Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
GDP

ভরসার সন্ধানে মরিয়া লগ্নিকারী, অস্থির বাজার

শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীরা এখন মনে-প্রাণে চাইছেন একটা ভরসার জায়গা।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:২৬
Share: Save:

বাজার যখন ভাল খবরের জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে, তখন বিরাম নেই প্রতিকূল সংবাদের। যেমন, জুলাইয়ে শিল্পোৎপাদনের ১০.৪ শতাংশে তলিয়ে যাওয়া, বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণ, অর্থনীতির ক্ষত আশঙ্কার তুলনায় আরও অনেক বেশি খারাপ হওয়ার নিদান দিয়ে একের পর এক মূল্যায়ন ও আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থার চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি সঙ্কোচনের পূর্বাভাস বৃদ্ধি, কাজ প্রায় উধাও হওয়ায় পর্যটন বা হোটেলের মতো পরিষেবা শিল্পের প্রায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা ইত্যাদি।

শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীরা এখন মনে-প্রাণে চাইছেন একটা ভরসার জায়গা। যেখানে চোখ রাখলে অনিশ্চয়তার দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া তুলনায় সহজ হয়। কিন্তু সেটা মিলছে না। আর মিলছে না বলেই বাজার অস্থির। যদিও সেনসেক্সের ৩৮ হাজারের উচ্চতাকে নিচু বলা যায় না। তবে অর্থনীতির নানা রকম দুর্বলতাকে যে ভাবে তোয়াক্কা না-করে এক সময় সূচককে উঠতে দেখা গিয়েছে, হালে সেই আত্মবিশ্বাসে যেন ভাটার টান। আসলে এত দিন ভারতীয় শিল্প ও অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে, এই আশায় ভর করে শক্তি ধরে রেখেছিল সেনসেক্স, নিফ্‌টি। করোনার টিকা শীঘ্রই বাজারে ঢুকে পড়বে ভেবেও কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছিল। কিন্তু সম্প্রতি সব আশাতেই হোঁচট খেতে হয়েছে কিছুটা। যেমন—

• এপ্রিল-জুনের জিডিপি সটান ২৩.৯% নেমে যেতেই ফিচ, মুডি’জ়, গোল্ডম্যান স্যাক্স, মর্গ্যান স্ট্যানলি থেকে ক্রিসিল, ইক্রা, কেয়ার রেটিংস অর্থনীতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিতে নেমে পড়েছে মাঠে। সকলের অনুমান মিলিয়ে যা দাঁড়ায়, তাতে গোটা বছরে জিডিপি সঙ্কুচিত হতে পারে ৮ থেকে ১১.৫ শতাংশ। কেয়ারের অনুমান সব থেকে কম, ৮-৮.২ শতাংশ। আগে বলেছিল ৬.৪%। মুডি’জ় বলছে ১১.৫%। আগে বলেছিল ৪%। সুতরাং অর্থনীতির দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর নিশ্চয়তা যে এই মুহূর্তে নেই, পরিষ্কার।

• মার্চ, এপ্রিল, মে, জুনের মতো জুলাইয়েও শিল্পোৎপাদন কমেছে অনেকটা। চাহিদা ও কাজ বাড়ার অন্যতম সূচক কল-কারখানায় উৎপাদন ফের মুখ থুবড়ে পড়েছে। খরচের আগ্রহ মাপার আর এক সূচক, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিনের মতো দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের কেনাকাটা বাড়ার নাম তো নেই-ই, বরং তা তলিয়েছে এতটাই যে উৎপাদন কমেছে প্রায় ২৩%। যদিও আশার কথা, আগের কয়েক মাসের থেকে তুলনায় শিল্পোৎপাদনের হার ভাল। শতাংশের হিসেবে পতনের হার কমেছে। তবে লকডাউন ওঠার পরে শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে বলে যে আশা ছিল, জুলাইয়ে শিল্পের উৎপাদন বুঝিয়েছে সে পথ বহু দূর।

• বাজারে করোনার টিকা আসার দিনও পিছোতে শুরু করেছে, যা মানবজাতির কাছে মোটেও সুখবর নয়।

• তার উপরে সংক্রমণের দৈনিক সংখ্যা প্রায় লাখে পৌঁছনোয় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অনেক শিল্পে।

• স্থানীয় লকডাউনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পণ্য পরিবহণ এবং বিক্রি।

এর জেরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে অত্যাবশ্যক পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কিনতে ভরসা পাচ্ছেন না কেউ। ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শিল্পে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হওয়াতেও বাড়ছে না চাহিদা। শেয়ার বাজারে অনেকেই লগ্নি কমানোর পক্ষে। তেমন সুপারিশও করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এসআইপি-র পথে জুন থেকে অগস্ট, টানা তিন মাস লগ্নি কমেছে মিউচুয়াল ফান্ডে। লগ্নি কমছে শেয়ার নির্ভর ফান্ডগুলিতেও (যে ফান্ডের ইউনিট সব সময় কেনা বা বেচা যায়)।

সরকারের আরও আর্থিক ত্রাণ দেওয়া প্রয়োজন, বলছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তাঁদের বার্তা, মানুষের হাতে টাকার জোগান না-থাকলে পণ্যের চাহিদা বাড়বে না। তার উপরে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যার প্রভাব থাকবে গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজারে। অর্থাৎ অনুমান করা যায়, অস্থিরতা বহাল থাকবে ভারতেও।

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

GDP Economy Industrie Businesses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy