Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
GST Council

বিমায় জিএসটির বোঝা, সুরাহার সিদ্ধান্ত অধরাই

ক্রমশ বাড়তে থাকা চিকিৎসার খরচ সামলাতে এই মুহূর্তে আমজনতার জন্য অন্যতম জরুরি পরিষেবা স্বাস্থ্য বিমা। কেন্দ্রও তার প্রসারের বার্তা দিচ্ছে কেন্দ্র। সব মানুষকে এই সুরক্ষার আওতায় আনার কথা বলছে।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৯
Share: Save:

বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমার প্রিমিয়াম থেকে জিএসটি তুলে নেওয়া হোক। সংসদে সরব হয়েছিল বিরোধী শিবির। আশা ছিল, দীর্ঘ দিন ধরে চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার সাধারণ মানুষের স্বার্থে সোমবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যাবে। অবিলম্বে খরচ কমবে বিমার। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সভাপতিত্বে রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত ওই পরিষদের আলোচনায় শেষ পর্যন্ত সেটা হল না। সূত্রের খবর, জিএসটির বোঝা কমানোর ক্ষেত্রে একমত হয়েছেন সকলেই। কিন্তু তা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হবে নাকি তার হার কমানো হবে, সে ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে। শুধু প্রবীণ নাগরিকদের বিমায় জিএসটি ছাড়ের মতো বিকল্প ভাবনাও রয়েছে একাংশের। এই পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরির সুপারিশ করেছে পরিষদ।

সূত্র জানাচ্ছে, ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীর মধ্যে থাকবেন রাজ্যের অর্থ দফতরের ভারপ্রাপ্ত স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে তাদের। নভেম্বরে হবে জিএসটি পরিষদের পরবর্তী বৈঠক। সেই সময় বিমার প্রিমিয়ামে কর-সুরাহার সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেই দাবি ওই সূত্রের। এ দিন অবশ্য ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য জরুরি কিছু ওযুধে জিএসটির হার ১২% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে।

এ দিন চন্দ্রিমা জানান, পরিষদের বৈঠকে তিনি স্বাস্থ্য বিমার উপর ১৮% জিএসটি পুরোপুরি তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। গোয়ার বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সওয়ান্তও তাঁকে সমর্থন করেন। সূত্র বলছে, সকলে জিএসটি কমাতে রাজি হলেও একাংশ তা তুলে প্রত্যাহারের পক্ষপাতী নন। তাঁদের মতে, কর নামিয়ে এনে ৫% করা হোক। চন্দ্রিমার অবশ্য অভিমত, ৫% কর আর পুরোপুরি ছাড়ের মধ্যে বিশেষ কোনও ফারাক নেই। সরকারের উপদেষ্টা নীতি আয়োগের রিপোর্টেই প্রকাশ, দেশের ৩০% মানুষই এখনও বিমার সুরক্ষার বাইরে রয়ে গিয়েছেন। তাই কর তুলে নেওয়া জরুরি। প্রবীণদের বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি ছাড়ের মতো বিকল্প প্রস্তাব উঠলেও তা দিশা পায়নি তার সঙ্গে জুড়ে থাকা কিছু সমস্যার কারণে। কারণ, বহু পারিবারিক বিমা পলিসি রয়েছে যেখানে শামিল বাড়ির বয়স্ক বাবা-মা। সব মিলিয়েই কর কমানোর খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখবে মন্ত্রিগোষ্ঠী।

ক্রমশ বাড়তে থাকা চিকিৎসার খরচ সামলাতে এই মুহূর্তে আমজনতার জন্য অন্যতম জরুরি পরিষেবা স্বাস্থ্য বিমা। কেন্দ্রও তার প্রসারের বার্তা দিচ্ছে কেন্দ্র। সব মানুষকে এই সুরক্ষার আওতায় আনার কথা বলছে। অথচ বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি চাপানো রয়েছে ১৮% হারে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, একেই বিমা সংস্থাগুলি প্রিমিয়ামের অঙ্ক বাড়ানোয় সাধারণ রোজগেরে মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। তার উপর তাতে উঁচু হারে জিএসটি বিমা প্রকল্প কেনাকে আরও খরচসাপেক্ষ করে তুলেছে।

গ্রাহকদের অনেকেই এত খরচ টানতে না পেরে প্রকল্প বন্ধ করছেন। বিশেষত সমস্যায় পড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিকেরা। এই পরিস্থিতিতে কিছু দিন আগে সংসদে বিরোধী দলগুলি বিমায় জিএসটি তোলার দাবি জানিয়েছে। খোদ কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি ওই প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জিএসটি আদায় এখন অনেকটাই বেড়েছে। প্রতি মাসে গড়ে রাজকোষে ঢুকছে প্রায় ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ১ জুলাইয়ে চালু হওয়ার পরে প্রথম মাসে যেখানে তা ছিল মাত্র ৯০ হাজার। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য জরুরি স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমাকে জিএসটির আওতা থেকে বাদ দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

গত আর্থিক বছরে স্বাস্থ্য বিমা বিমার প্রিমিয়াম খাতে জিএসটি আদায় হয়েছে ৮২৬২.৯৪ কোটি টাকা। পুনর্বিমার প্রিমিয়াম খাতে আদায় হয়েছে ১৪৮৪.৩৬ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমাকে জিএসটির আওতা থেকে বাদ দেওয়া হলে তার প্রভাব কর আদায়ের উপর কী হবে, সেই বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে ফিটমেন্ট কমিটি। যেটি রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন কর আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি। এই কর ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে জিএসটির হার কী হওয়া উচিত, তা সুপারিশের দায়িত্ব তাদের। এ দিন পরিষদের প্রস্তাবিত মন্ত্রিগোষ্ঠী সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরে আগামী বৈঠকে বিমায় জিএসটি ছাড়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের জাতীয় আর্থিক বিষয় এবং কর সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান বিবেক জালান বলেন, ফিটমেন্ট কমিটির রিপোর্ট মন্ত্রিগোষ্ঠী বিবেচনা করে দেখবে। কারণ, স্বাস্থ্য এবং জীবন বিমাকে জিএসটি থেকে বাদ দেওয়া হলে কর্পোরেট গ্রুপ বিমা এবং আগাম মেটানো কর ফেরতের মতো বিষয়গুলির উপরে তার কী প্রভাব পড়বে, সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরি।

অন্য বিষয়গুলি:

GST Council GST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy