এ বার জুনে আমদানি কমার অর্থ চাহিদা আরও কমেছে ও এপ্রিল-জুনেও অর্থনীতিতে বিশেষ উন্নতি হয়নি। মন্দার মেঘ ভালই জমছে বলে মনে হচ্ছে।’’
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘বেশ কিছু সময় ধরেই গুরুতর আর্থিক সঙ্কটের লক্ষণ ফুটে উঠছে। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে তা ক্রমাগত অস্বীকার করা হচ্ছে। অর্থনীতির এই গভীর সঙ্কটের জন্য কে দায়ী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy