অর্থনীতির আঙিনায় মোদী সরকারের জন্য খারাপ খবরের যেন শেষ নেই। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর প্রথম বাজেটের কোনও অঙ্কই মেলাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ক্রমশ বাড়ছে।
অর্থমন্ত্রীর চিন্তা বাড়িয়ে আজ অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, বাজেটে বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও ছোঁয়া যাবে না। বিলগ্নিকরণ থেকে ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা ঘরে তোলার লক্ষ্য নিয়েছিলেন নির্মলা। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, চলতি বছরে খুব বেশি হলে বিলগ্নিকরণ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা ঘরে আসবে। অর্থাৎ ৪০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি।
অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে কর বাবদ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলেন, বাস্তবে আয় তার থেকে ২ লক্ষ কোটি টাকা কম হতে পারে আগেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। গতকাল পরিসংখ্যান মন্ত্রক প্রকাশিত অনুমান, চলতি বছরে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে আটকে থাকবে। মূল্যবৃদ্ধি-সহ জিডিপি মাত্র ৭.৫% হারে বাড়বে। অর্থনীতির বৃদ্ধির গতি কমে গেলে, আমজনতা থেকে কর্পোরেট সংস্থা, কারও আয়ই তেমন বাড়ে না। ব্যবসা-বাণিজ্যও কম হয়। ফলে কর বাবদ রোজগার কমে সরকারের। তার উপরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মোদী সরকার কর্পোরেট কর কমিয়েছে। ফলে কর বাবদ আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা কম হতে পারে।
আশঙ্কা
•লক্ষ্য, বিলগ্নিকরণ থেকে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের। ইঙ্গিত, হবে
৬০ হাজার কোটি।
•লক্ষ্য, সব কর থেকে মোট ২৪.৬১ লক্ষ কোটি আদায়। নিট (রাজ্যকে ভাগ দিয়ে) ১৬.৪৯ লক্ষ কোটির। ইঙ্গিত, কম হবে ২.৫ লক্ষ কোটি।
•লক্ষ্য, প্রত্যক্ষ কর থেকে আয় ১৮% বাড়িয়ে ১৩.৩৫ লক্ষ কোটি করার। অথচ, এপ্রিল-নভেম্বরে বেড়েছে ১৫%।
•লক্ষ্য, পরোক্ষ কর থেকে ১১.১৯ লক্ষ কোটি সংগ্রহের। অথচ, এপ্রিল থেকে নভেম্বরে হয়েছে ৬.১২ লক্ষ কোটি।
•লক্ষ্য, আয় ও কর্পোরেট কর থেকে ১৩.৩৫ লক্ষ কোটি আয়ের। ইঙ্গিত, কর্পোরেট কর ছাঁটায় ক্ষতি হবে ১.৪৫ লক্ষ কোটি।
•লক্ষ্য, ডিসেম্বর-মার্চ প্রতি মাসে অন্তত ১.১১ লক্ষ কোটি জিএসটি আয়ের। অন্তত এক মাসে হতে হবে ১.২৫ লক্ষ কোটি। অথচ, ডিসেম্বরে হয়েছে প্রায় ১.০৩ লক্ষ কোটি।
•লক্ষ্য, রাজকোষ ঘাটতিকে
৩.৩ শতাংশে বাঁধা। ১১৫% ছুঁয়েছে নভেম্বরেই।
এ সব সত্ত্বেও রাজকোষ ঘাটতিকে যথাসম্ভব কম রাখার জন্য অর্থ মন্ত্রক নির্দেশ জারি করেছে, যা-ই হোক না কেন কর বাবদ আয়ের লক্ষ্য ছুঁতেই হবে। ঢিলেমি চলবে না। সরকারি সূত্রের খবর, দিন কুড়ি আগে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়কর অফিসারদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
মাথায় হাত পড়েছে রাজস্ব অফিসারদের। তাঁদের প্রশ্ন, অর্থমন্ত্রী আয়কর ও কর্পোরেট কর থেকে ১৩.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নিয়েছিলেন। গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮% বেশি। অথচ অর্থবর্ষের প্রথম আট মাসে আয়কর বাবদ আয় মাত্র ৫% হারে বেড়েছে। এ দিকে কর্পোরেট কর কমাতে গিয়ে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হবে। তার উপরে আবার প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী, দু’জনেই কর আদায় করতে গিয়ে কড়া হতেও বারণ করেছেন। যাতে করদাতাদের মনে ভয় চেপে না-বসে। তা হলে কোন পথে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ হবে? রাজস্ব দফতরের কর্তাদের অনুমান, লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া দূরে থাক, শেষমেশ ঘরে কত আসবে তা নিয়েই ঘোর সংশয় তৈরি হয়েছে।
মন্ত্রক কর্তাদের যুক্তি, রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা ছাপালেও তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার একমাত্র উপায় খরচ ছাঁটাই করা। অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে বেশি খরচ না-করার নির্দেশ জারি হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার মতো প্রকল্পের খরচে হাত পড়েছে। সব মিলিয়ে বাজেট বরাদ্দ থেকে প্রায় ২.২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ ছাঁটাই হতে পারে। কিন্তু খরচ ছাঁটাই হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কী করে?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতিবিদ লেখা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একেই বলে দুষ্টচক্র। বৃদ্ধি মাথা নামালে ঘাটতি কমানোর প্রক্রিয়া ধাক্কা খায়। জিডিপির তুলনায় রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের নীতি হল মূলধনী খরচে ছাঁটাই। তাতে আবার আর্থিক বৃদ্ধিই ধাক্কা খাবে।’’ বণিকসভা ফিকির সভানেত্রী সঙ্গীতা রেড্ডি বলেন, রাজকোষ ঘাটতির রাশ আলগা করা হোক। অর্থনীতিতে বাড়তি ১.৫ থেকে ২ লক্ষ কোটি ঢালা হোক। কারণ এই পরিস্থিতিতে লগ্নিতে জোয়ার আনতে, চাহিদা বাড়াতে এই খরচ বাড়ানো জরুরি।
কেন্দ্র জানিয়েছে, এ বছর জিডিপি ২০৪ লক্ষ কোটি টাকাতেই আটকে থাকবে। অথচ বাজেটে জিডিপি ২১১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে বলে হিসেব কষেছিলেন নির্মলা। অনুমান ছিল, রাজকোষ ঘাটতি ৭.০৪ লক্ষ কোটি টাকায় বেঁধে রাখা যাবে। জিডিপির তুলনায় ৩.৩%। এখন জিডিপি-ই কমে গিয়েছে। রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ৭.০৪ লক্ষ কোটিতে বাঁধা গেলেও তার হার জিডিপি-র তুলনায় বাড়বে। কিন্তু ঘাটতি কি তাতে বাঁধা যাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, যাবে না। কেয়ার রেটিংসের অনুমান, ঘাটতি ৩.৯ থেকে ৪.১ শতাংশে পৌঁছবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy