Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
COVID-19

COVID-19 Detector: কলকাতার গবেষণাগারেই বাতাস শুঁকে কোভিড নির্ণয়ের যন্ত্র বানিয়ে দৌড়ে এগিয়ে সংস্থা

‘মেশিনসেন্স’-এর শীর্ষ কর্তা, আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তনী বিপ্লব পালের দাবি, তাঁদের মেশিন ভারত ও আমেরিকায় পরীক্ষামূলক ব্যবহারের শেষ পর্যায়ে।

‘মেশিনসেন্স’-এর পরীক্ষাগার।

‘মেশিনসেন্স’-এর পরীক্ষাগার। —নিজস্ব চিত্র।

সুপর্ণ পাঠক
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২১ ১৫:৫৯
Share: Save:

করোনা ছড়ায় বাতাসে। তা হলে যে ঘরের বাতাসে করোনা আছে সেই ঘরে না ঢুকলেই তো করোনা এড়ানো যাবে অনেকটাই! কিন্তু জানব কী করে, বাতাসে করোনার উপস্থিতির কথা?

এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতেই দৌড় শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা ও রকেট উৎক্ষেপণের জন্য প্রসিদ্ধ সংস্থা নাসা যে শহরে অবস্থিত সেই শহরেই রয়েছে রাইস বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ লক্ষ ডলারের তহবিল নিয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয় নেমে পড়েছে সুক্ষ্ম বৈদ্যুতিন পাত ব্যবহার করে বাতাসে কোভিডের জীবাণুর উপস্থিতি ধরার যন্ত্র তৈরি করার গবেষণায়। আমেরিকার বল্টিমোরের ‘স্মিথডিটেকশন’ও তৈরি তাদের যন্ত্র বাজারে ছাড়তে।

আর এই যুদ্ধের একদম প্রথম সারিতে এদের সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে ভারত-আমেরিকা স্টার্ট-আপ ‘মেশিনসেন্স’! সংস্থার শীর্ষ কর্তা, আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তনী বিপ্লব পালের দাবি, তাঁদের মেশিন ভারত ও আমেরিকায় পরীক্ষামূলক ব্যবহারের শেষ পর্যায়ে। তাঁরা বাতাস শুঁকে কোভিড খোঁজার বৈদ্যুতিন যন্ত্র শীঘ্রই বিশ্ব বাজারে ছাড়তে চলেছেন।

কলকাতা ও বাল্টিমোরের ঠিকানায় রেজিস্ট্রি করা সংস্থাটির কলকাতার সেক্টর ফাইভের পাঁচতলা অফিসে বসে বিপ্লবের দাবি, অন্য যে ক’টি যন্ত্র নিয়ে এখনও কাজ চলছে সেগুলি সবই ২০ মিনিটের বেশি নিচ্ছে বাতাসে ভাইরাস আছে কি না জানাতে। এই ধরনের যন্ত্রের খোঁজ শুরু হয়েছিল কোভিড ছড়ানো ঠেকাতে। কিন্তু ২০ মিনিট সময় লাগলে তার মধ্যেই বহু সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। তাই চ্যালেঞ্জ এখানে সময়টা কমানোর। আর সেই চ্যালেঞ্জকে মেনেই সাতজনকে নিয়ে শুরু করা সংস্থাটির বর্তমান ১৫০ জন কর্মী, যাঁদের মধ্যে ১২ জনের বেশি পিএইচডি ডিগ্রিধারী। তৈরি করে ফেলেছেন পাঁচ মিনিটেই বাতাস শুঁকে কোভিড ভাইরাস আছে কি না বলে দেওয়ার যন্ত্র।

মেশিনসেন্স তৈরি হয়েছিল শিল্পে ব্যবহৃত নানান সেন্সর তৈরি করতে। কলকাতায় বিভিন্ন ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সম্প্রতি এদের তৈরি সেন্সরই ব্যবহার করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

বিপ্লব বলছিলেন তাঁদের এই কোভিড শোঁকা যন্ত্র তৈরির ইতিহাসের কথা। তাঁদের মূল ব্যবসা শিল্পে ব্যবহৃত নানান সেন্সর তৈরি করা। কিন্তু গত বছর মার্চ মাসে তাঁদের ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কোনও সংস্থাই বাইরের লোককে কারখানায় ঢুকতে দিতে রাজি নয়। কিন্তু সেন্সর চালাতে তাঁদের কর্মীদের উপস্থিতির প্রয়োজন। আর কোনও সংস্থাই রাজি ছিল না বাইরের কর্মীদের ঢুকতে দিতে।

তখনই তাঁর মাথায় ঢোকে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই দেহের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র যা ছোট এবং সহজেই ব্যবহার করা যায়। সোজা প্রযুক্তি। কিন্তু মেশিনসেন্স সেটা আগে করে ফেলায় আমেরিকার একটা বড় বাজার ধরে ফেলে। বেঁচে যায় সংস্থাটি। আর সেই লাভের টাকাই বিপ্লব ঢালেন বাতাসে কোভিড শোঁকার যন্ত্র তৈরিতে। কলকাতায় তৈরি করে ফেলেন ভাইরাস ল্যাব। যেখানে মৃত কোভিড ভাইরাস ব্যবহার করে এই যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা চলছে।

বাতাসে কোভিড শোঁকার যন্ত্র।

বাতাসে কোভিড শোঁকার যন্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

মাইক্রোসফটের বিচারে বিশ্বের প্রথম দশটি আইওটি (ইন্টারনেট অব থিঙ্কস) স্টার্টআপের মধ্যে রয়েছেন এঁরা। ব্যবসায় তাদের উপদেশে বলীয়ান সংস্থাটির এই যন্ত্রটির মূল কাজই হল বাতাস শুঁকে তাতে উপস্থিত জৈব ও অজৈব কণাকে বৈদ্যুতিন প্রযুক্তিতে আলাদা করা। তাঁদের বৈদ্যুতিন ফুটপ্রিন্ট বা উপস্থিতির চিহ্ন ধরে বলে দেওয়া বাতাসে কোভিড আছে কি না।

স্মিথডিটেকশন সংস্থার অ্যানথ্রাক্স ধরার যন্ত্র আমেরিকা সরকার থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রায় সব ডাক সংস্থাই ব্যবহার করে থাকে। সেই যন্ত্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক যুদ্ধে কতটা সফল হবে মেশিনসেন্স? এ ক্ষেত্রে বিপ্লবের দাবি অনুধাবনযোগ্য। “আমরা সবাই অন্যের কাজ খুব কাছ থেকে নজর রাখছি।” তাঁর দাবি, স্মিথডিটেকশনের যন্ত্রের যা দাম, তা তৃতীয় বিশ্বে ব্যবহার করা খুবই খরচসাপেক্ষ। তুলনায় তাঁদের যন্ত্রের দাম খুবই কম। আর আমেরিকার সংস্থাটির যন্ত্র বাতাসে ভাইরাস শুঁকে তার উপস্থিতি বলতে সময় নিচ্ছে ২০ মিনিটের মতো। তাঁদের যন্ত্র নেয় মাত্র পাঁচ মিনিট। দেখতে একটা ছোট মশা মারার যন্ত্রের মতো। বাতাসে কোভিডের উপস্থিতি টের পেলেই জানান দিতে পারে নানান ভাবে।

বিপ্লবের আরও দাবি, তাঁদের যন্ত্র ভারতের পরিবেশে পরীক্ষিত। তাই ভারতের হাসপাতালে এবং ঘরের পরিবেশে সাধারণ ভাবে যে সব কণা উপস্থিত থাকে তা তাঁদের যন্ত্রের মগজে ঢোকানো আছে। তাই কোভিডের উপস্থিতি যত সহজে এই যন্ত্র আঁচ করবে তা বাকি যন্ত্রের পক্ষে অত সহজ হবে না এখনই।

তাঁর দাবি এই বাজারে কোনও প্রযুক্তিই বেশিদিন কেউ দখলে রাখতে পারে না। তাই সবাই ক্রমাগত প্রযুক্তি উন্নতি করতে অক্লান্ত ভাবে দৌড়ে চলেছে। তাঁরাও পিছিয়ে নেই।

আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমে তাঁদের কাজ নিয়ে প্রভূত আগ্রহ সত্ত্বেও কলকাতায় কেন? বিপ্লবের উত্তর, “আর কোন শহরে আছে এত মেধা? কিন্তু সমস্যা হল এঁদের কলকাতায় ধরে রাখা। এটাও আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ।”

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 COVID-19 Detector Corornavirus Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy