সূচক এখন মগডালে উঠে বসেছে। কেউ কেউ এরই লোভে টাকা ঢালছেন। আবার কেউ কেউ পিছিয়ে আসছেন বাজার পড়বে এই ভয়ে। আর এই দুটোই কিন্তু ভুল ভাবনা। কেন? কারণ একটাই। আজ যে সূচক সংখ্যা বলছে বাজার এর পরে পড়তে পারে কারণ আর উপরে ওঠার জায়গা নেই, সেই সংখ্যায় কিন্তু আগামীতে বাজারে ধস নামার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিতে পারে।
একটা ছোট্ট উদাহরণ নেওয়া যাক। নিফটি ৫০ তার যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে। সূচক ছিল ১১০৭ আর আজ তা ১৯ গুণ বেড়ে হয়েছে ১৯৪৭৯।
১৯৯৬ সালে যদি কেউ বাজারে টাকা ঢেলে থাকেন এবং তাকে বাড়তে দিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর বিনিয়োগ সূচকের অঙ্কে ১৯ গুণ বেড়ে যাওয়ার কথা। তা অবশ্য নাও হতে পারে। কারণ সূচক হল একটা গড়। তাই সূচক হিসাব করার জন্য যে সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম নেওয়া হয় তাদেরও সবার দাম একই হারে বাড়ে না বা কমে না।
সূচক নিয়ে আরও একটা কথা বাজারে চলে আসছে। আপনি যদি ১৯৮৪ সালে এক লক্ষ টাকা বিএসই সূচক শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন, তা হলে তার মূল্য এখন ৪ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই। কারণ সেনসেক্স বেড়েছে ১৭ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে! কিন্তু কেউ যে কথা বলে না তা হল সেই সময়ে সেনসেক্সে যে শেয়ারের দাম নির্ধারক হিসাবে ছিল সেই সব কম্পানির মধ্যে মাত্র ছয়টি— রিলায়্যান্স, হিন্দ ইউনিলিভার, নেসলে, আইটিসি, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রাই টিঁকে আছে সেনসেক্সের নির্ধারক শেয়ার হিসাবে।
আরও পড়ুন:
তার মানে কী দাঁড়াল? একটাই। সূচক আপনাকে বাজারের গতি প্রকৃতির একটা আন্দাজ দিতে পারে। কিন্তু আপনার বিনিয়োগের নির্ধারক সে হতে পারে না।
একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে? আদৌ নয়। ব্যাপারটা এই ভাবে ভাবুন। আপনি কিসে বিনিয়োগ করছেন? শেয়ারে না সূচকে? শেয়ারে বিনিয়োগ করার মানে কী? একটি সংস্থার অংশীদারি। সেই সংস্থা কেমন করবে তা নির্ভর করবে তার বাজারের উপর, বাজারের বৃদ্ধির হারের উপর এবং সংস্থার পরিচালকরা কী ভাবে বাজারের উপর তাঁদের অধিকার বিস্তার করছে তার উপর। সূচক এর কোনওটাই স্থির করে না।
তাই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে গেলে প্রথমেই যা জরুরি তা হল, আপনার নিজের পছন্দের উপর নির্ভর করা। আপনি যদি প্রযুক্তির বাজার ভাল না বোঝেন তা হলে হাঁটবেন না সে পথে। যে বাজার আপনি বুঝতে পারেন বেছে নিন সেই বাজারকেই।
তার পর সেই বাজারের সংস্থা বাছতে থাকুন। বিনিয়োগ করুন সেই সংস্থাতেই যার বাজারে টিঁকে থাকার ক্ষমতা আছে। সেনসেক্সের কথাই ভাবুন। যখন শুরু হয়েছিল তার যে ৫০টি নির্ধারক শেয়ার ছিল তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি এখনও রাজত্ব করছে সেনসেক্সের নির্ধারক শেয়ার হিসাবে। তাই সেই সময়ে যাঁরা রিলায়্যান্সে টাকা ঢেলেছিলেন তাঁদের লাভের কথা ভাবুন।
আসলে শেয়ারে বিনিয়োগের মূল কথাটা হল, নিজে বুঝে বিনিয়োগের রাস্তায় পা ফেলা। বাজারে অন্যের কথা শুনে বিনিয়োগ করা কখনওই ঠিক নয়। যদি অন্যের কথা কানে আসে এবং ভাল লাগে, তা হলে আগে যাচাই করে নিন। সংস্থার ব্যবসা কেমন? সংস্থা যা তৈরি করে সেই বাজারের ভবিষ্যৎ কী রকম? যে প্রযুক্তি এখন সে ব্যবহার করে চলেছে সেই প্রযুক্তির বড় রকম বদলের সম্ভাবনা আছে? যদি থাকে তা হলে সংস্থাটির মানসিকতায় সেই বদল গ্রহণ করার জায়গা আছে? যদি থাকেও প্রতিযোগীদের তুলনায় এগিয়ে থাকার জেদ আছে তো? এর সঙ্গে অবশ্যই মিলিয়ে নিতে হবে অর্থনীতির অবস্থা।
মাথায় রাখবেন, শেয়ারে বিনিয়োগ করতে গেলে কিন্তু বাজারের নানান তথ্য নিয়মিত মাথায় রাখতে হবে। আর বিনিয়োগ করে অপেক্ষা করতে হবে। তার মানে অবশ্যই এটা নয় যে বিনিয়োগের ঝোলা মাঝে মাঝে ঝারপোঁছ করবেন না। কিন্তু তা রোজ করার কোনও প্রয়োজন নেই। এর এত কিছু না পোষালে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে।