প্রতীকী চিত্র
জল্পনা সত্যি করে ভারত থেকে ব্যবসা গোটাচ্ছে মার্কিন বহুজাতিক মোটরবাইক সংস্থা হার্লে ডেভিডসন। সংস্থার দাবি, বিশ্ব জুড়ে তাদের ব্যবসা ঢেলে সাজার অঙ্গ এটি। তবে এতে সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকারের বিদেশি লগ্নি টানার পরিকল্পনা। তার উপরে সম্প্রতি ভারতে কর কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাপানি বহুজাতিক টয়োটা কির্লোস্কর মোটরের কর্তারা। গাড়ি শিল্পের অন্যান্যরাও দেশে তৈরি গাড়িতে জিএসটি কমানোর আর্জি জানাচ্ছেন নাগাড়ে। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের কটাক্ষ, গাড়ি শিল্পের প্রতি বিজেপি সরকারের উদাসীনতাই সংস্থাগুলিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। এর আগে হার্লের বাইকে কর অত্যন্ত চড়া দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শুরু থেকেই ভারত-মার্কিন বাণিজ্যে যেন দর কষাকষির মাধ্যম হয়ে পড়েছে মোটরবাইকের ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী হার্লে। ২০০৭ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার কিছু বিধি সংশোধন করে এ দেশে ওই বাইক আমদানির পথ খোলে। পরিবর্তে মেলে মার্কিন মুলুকে ভারতীয় আম রফতানির ছাড়পত্র। পরে হরিয়ানার বাওয়ালের কারখানায় যন্ত্রাংশ জুড়ে বাইক তৈরি করে বিক্রি শুরু করে সংস্থা। শিল্পের দাবি, ভারতে দামি দু’চাকার বাজার তৈরির ক্ষেত্রে হার্লের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
হার্লে জানিয়েছে, বাওয়ালের কারখানা বন্ধ হবে। তবে এখনকার ক্রেতারা ভবিষ্যতেও পরিষেবা পাবেন। সূত্রের খবর, ভারতীয় কোনও সংস্থার হাত ধরতে পারে তারা। তবে সংস্থা এ নিয়ে কিছু বলেনি।ট্রাম্পের তোপের মুখে পড়ে গত বছর মোটরবাইকে আমদানি শুল্ক ১০০% থেকে কমিয়ে ৫০% করেছিল কেন্দ্র। তাতেও খুশি হননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ইঙ্গিত দেন, ভারত-মার্কিন সীমিত’ বাণিজ্যিক চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। খবর, তাতে হার্লের বাইকে কর আরও কমার কথা চলছিল।
ইতি টানল হার্লে
• সংস্থা ঢেলে সাজাতে ভারতে থেকে ব্যবসা গোটাচ্ছে হার্লে।
• বাওয়ালের কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে। যেটি ব্রাজিলের পর আমেরিকার বাইরে হার্লের দ্বিতীয় কারখানা।
• গুরুগ্রামের সেলস অফিস সঙ্কুচিত হবে।
• কাজ খোয়াবেন প্রায় ৭০ জন। শিল্পের ক্ষোভ
• ভারতে করের হার চড়া।
• স্বল্পমেয়াদে বারেবারে নীতি পরিবর্তন, দীর্ঘমেয়াদি নীতির অভাবে লগ্নি পরিকল্পনায় সমস্যা।
• চাহিদা বাড়াতে কর হ্রাস ও পুরনো গাড়ি বাতিলের নীতির আর্জিতে।
তবে আরও কয়েকটি সংস্থার মতো ভারতে হার্লের পথ চলাও সুগম হল না। এ দেশ থেকে আগেই পাততাড়ি গুটিয়েছে একদা বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থা জেনারেল মোটরস। আর এক মার্কিন বহুজাতিক ফোর্ড তাদের ব্যবসার বেশির ভাগ সম্পত্তি মহীন্দ্রার সঙ্গে গড়া যৌথ উদ্যোগের হাতে দিয়েছে। সম্প্রতি টয়োটার অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেশের কর কাঠামোর সমালোচনা করে লগ্নি পরিকল্পনা স্থগিত রাখার কথা জানান।
তাদের এমডি মাসাকাজু ইয়োশিমুরাও বলেন, ভারত তাদের গুরুত্বপূর্ণ বাজার হলেও নতুন গাড়ি ও প্রযুক্তি এ দেশে আনার বিষয়টি নির্ভর করবে চাহিদার উপর। আর ক্রমাগত নীতি বদলালে যেমন নতুন লগ্নি আসে না, তেমনই কর ও নীতি একে অপরের উল্টো পথে হাঁটলে চাহিদা তৈরিও কঠিন।বস্তুত, ভারতে কর ও নিয়মকানুনের মধ্যে সামঞ্জস্য ও দীর্ঘমেয়াদি স্পষ্ট পরিকল্পনার অভাবের ইঙ্গিত বারবারেই দিয়েছে গাড়ি শিল্পের একাংশ। যা প্রশ্ন তুলেছে মোদী সরকারের বিদেশি লগ্নি টানার বার্তার সদিচ্ছা নিয়েই। বিশেষ করে, চিন থেকে বিভিন্ন দেশের লগ্নি স্থানান্তরের সম্ভাবনা ও ভারতকে আত্মনির্ভর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। সেই সময়ই হার্লের ঝাঁপ বন্ধের সিদ্ধান্ত বিদেশি লগ্নির কাছে কী বার্তা দেয়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy