কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। —ফাইল চিত্র।
বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির মসনদে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব দাবি করলেন, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে ২০১৪ থেকে ন’বছরে ১.২৫ কোটি নতুন চাকরি হয়েছে। কর্মসংস্থানের এই পরিসংখ্যানকে মোদী সরকারের কৃতিত্ব হিসেবেই তুলে ধরেছেন তিনি। এমনকি এর প্রমাণ হিসেবে তিনি কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির তথ্যও দেন। যদিও শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে একমত নন কর্মী মহল এবং আর্থিক বিশেষজ্ঞের একাংশ।
গত সপ্তাহে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর দাবি ছিল, কংগ্রেস সরকার দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা তৈরি করেছিল। কিন্তু মোদীর আমলে সেগুলিরই অবস্থা শোচনীয় হয়েছে। ৭টি সংস্থায় কাজ গিয়েছে ৩.৮৪ লক্ষ জনের। চুক্তি এবং ঠিকা-কর্মীর সংখ্যা ১৯% থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ৪২ শতাংশে। এ নিয়ে কেন্দ্রকে বেঁধেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, কেরলের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ়্যাকও। রাহুল গান্ধীর তোপ, যাঁরা বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তাঁদের আমলেই বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় দু’লক্ষ মানুষের কাজ গিয়েছে। তরুণ প্রজন্মের আশা-ভরসাকে ধ্বংস করছে এই সরকার।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে এ ভাবে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে সুর আরও চড়ছে। এ দিন বিরোধীদের সমালোচনার উত্তর দিতেই মাঠে নামেন ভূপেন্দ্র। তিনি এক সাংবাদিক বৈঠকে দেশে নতুন চাকরির সংখ্যা বাড়ার দাবি করে বলেন, কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) ২০১৪-১৫ সালে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫.৮৪ কোটি। ২০২১-২২ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭.৭৩ কোটি। শুধু গত এপ্রিলেই নিট হিসাবে পিএফে নথিভুক্তি বেড়েছে ১৭.২০ লক্ষ। যাদব জানান, পিএফের আওতায় থাকা ২২ লক্ষ অবসর নেওয়ার পরেও মোট সদস্য বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের অবশ্য বক্তব্য, এর থেকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়টি বোঝা যায় না। আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘২০ জন কর্মী না থাকলে কোনও সংস্থা পিএফের আওতায় আসে না। ধরা যাক, একটি সংস্থায় ১৮ জন কর্মী ছিলেন। পরে ২ জন নতুন কাজ পেতেই সংস্থাটি পিএফের আওতায় এল। এতে পিএফের মোট সদস্য বাড়ল। তবে ২০ জনের নতুন কর্মসংস্থান হল বলা যাবে না। অনেকে পিএফের আওতায় আসার পরে চাকরিও হারিয়েছেন। ওই তথ্যও পিএফের সদস্য সংখ্যা দেখে বোঝায় যায় না। কারণ, কারও চাকরি চলে গেলে বা তিনি অবসর নিলেও, তাঁর অ্যাকাউন্ট নম্বর নতুন সদস্যকে দেওয়া হয় না। মোট সদস্য সংখ্যার মধ্যে সেগুলি থাকে।’’
সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, “দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করছে সরকার। পিএফের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির নজির তুলে ধরছেন মন্ত্রী। অথচ এমন বহু সংস্থা আছে যেখানে ২০ জনের বেশি কর্মী থাকলেও, কেউ পিএফ পাচ্ছেন না। পিএফ আদতে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরছে। অনেক ক্ষেত্রেই ইউনিয়নগুলি উদ্যোগী হয়ে ওই সব কর্মীকে পিএফে শামিল করে। তখন সদস্য বাড়ে। কিন্তু তাতে দেশে বেকারত্বের হার কমে না।’’
বস্তুত, দেশে মূলত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্বের হার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। সিএমআইই-র সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, গত মাসে দেশে বেকারত্বের হার যে কমেছে, তার অন্যতম কারণ হল বহু মানুষ কাজ খোঁজাই ছেড়ে দিয়েছেন। দেশে মোট কর্মীর ৯০ শতাংশই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন জানিয়ে এ দিন যাদব বলেন, ‘‘অসংগঠিত শ্রমিকদের রেকর্ড রাখার মাধ্যম ই-শ্রম পোর্টালে ৩০ কোটি নথিভুক্ত হয়েছেন। যাঁরা ৪০০ ধরনের পেশার সঙ্গে ষুক্ত। নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংগঠিত এবং অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কল্যাণেই কাজ করে। কফি, রবার, চা এবং লিচু বাগানের কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বার যাঁরা রাস্তায় কাগজ কুড়োন, তাঁদের আলাদা শ্রেণি হিসেবে চিহ্নিত করতে দফতরের অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে গত ৯ বছরে ১.৩৯ কোটি খালি পদ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বলেও দাবি তাঁর।
বিরোধীদের অবশ্য তোপ, বেসরকারি সংস্থা কর্মী নিচ্ছে না। বহু মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সরকারের সাহায্য নিয়ে চাকরি তৈরি করতে পারলেও, সেটা হচ্ছে না। উল্টে সরকারি চাকরি মুছে ফেলা হচ্ছে। ঋণ মকুবের সুবিধা নিয়ে ফায়দা লুটছেন শুধু কিছু শিল্পপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy