প্রতীকী ছবি।
গত এক মাসে ভাল রকম পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে বিনিয়োগের দুনিয়ায়। করোনাকালে যতটা মনে হয়েছিল, পরিস্থিতি তার থেকে অনেক বেশি খারাপ হয়েছে চলতি অর্থবর্ষের গোড়া থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বিশ্ব জুড়ে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, তাকে রুখতে ঋণে সুদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। ভারতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ৪০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই অন্যান্য ব্যাঙ্ককে ধার দেয়) বাড়ানোর পরে প্রায় সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে ঋণে সুদ ঊর্ধ্বমুখী। এপ্রিলে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি শীর্ষ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ৬% সহনসীমার উপরে উঠে ৭.৭৯% হয়েছে। আশঙ্কা, দামে লাগাম পরাতে জুন ও অগস্টের ঋণনীতি বৈঠকেও প্রায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে রেপো। এটা হলে বাজার আরও বেশি করে ‘বেয়ারদের’ দখলে যাবে। অর্থাৎ সূচক হুড়মুড়িয়ে পড়তে পারে অনেকখানি। তখন তার ধাক্কা বইতে হবে মিউচুয়াল ফান্ডের জগতকেও। প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ লগ্নিকারীরা কী করবেন? তাঁরা যে সব দিকে নজর রাখতে পারেন তা হল—
• ঋণের পাশাপাশি অল্পবিস্তর সুদ বাড়ছে জমাতেও। তবে তা আকর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছয়নি। ভরসা জাগানোর মতো ভূমিকা নিতে পারেনি প্রবীণদের জন্যও। জুনে রেপো রেট ফের বাড়লে আমানতে সুদ হয়তো আরও কিছুটা বাড়বে। অর্থাৎ যে সমস্ত সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে বড় মেয়াদে টাকা রাখতে চান, তাঁরা কিছু দিন অপেক্ষা করতে পারেন।
• জুলাই থেকে বাড়ানো হতে পারে পিপিএফ, এনএসসি-সহ বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ। অপেক্ষা করা যেতে পারে তার জন্যও।
• ব্যাঙ্ক নয় এমন কিছু আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি) এরই মধ্যে তাদের জন-আমানত প্রকল্পে ২০ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে। এখানে জমা টাকার উপরে প্রবীণ মানুষেরা সর্বাধিক পেতে পারেন ৭.৪০%। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো বাড়ালে এখানে সুদ আরও বাড়তে পারে।
• ব্যাঙ্ক ঋণে সুদ বাড়ায় বন্ডে প্রকৃত আয় (ইল্ড) পৌঁছেছে ৭.৫০ শতাংশে। ব্যাঙ্কে সুদ আরও বাড়লে ইল্ড ছুঁতে পারে ৮%। সে ক্ষেত্রে বন্ডে লগ্নির আকর্ষণ বাড়বে। আরবিআই রিটেল ডিরেক্ট স্কিম-এর আওতায় অ্যাকাউন্ট খুলে বন্ড কিনে তা মেয়াদের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যায়। এর মাধ্যমে ভারত সরকারের বন্ড কেনা যায়। এই ফ্লোটিং রেট বন্ডে সুদ ৭.১৫%। এনএসসি-তে সুদ বাড়লে একই অনুপাতে তা বাড়বে এই প্রকল্পেও।
বাজারের আশঙ্কা
• জুনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ এবং নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর, যে টাকা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে জমা রাখতে হয় আরবিআইয়ে) আরও বাড়াতে পারে।
• এর ফলে ঋণে সুদ বাড়লে তা সূচককে আরও টেনে নামাতে পারে।
• পড়তি শেয়ার বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্নও কমার আশঙ্কা।
• আমেরিকা আরও সুদ বাড়ালে আরও বেশি বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থা ভারত ছাড়বে। যা সূচককে আরও দুর্বল করবে।
• তাতে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম আরও পড়বে।
• চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত ভারতের বাজারে ৩৫,০০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত তা ১.৬৩ লক্ষ কোটি টাকা। ডলারে টাকার দাম সব থেকে নীচে।
রুপোলি রেখা
• ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের জমায় ও স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে আরও সুদ বাড়তে পারে। তখন সুরক্ষিত ওই রোজগার বাড়বে।
• বন্ডের ইল্ড ৮ শতাংশে পৌঁছলে সেখানেও লগ্নি আকর্ষণীয় হবে।
• নিচু বাজারে কম দামে ভাল সংস্থার শেয়ার কিনে দীর্ঘ মেয়াদে লাভের জন্য ধরে রাখা সম্ভব। এই সুযোগ নেওয়া যায় প্রতিটি পতনে।
• অনেক ভাল মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পের ন্যাভ কমে আসায় বাজারের প্রত্যেকটি পতনে অল্প অল্প করে লগ্নি করা যেতে পারে।
• এসআইপি শুরু করা যায় পাঁচ বছরের জন্য।
• ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতেই নামতে শুরু করেছিল শেয়ার বাজার। লাগাতার পতনের পরে গত শুক্রবার সেনসেক্স ১৫৩৪ পয়েন্ট উঠে থেমেছে ৫৪,৩২৬ অঙ্কে। সর্বোচ্চ জায়গা (৬১ হাজারের উপর) থেকে সূচক এখনও প্রায় ১২% নীচে। বাজার যত নামবে, ততই তুলনায় কম দামে ভাল সংস্থার শেয়ার কেনার সুযোগ খুলবে লগ্নিকারীদের সামনে। অনেক ভাল শেয়ার গত মাসে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছে। সব সংস্থার আয়-লাভ-ক্ষতির বার্ষিক (২০২১-২২) হিসাবও প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। আর্থিক ফলাফলের নিরিখে সংস্থা বাছাই করে ভাল শেয়ার ঝুলিতে পোরার সুবর্ণ সুযোগ এটাই। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১ থেকে ২ বছর। কেনা যেতে পারে উঁচু হারে ডিভিডেন্ড প্রদানকারী কোম্পানির শেয়ারও। দাম যতদিন না বাড়ে ততদিন অন্তত পক্ষে ডিভিডেন্ড বাবদ কিছুটা রোজগার হবে।
• নিচু বাজারে লগ্নি করা যেতে পারে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ-এ। বাজার অনেকটা ঝুঁকে থাকায় বেশ কম দামে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে শেয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন ইটিএফ। বাজার চাঙ্গা হলেই দর বাড়বে এগুলির।
• বাজার দুর্বল থাকায় একুইটি ফান্ডে এখন একলপ্তে অথবা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি-র পথে লগ্নি করা যায়। লগ্নি করতে হবে ৩ থেকে ৫ বছরের কথা মাথায় রেখে।
• কর বাঁচানোর জন্য লগ্নি করতে চাইলে একুইটি লিঙ্কড সেভিংস বা ইএলএসএস প্রকল্পে একলপ্তে অথবা কয়েক কিস্তিতে টাকা ঢালতে পারেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানেই লগ্নি করা হোক না কেন, জুনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের ঋণনীতিতে সুদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখে নিয়ে এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ততদিন পর্যন্ত টাকা ব্যাঙ্কের ছোট মেয়াদি জমা অথবা লিকুইড ফান্ডে গচ্ছিত রাখা যেতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy