প্রতীকী ছবি
আড়াই মাসের লকডাউনে যাবতীয় আর্থিক কর্মকাণ্ডে তালা ঝোলার মাসুল যে অর্থনীতিকে ভাল মতোই চোকাতে হবে, সেটা এত দিনে পরিষ্কার। মার্চের শেষে মাত্র দিন সাতেকের স্তব্ধ জীবনযাপন, শুনশান কল-কারখানা, বন্ধ ব্যবসা-পত্তর, দোকানপাট বিভিন্ন আর্থিক ও শিল্প ক্ষেত্রের পরিসংখ্যানকে ঠেলে দিয়েছিল বিপজ্জনক জায়গায়। বছর দেড়েকের আর্থিক ঝিমুনি সওয়া যে হিসেব-নিকেশ এমনিতেই তখন কাহিল। এপ্রিলে অবস্থা আরও খারাপ হয়। মঙ্গলবার সরকারি পরিসংখ্যান জানাল, আশঙ্কা মিলিয়েই চলতি অর্থবর্ষের শুরুর দু’মাসে রাজকোষ ঘাটতি পৌঁছেছে সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৮.৬ শতাংশে। কারণ, লকডাউনের জেরে কেন্দ্রের কর আদায় বিপুল কমেছে। করোনা যুঝতে খরচ হয়েছে তুলনায় বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, একই কারণে মে মাসে প্রধান আটটি পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এপ্রিলের মতোই উৎপাদন কমেছে। সঙ্কোচনের হার ২৩.৪%। ঋণ বৃদ্ধির হারও নেমেছে ৭ শতাংশে।
পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল-মে মাসে রাজকোষ ঘাটতির অঙ্ক ৪.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। যেখানে গোটা অর্থবর্ষে তা হওয়ার কথা ৭.৯৬ লক্ষ কোটি (জিডিপি-র ৩.৫%)। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, ঘাটতি হোক বা সরকারের আয়, বাজেটে বাঁধা বেশিরভাগ লক্ষ্যই করোনার আবহে বদলে ফেলা ছাড়া গতি নেই। কারণ, কর থেকে আয় বিপুল কমেছে। তবে মোদী সরকারকে দুষে অনেকে বলছেন, অর্থনীতি দীর্ঘ দিন ধরেই ঝিমিয়ে। সরকার তা মানেনি বলেই সেই ‘রোগ’ সারেনি। করোনা তাতে খাঁড়ার ঘা বসিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এপ্রিল-মে মাসে সরকারের ব্যয়ের অঙ্ক ছুঁয়েছে, বাজেট অনুমানের ১৬.৮%। এক বছর আগে তার ছিল ১৮.৪%।
পরিকাঠামোর হাল
ক্ষেত্র সঙ্কোচন
কয়লা ১৪.০
প্রাকৃতিক গ্যাস ১৬.৮
শোধনাগার পণ্য ২১.৩
ইস্পাত ৪৮.৪
সিমেন্ট ২২.২
বিদ্যুৎ ১৫.৬
(মে মাসে সঙ্কোচনের হার শতাংশে)
• মে মাসে আটটি মূল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবে উৎপাদন কমে গিয়েছে ২৩.৪%।
• এপ্রিল-মে মিলিয়ে সঙ্কোচনের হার ৩০%।
উদ্বেগ আরও...
• এপ্রিল-মে মাসে রাজকোষ ঘাটতি ছুঁয়েছে ৪.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। বাজেটে স্থির লক্ষ্যের ৫৮.৬%। গোটা অর্থবর্ষের লক্ষ্য ৭.৯৬ লক্ষ কোটি। জিডিপি-র ৩.৫%।
• এই দুই মাসে সরকারের আয় হয়েছে ৪৪,৬৬৭ কোটি টাকা। বাজেট অনুমানের ২.২%। অথচ মোট খরচ ছুঁয়েছে ৫.১১ লক্ষ কোটি। বাজেট অনুমানের ১৬.৮%।
• জানুয়ারি-মার্চে কেন্দ্রের ঋণ ৯৪.৬২ লক্ষ কোটি টাকা। n মে মাসে ব্যাঙ্ক ঋণের
বৃদ্ধির হার কমেছে ৭%।
• আইএমএফের দাবি, করোনা সংক্রমণ আরও ছড়ানোয় স্বাস্থ্য সঙ্কটকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির সামনে এটাই সব থেকে বড় ঝুঁকি। তারা আগেই চলতি অর্থবর্ষে ৪.৫% জিডিপি সঙ্কোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, লকডাউনে এমন পরিস্থিতি প্রত্যাশিতই ছিল। এখন তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল, জুন থেকে লকডাউন শিথিল হওয়ার ফলে অর্থনীতি কত তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। ফের কর্মক্ষেত্রে ফিরছেন অনেকে। বিক্রিবাটা বাড়ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, লকডাউন শিথিলের পরে আর্থিক কার্যকলাপ শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার লক্ষণ একে বলা যায় না। বরং মূল্যায়ন সংস্থাগুলি বলছে, ভারতের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। লকডাউনের প্রভাবে জাতীয় উৎপাদনের একাংশ স্থায়ী ভাবে মুছে গিয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ, এডিবি-র দাবি, চলতি অর্থবর্ষে দেশের অর্থনীতির বহর কমতে পারে ৫-৬%। সঙ্কোচনের ইঙ্গিত দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। এ দিনই এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস বলেছে, দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে এতটাই ধাক্কা দিয়েছে করোনা যে, স্বল্পমেয়াদে চোট সারানো কঠিন। যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ঋণ দেওয়ায়। অর্থাৎ, পরোক্ষে অর্থনীতিতে।
আরও পড়ুন: চলতি খাতে উদ্বৃত্ত-ও বাড়াল চিন্তা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy