প্রতীকী ছবি।
মাঝে মধ্যে মাথা তোলার চেষ্টা করলেও শেয়ার সূচক এখনও নড়বড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চড়া মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তে থাকা সুদের হার ইত্যাদি কারণে বাজার খুব তাড়াতাড়ি শোধরাবে বলে মনে হয় না। দু’দফায় রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) ৯০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির পরে অগস্টে তা আরও বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। মূল্যবৃদ্ধির হার একটু মাথা নামালে এবং সুদ বাড়ানো বন্ধ হলে তবেই বাজার আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে। যাঁদের লগ্নি করে দীর্ঘ মেয়াদে অপেক্ষা করতে অসুবিধা নেই, তাঁরা নিচু বাজারে বুঝেশুনে ভাল শেয়ার সংগ্রহ করতে পারেন। কেনা যেতে পারে উঁচু ইল্ডযুক্ত শেয়ার।
অর্থনীতির হাল কিছুটা ফিরলে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিও আবার ভারতের শেয়ার বাজারে লগ্নির ঝুলি উপুড় করবে বলে আশা করা যায়। সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সূচক অনেকটা নেমে আসায় কম-বেশি পড়েছে প্রায় প্রত্যেক একুইটি মিউচুয়াল ফান্ড, অর্থাৎ শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের ন্যাভ (নেট অ্যাসেট ভ্যালু)। এই বাজারে এসআইপি পদ্ধতিতে কেনা যেতে পারে ডায়ভার্সিফায়েড (বিভিন্ন শিল্প সংস্থার শেয়ার) একুইটি ফান্ডের ইউনিট। টাকা লাগানো যেতে পারে কর সাশ্রয়কারী ইএলএসএস প্রকল্পে, যা কমপক্ষে তিন বছর ধরে রাখতে হবে। বাজার অনেকটা নেমে থাকায় ধাপে ধাপে কেনা যেতে পারে ইনডেক্স ইটিএফ। যেমন, নিফ্টি ফিফ্টি ইটিএফ, ব্যাঙ্কিং ইটিএফ ইত্যাদি।
এই সময় নজর রাখতে হবে বর্ষার গতিপ্রকৃতি, সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফল, পণ্যের দামের উত্থান-পতন, ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক পরিস্থিতি ইত্যাদির উপরে। শেয়ার বাজার ওঠানামা করবে এই সমস্ত বিষয়ের উপরে ভর করেই। আর লগ্নি করতে হবে সুযোগ বুঝে।
করোনাকালে এবং তার পরেও শেয়ার বাজারকে ভাল রকম শক্তি জুগিয়েছে একুইটি ফান্ড থেকে প্রবাহিত লগ্নি। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি লাগাতার শেয়ার বেচতে থাকায় সূচক আরও অনেকখানি পড়ে যেতে পারত। পড়েনি শুধুমাত্র দেশীয় ফান্ডের বিরাট তহবিল বাজারে খাটতে থাকার কারণেই। তবে এখন বাজার বেশ কিছু দিন ধরে দুর্বল থাকায় এবং ফান্ডের ন্যাভ পড়তে থাকায় সেই লগ্নিতেও ভাটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ পড়ছে মানে রিটার্ন কমছে লগ্নিকারীর, তা বাড়লে লগ্নি করা তহবিল বেড়ে ওঠে। ফান্ডে রিটার্ন কমতে থাকায় এবং ব্যাঙ্কে সুদ বাড়তে শুরু করায় অনেক লগ্নিকারী ফিরছেন নিশ্চিত এবং স্থির আয়যুক্ত প্রকল্পের দিকে। তবে রেপো রেট যতটা বাড়ানো হয়েছে এবং তার জেরে বিভিন্ন ঋণের সুদ যে ভাবে লাফিয়ে বাড়ছে, তার তুলনায় এখনও পর্যন্ত অনেক কম বেড়েছে ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতে সুদের হার।
বড় এবং নামী ব্যাঙ্কে একজন প্রবীণ নাগরিক এখন সুদ পেতে পারেন সর্বাধিক ৬.৫ শতাংশের আশেপাশে। খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার কিন্তু এখনও ৭ শতাংশের উপরে (৭.০৪%)। অন্য দিকে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড ঘোরাফেরা করছে কমবেশি ৭.৫ শতাংশের কাছাকাছি। এই পরিস্থিতিতে জুলাই থেকে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ কিছুটা বাড়তে পারে বলে লগ্নিকারীরা আশা করতেই পারেন। এখন ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে সুদ ৬.৬% এবং জাতীয় সঞ্চয়পত্রে ৬.৮%, যা বন্ড ইল্ড এবং খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারের থেকে অনেকটাই কম। ৩০ জুন জানা যাবে সুদ বাড়ছে কি না।
ব্যাঙ্কগুলি আমানতে যেটুকু সুদ বাড়িয়েছে, তা মূলত ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে। বড় মেয়াদে তেমন বাড়ায়নি সম্ভবত এই ভেবে যে, বছর দুয়েক বাদে তা ফের কমতে পারে। তুলনায় ভাল সুদ দিচ্ছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি)। বিভিন্ন মেয়াদে ব্যাঙ্কের তুলনায় এদের সুদের হার ১৭৫ থেকে ২৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত বেশি। যে সব সংস্থার রেটিং ‘AAA’ (ট্রিপল এ) তাদের জমা প্রকল্পও ভাল লগ্নি টানছে। তবে সুদ যেহেতু আগামী দিনে আরও খানিকটা বাড়তে পারে, তাই দু’এক মাস পরিস্থিতি দেখে নিয়ে বড় সময়ের জন্য লগ্নি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ইয়েস ব্যাঙ্ক দেশের প্রথম ব্যাঙ্ক যারা মেয়াদি জমার সুদকে আরবিআইয়ের রেপো রেটের সঙ্গে যুক্ত করেছে। অর্থাৎ রেপো বাড়লে তাদের ওই এফডি-র হার একটি নির্দিষ্ট হারে বাড়বে, কমলে কমবে।
বন্ডের দাম কমতে থাকায় বাড়ছে তার ইল্ড বা প্রকৃত আয়। অন্যান্য বন্ডের পাশাপাশি ইল্ড বেড়েছে করমুক্ত বন্ডেরও। বাজার থেকে কিনলে তা দাঁড়াতে পারে ৫.৫%।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy