অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা বাড়িয়ে ধাক্কা খেল শিল্পোৎপাদন। সোমবার সরকারি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত মাসে দেশে শিল্পবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ শতাংশে। ফেব্রুয়ারির ২.৭ শতাংশের (সংশোধিত) তুলনায় তা নামমাত্র বেশি হলেও, গত বছরের মার্চের ৫.৫ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই কম। এমনকী পুরো ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ ধরলে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৪% হারে। যা চার বছরে সর্বনিম্ন। মূলত কল-কারখানার উৎপাদন, খনন এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের খারাপ ফলই মার্চে শিল্পবৃদ্ধির হারকে টেনে নামিয়েছে বলে পরিসংখ্যানে প্রকাশ। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে দাঁড়িয়ে যেখানে চাহিদায় টান পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, সেখানে জোগান শৃঙ্খলের সমস্যা আরও চাপে ফেলতে পারে উৎপাদন শিল্পকে। যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক শিল্পোৎপাদনে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে ২০২০-২১ সালে করোনার সময় শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন সরাসরি কমে গিয়েছিল ৮.৪%। কিন্তু তার পরের বছরে (২০২১-২২) নীচু ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে তা মাথা তোলে ১১.৪%। গত ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে শিল্পবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৫.২% এবং ৫.৯%। আর গত মাসে মূলত দেশে কল-কারখানায় ঢিমে উৎপাদন (বৃদ্ধির হার ৩%), খননে তা ০.৪ শতাংশের তলানিতে নামা এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ২০২৪ সালের এই সময়ের ৮.৬ শতাংশের তুলনায় এ বার ৬.৩% হওয়াই মূলত শিল্পোৎপাদনকে টেনে নামিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, তার উপরে মার্চ মূলধনী পণ্যের উৎপাদন মাত্র ২.৪% হারে বেড়েছে। মূলত অন্য পণ্য উৎপাদনে এই সমস্ত জিনিস কাজে লাগে, তাই তার উৎপাদন ধাক্কা খাওয়া সামগ্রিক ভাবেই চাহিদা কমার লক্ষণ। পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্য ৬.৬% এবং স্বল্পমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের ৪.৭% বৃদ্ধি, কাঁচামাল তৈরিতে ব্যবহৃত প্রাথমিক পণ্যের উৎপাদনে ধাক্কায় খুব একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
পটনা আইআইটির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামাণিকের বক্তব্য, ‘‘ফেব্রুয়ারির থেকে সামান্য উন্নতি হলেও, শিল্পের ছবি নিয়ে চিন্তা বহাল। কারণ, উৎপাদন শিল্পে এখনও প্রাণ ফেরেনি। তার উপরে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং জোগান শৃঙ্খল ঘিরে আশঙ্কার ফলে কল-কারখানার উৎপাদন আরও ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। দেশে বৃষ্টি ঠিকমতো না হলে, তার প্রভাবও পড়বে চাহিদা। ফলে সংস্থাগুলি উৎপাদন বাড়ানোর পথে না-ও হাঁটতে পারে।’’
মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের মতে, শুল্ক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কায় সংস্থাগুলি অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকে বেশি পণ্য উৎপাদনের পথে হেঁটে থাকতে পারে। যার প্রভাবে মার্চে শিল্পোৎপাদন ফেব্রুয়ারির তুলনায় বেড়েছে। তাই সেই ধারা এপ্রিল-সহ আগামী মাসগুলিতেও বহাল থাকে কি না, সেটাই এখন দেখার।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)