প্রতীকী ছবি।
অঙ্কের বিচারে দেশের দুই প্রধান সূচক সেনসেক্স ও নিফ্টি এখন যথেষ্ট উঁচু জায়গায়। কিন্তু ভুললে চলবে না, বাইরে থেকে যেমনই মনে হোক না কেন, বাজারের স্বাস্থ্য কিন্তু এখন মোটেও ভাল নয়। দেশে শক্তিশালী সরকার তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অর্থনীতি যেন কিছুটা ঝিমিয়ে।
বাজারে নগদের জোগান কম। বেশ কিছু পণ্যের চাহিদায় ভাটা। বিক্রি কমছে সব রকম গাড়ির। এর প্রভাব পড়ছে অন্যান্য শিল্পেও। ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির (এনবিএফসি) আর্থিক অনিয়মের ঘটনা সামনে আসছে। এদের কেউ কেউ লগ্নিকারীদের টাকা ফেরাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সেবি ও কোম্পানি মন্ত্রক কঠোর হচ্ছে তাদের অডিটর এবং মূল্যায়ন সংস্থার বিরুদ্ধে। ফলে কিছু বেসরকারি সংস্থায় লগ্নির ব্যাপারে আস্থা কমেছে মানুষের। অনেকে ফের ডাকঘর এবং ব্যাঙ্কমুখো হচ্ছেন। যেখানে রিটার্ন কম হলেও নিশ্চয়তা আছে।
আগেই বলেছি, শেয়ার সূচকের উচ্চতা সব সময়েই বাজারের ভাল স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত দেয় না। এই মুহূর্তে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারির দরকে ভিত্তি হিসেবে ধরে শেয়ারের উপরে মূলধনী লাভকরের হিসেব কষা হয়। এখন সূচক সেই সময়ের তুলনায় উপরে থাকলেও বেশির ভাগ শেয়ারই কিন্তু পড়ে আছে সেই সময়ের দামের নীচে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলি আগের তুলনায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছয়নি। ভাটা চলছে নতুন শিল্প এবং বাজারে প্রথম শেয়ারেও (আইপিও)।
এরই পাশাপাশি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টানা তিন বার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে রেপো রেট কমালেও অনুৎপাদক সম্পদের চাপে নুয়ে পড়া ব্যাঙ্কগুলি তার সুবিধা বিশেষ পৌঁছে দিতে পারেনি শিল্প এবং ঋণগ্রহীতার ঘরে। এরই মধ্যে কিছুটা স্বস্তির খবর, মে মাসে ফের কমেছে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার। হয়েছে ২.৪৫%, যা ২২ মাসের মধ্যে সব চেয়ে কম। অদূর ভবিষ্যতে যদি খুচরো মূল্যবৃদ্ধিও কমে, সে ক্ষেত্রে চতুর্থ বার সুদ ছাঁটাইয়ের জন্য চাপ তৈরি হবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপরে। তবে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার এই ভাবে কমে আসা কিন্তু এক অর্থে চাহিদা ঝিমিয়ে পড়ার লক্ষণ।
এরই মধ্যে আমেরিকা ও চিনের পাশাপাশি ভারতও কিছুটা সামিল হল শুল্ক যুদ্ধে। কিছু ভারতীয় পণ্যের উপরে আমেরিকা চড়া হারে আমদানি শুল্ক বসানোর প্রতিবাদে দিল্লিও ২৮টি মার্কিন পণ্যের উপরে শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছে। শুল্ক যুদ্ধ কিন্তু সামগ্রিক ভাবে আমাদের অর্থনীতির পক্ষে শুভ নয়।
সমস্যা আছে বর্ষাকে কেন্দ্র করেও। আশঙ্কা, এ বার পর্যাপ্ত বর্ষা কিংবা তার সুষম বণ্টন না-ও হতে পারে। এটা হলে কিন্তু অর্থনীতির কাছে তা বড় বিপদ হিসাবে দেখা দিতে পারে।
এত রকম সমস্যা মাথায় নিয়েই ৫ জুলাই পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছে দ্বিতীয় দফার মোদী সরকার। সমস্যা থাকলেও বাজেট থেকে শিল্প এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও কিন্তু কম নয়। করের বোঝা কমবে এই আশা অনেকেরই। নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই চাপ সামলান, তা-ই এখন দেখার।
জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের ফল প্রকাশ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য কিছুটা ঝিমিয়ে থাকায় ওই সময়ে সামগ্রিক ফলাফল তেমন ভাল না-ও হতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy