Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঋণ নিচ্ছেন? আপনার সিবিল স্কোর চেক করেছেন তো?

ফ্ল্যাট কিনতে ঋণ হোক বা গাড়ি কেনার জন্য ধার। সহজে ঋণ পেতে কিন্তু আগের ধার শোধের ইতিহাস যতটা সম্ভব ঝকঝকে রাখতে হবে আপনাকে। বেশি তুলে রাখতে হবে ক্রেডিট স্কোর। তাই হাতের সামনেই সিবিলের রিপোর্ট রাখার কথা মনে করাল বিষয় আশয়ফ্ল্যাট কিনতে ঋণ হোক বা গাড়ি কেনার জন্য ধার। সহজে ঋণ পেতে কিন্তু আগের ধার শোধের ইতিহাস যতটা সম্ভব ঝকঝকে রাখতে হবে আপনাকে। বেশি তুলে রাখতে হবে ক্রেডিট স্কোর।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০৪:১০
Share: Save:

কয়েক দিন আগের কথা। বাড়ি কেনার জন্য ব্যাঙ্কে ধার নিতে গিয়েছেন এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। কিন্তু তিনি যত টাকার ধার চাইছেন, ব্যাঙ্ক তা দিতে নারাজ। কারণ, ধার শোধে তাঁর অতীত রেকর্ড না কি তেমন ভাল নয়। ঋণ পেতে ওই রেকর্ড এবং তার উপরে ভিত্তি করে পাওয়া নম্বর (স্কোর) এত গুরুত্বপূর্ণ বলেই সিবিলের ক্রেডিট রেটিং (ঋণের মূল্যায়ন) নিয়ে ফের এক বার আলোচনায় বসা জরুরি। বিশেষত েযখানে ধার দেওয়ার বিষয়ে এখন অনেক বেশি সতর্ক অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় জেরবার ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। মাঝের ক’বছরে পাল্টেছে সিবিলের নিয়মও।

সিবিল কী?

সোজা কথায়, ঋণের তথ্য ভাণ্ডার। যখন আমি-আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি অথবা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিই, তখন তার হিসেব জমা পড়ে সিবিলের খাতায়। যে ঋণ চলছে, আগে যে ধার নেওয়া হয়েছে, ঋণ নিয়মিত মেটানো হচ্ছে কি না, কত টাকা বাকি— এই সমস্ত তথ্যই লেখা থাকে সেখানে। আবার ধরুন, কোনও ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কে গেলাম। তখন ব্যাঙ্ক আমাদের আগেকার ঋণের তথ্য জানার জন্য সিবিলের দ্বারস্থ হল। এই যে তারা খোঁজখবর নিল, সেই তথ্যও দেখতে পাওয়া যাবে সিবিলের খাতায়। জানা যাবে কোনও ঋণ বাতিল হয়েছে কি না, তা-ও।

দুই ভাগ

সিবিলে ঋণগ্রহীতা বা ধার নিতে আগ্রহীর যে তথ্য পাওয়া যায়, তার মূলত দু’টি ভাগ থাকে।

প্রথমত, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রাহকদের (ব্যক্তি এবং সংস্থা) ধার সম্পর্কে নানা তথ্য নিয়মিত জমা দেয় সিবিলের ভাণ্ডারে। প্রতি মাসে ওই তথ্য যাচাই করে ঋণগ্রহীতাদের প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট রিপোর্ট তৈরি করে সিবিল। এই রিপোর্ট পরিচিত ক্রেডিট ইনফর্মেশন রিপোর্ট বা সিআইআর নামে।

দ্বিতীয়ত, এই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রত্যেক ঋণগ্রহীতাকে নম্বর দেয় সিবিল। একে বলে সিবিল স্কোর। যা ৩০০ থেকে ৯০০-র মধ্যে হয়। যাঁদের নম্বর যত ভাল, তাঁর ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি, সহজও। সাধারণত ৭৫০-এর বেশি নম্বরকে ঋণ দেওয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

কেন দরকার

সিবিলের তথ্য শুধু ব্যাঙ্কের প্রয়োজন নয়। তা আমার-আপনারও জানা একান্ত জরুরি। কারণ—

• সিবিলের খাতায় থাকা ঋণের ইতিহাসের উপরেই ভবিষ্যতে ধার পাওয়া অনেকটা নির্ভর করে। তাই আগামী দিনে নতুন করে ঋণ পেতে আমি-আপনি কতটা যোগ্য, তা জানার জন্য এই রিপোর্ট দেখা দরকার।

• গাড়ি-বাড়ি কেনা বা উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ আমরা অনেকেই নিই। ক্রেডিট কার্ডে কিছু কেনা মানেও কিন্তু সেই ধার করা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার পুরো বকেয়া না মেটালে, তার উপরেও সুদ গুনতে হয়। ফলে সেই ধারের টাকা নিয়মিত শোধ হচ্ছে কি না, তা জেনে রাখা দরকার। জানতে হবে, কোনও ধার বাকি আছে কি না, তা-ও। বিশেষত একাধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে।

• ধরুন আপনি জানেন কোনও ধার নেননি অথবা ধার বাকি নেই। তবে আপনার নামে জালিয়াতি হচ্ছে কি না, বুঝবেন কী করে। সে জন্যও এই রিপোর্ট দেখা জরুরি।

• এমনিতে এটা ঠিক যে, কোনও ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের আবেদন করার সময়ে সেখান থেকেই এই তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আগে থেকে জানা থাকলে সুবিধা। সে ক্ষেত্রে কোথায়, কতটা ঋণ পাওয়া সম্ভব, তারও একটা আন্দাজ পাওয়া যায়।

• আগে থেকে ঋণের ইতিহাস জেনে রাখলে, পরে ঋণ নেওয়ার সময়ে ঋণদাতার সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে সুবিধা হয়। যদি দেখা যায় নম্বর খারাপ, তা হলে নম্বর বাড়ানোর জন্য বাড়তি উদ্যোগও নেওয়া যায়।

নম্বর বাড়াতে কী?

ছোটবেলায় রেজাল্ট বেরনোর পরে অনেক সময় নিজেদের বলতাম, এ বার খারাপ হলেও পরের বার ভাল করে মন দিয় পড়ব। যাতে নম্বর বাড়ে। সিবিলের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা হলে মুশকিল। এখানে যদি দেখা যায় নম্বর খারাপ, তা হলে সেই দিন থেকেই তা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য কিছু জিনিস মেনে চলতে পারেন—

• সময়ে শোধ: ক্রেডিট কার্ডই হোক বা বড় অঙ্কের ঋণ— টাকা সব সময়ে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে মেটানোর চেষ্টা করতে হবে। বিশেষত ক্রেডিট কার্ডে অনেক সময়েই প্রবণতা থাকে ন্যূনতম টাকা দিয়ে বাকিটা আর সঙ্গে সঙ্গে না-মেটানোর। কিন্তু আসলে তা ঋণদাতাদের কাছে খারাপ বার্তা দেয়।

• সীমা বাঁধুন: ধার দিতে চেয়ে ব্যাঙ্কগুলির ফোন আসে হামেশাই। কিন্তু ঋণ মিলছে বলেই বেশি করে নেব এই প্রবণতা ছাড়তে হবে। চেষ্টা করা উচিত আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে তা বেঁধে রাখার।

• ঋণে সামঞ্জস্য: সাধারণত বাড়ি, গাড়ি ঋণের মতো ধারগুলি ‘সুরক্ষিত’। কারণ, এর বদলে সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়। সেই তুলনায় ব্যক্তিগত ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডকে বেশি ঝুঁকির ধরা হয়। ঋণদাতারা কিন্তু দেখে ঝুঁকি ও তুলনায় সুরক্ষিত ঋণের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রয়েছে কি না। যেমন, কথায় কথায় ক্রেডিট কার্ডের ধার বাজে খরচের প্রবণতাকে তুলে ধরে।

• দিলেই নেব না: ঘন ঘন ঋণের জন্য আবেদন করাকে ভাল চোখে না দেখে না ঋণদাতারা। তাই সতর্ক হতে হবে।

• গ্যারান্টি দিলেও নজর: নিজে প্রথম গ্রহীতা হিসেবে ধার না-নিলেও, হয়তো অন্য কারও ঋণে গ্যারান্টার হয়েছেন অথবা দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যৌথ ভাবে ধার নিয়েছেন। এই সব ক্ষেত্রে আপনি সরাসরি ধার শোধের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু অন্য ব্যক্তির ধার নিয়ম করে না-মেটানোর প্রভাব আপনার সিবিল স্কোরেও পড়বে। তাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

• নিয়মিত পরীক্ষা: ধারের অবস্থা কী রকম, তার জন্য নিয়মিত রিপোর্ট পরীক্ষা করতে হবে। কোনও সমস্যা হলেই তা জানাতে হবে।

রিপোর্টে কী থাকে?

সাধারণত ক্রেডিট রিপোর্ট ছ’টি ভাগে বিভক্ত—

• সিবিল স্কোর: আগেই বলেছি তা ৩০০ থেকে ৯০০ পর্যন্ত হতে পারে।

• ব্যক্তিগত তথ্য: এতে থাকে প্যান, ঋণগ্রহীতার নাম, জন্মদিন, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদির বিবরণ।

• যোগাযোগের ঠিকানা: এখানে প্রাক্তন এবং বর্তমান ঠিকানা, ফোন/ মোবাইল নম্বর, ই-মেল ইত্যাদি থাকে।

• পরের অংশে থাকে চাকরি ও আয়ের অন্যান্য সূত্রের তথ্য। ঋণ নেওয়া বা ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করার সময়ে যে চাকরি বা ব্যবসার কথা জানানো হয়, তা দেখা যায়।

• অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য: এর বিভিন্ন ভাগ থাকে। যেমন—

♦ কোন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথবা কাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয়।

♦ সেই ঋণ কী ধরনের (গৃহ, গাড়ি, শিক্ষা, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি)।

♦ ঋণ একার নেওয়া না যৌথ ভাবে?

♦ কবে ঋণের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, ধারের অঙ্ক কত, শেষ কবে ঋণের টাকা শোধ করা হয়েছে, আর কত বাকি রয়েছে।

♦ ঋণ শোধ হয়ে গিয়েছে কি না অথবা কোনও আইনি সমস্যা রয়েছে কি না। নাকি সম্পদ থেকে তা মুছে ফেলা হয়েছে (রিটেন অফ) ইত্যাদি তথ্য।

♦ কোনও ঋণে সমস্যা রয়েছে কি না।

• ক্রেডিট কার্ড বা ঋণ নেওয়ার জন্য ফোন বা ই-মেল পাই আমরা। তারাও কিন্তু আমাদের সম্পর্কে জানতে আগে সিবিলেই খোঁজ নেয়। এখানে পাবেন কারা খোঁজ নিয়েছে, সেই তথ্য।

নিখরচায় রিপোর্ট

এখন রিপোর্ট দেখার পদ্ধতির কিছুটা বদল হয়েছে। দু’ভাবে এই রিপোর্ট দেখা যায়। যার মধ্যে একটি হল বছরে এক বার বিনামূল্যে ক্রেডিট স্কোর এবং রিপোর্ট দেখার সুযোগ। এ জন্য সিবিলের ওয়েবসাইটে নিজের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। পুরো বিষয়টিই হয় অনলাইনে। ফলে শুধু কম্পিউটার থাকলেই চলে। সাইটে যে ভাবে তথ্য (প্যান, পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি) চাওয়া হবে, সেই অনুসারে তা দিলে নাম নথিভুক্ত হবে। এখানে পরিচয়ের প্রমাণও দিতে হবে। তার পরেই পাওয়া যাবে রিপোর্ট এবং নম্বর।

চাইলে টাকা দিয়েও

চাইলে যত বার খুশি রিপোর্টও দেখা যায়। কিন্তু তার জন্য অবশ্য টাকা লাগে। এ ভাবে রিপোর্ট দেখার তিনটি প্রকল্প রয়েছে—

• এক মাসের জন্য ৫৫০ টাকা।

• ৬ মাসের জন্য ৮০০ টাকা।

• ১২ মাসের জন্য ১,২০০ টাকা।

এই প্রকল্পগুলিতে চাইলে প্রতিদিনই এক বার রিপোর্ট দেখা যায়।

বাড়তি সুবিধা

টাকা দিয়ে ঋণের তথ্য কিনলে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যায়। যেমন এর মধ্যে রয়েছে—

• স্কোর সিমুলেটর: এতে কোন ধরনের ঋণ, তা শোধের সময় ইত্যাদির প্রভাব কী ভাবে রিপোর্ট এবং ক্রেডিট স্কোরের উপরে পড়ে, তা দেখার সুযোগ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এটা শুধুমাত্র ইন্টারনেট ভিত্তিক পরীক্ষা। এখানে যা বদল হবে, তার জন্য আসলে স্কোর বা রিপোর্টে কোনও প্রভাব পড়ে না।

• আপনার স্কোর এবং রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা।

• নিয়মিত দেখা যায় বলে ধার শোধের পরে কী ভাবে ক্রেডিট স্কোর বা রিপোর্ট বদলাচ্ছে, তা যাচাইয়েরও পর্যাপ্ত সুযোগ মেলে। সেই অনুসারে পরবর্তীকালে ঋণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া যায়। করা যায় পরিকল্পনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Credit Score Loan Cibil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy