ছাড় দিয়ে পারস্পরিক শুল্ক নীতি চালু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বার থেকে ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ করে কর নেবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। ওয়াশিংটনের এই ঘোষণার জেরে অস্থির হয়েছে শেয়ার বাজার। সেনসেক্স ও নিফটির সূচককে নিম্নমুখী। ফলে আগামী কয়েক দিন স্টকে লগ্নির ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
এখন প্রশ্ন হল, ট্রাম্পের ছাড় যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক নীতির জেরে কোন কোন শ্রেণির শেয়ারের উপর পড়বে সর্বাধিক প্রভাব? আর কোথায় দামের হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম? ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দাবি, প্রাথমিক ভাবে গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণকারী সংস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের রফতানি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এই সংস্থাগুলির শেয়ারের দর কিছুটা নামতে পারে।
আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের রফতানি বাণিজ্যের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিন সামগ্রী (১৫.৬ শতাংশ), রত্ন ও গয়না (১১.৫ শতাংশ), ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম (১১ শতাংশ), পারমাণবিক চুল্লির যন্ত্রাংশ (৮.১ শতাংশ) এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য (৫.৫ শতাংশ)। এ ছাড়া লোহা-ইস্পাত এবং জিঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে থাকে নয়াদিল্লি। বিশ্লেষকদের অনুমান, এর মধ্যে বৈদ্যুতিন সামগ্রী, লোহা-ইস্পাত এবং জিঙ্কের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ছাড় যুক্ত পারস্পরিক শুল্কের প্রভাব বেশি দেখা যেতে পারে। ফলে এই সংস্থাগুলির স্টকের দর অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় আসার পর গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আগেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে টাটা মোটরস থেকে শুরু করে মাহিন্দ্রা বা অশোক লেল্যান্ডের মতো সংস্থাগুলির শেয়ারের দর ইতিমধ্যেই নিম্নমুখী হয়েছে। ছাড় দিয়ে পারস্পরিক শুল্ক চালু করার পর গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণকারী সংস্থাগুলির পণ্য আমেরিকার বাজারে কতটা দামি হতে চলেছে, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আবার অন্য সমস্যা রয়েছে। এটি মূলত একটি পরিষেবা প্রদানকারী শিল্প। লম্বা সময়ে এতে ট্রাম্পের ছাড় যুক্ত পারস্পরিক শুল্কের কতটা প্রভাব থাকবে, তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। অন্যদিকে ব্যাঙ্কিং, রিয়েল এস্টেট, কয়লা এবং অন্যান্য খনিজ, পেট্রপণ্য, জামা-কাপড়, হোটেল ও পর্যটন এবং প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির শেয়ারের দর এর জন্য কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
নুভামা ওয়েলথের রিজ়িওনাল হেড কুণাল আচার্য বলেছেন, ‘‘ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি ঘোষণা করলেও কোন পণ্যে কতটা করে কর নেওয়া হবে, তা এখনও জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর তেমন কোনও প্রভাব ভারতের বাজারে পড়বে না। কারণ, এ খান থেকে মাত্র ৫০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। গাড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে আমেরিকা অনেক বেশি মেক্সিকো এবং কানাডার উপর নির্ভরশীল। আর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই ইউরোপ-সহ বিশ্বের অন্যান্য বাজার ধরার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। এতে উল্টে আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতি সূচক হু-হু করে বাড়তে পারে।’’
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: শেয়ার বাজারে লগ্নি বাজারগত ঝুঁকি সাপেক্ষ। আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই স্টকে বিনিয়োগ করুন। এতে আর্থিক ভাবে লোকসান হলে আনন্দবাজার ডট কম কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই দায়ী নয়।)