প্রতীকী ছবি।
যে অভিশপ্ত বছর সদ্য পিছনে ফেলে এলাম, তাতে বহু মানুষের দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। নানা ভাবে লোকসান গুনেছেন অনেকে। কিন্তু একের পর এক রেকর্ড ভেঙে সেনসেক্স ও নিফ্টি উচ্চতার নতুন নতুন শিখরে পা রাখায় আনন্দে ভেসে গিয়েছেন শেয়ার এবং ফান্ডের লগ্নিকারীরা। এই অবস্থায় নতুন বছরে শেয়ার বাজারের চ্যালেঞ্জ প্রত্যাশার বিপুল চাপ সামলানো। কারও আশা, করোনার টিকা বাজারে এলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। লোকে ঘর থেকে বেরোবে। খরচ করবে। বেড়াতে যাবে। রুজি বাড়বে। মাইনে বাড়বে। কারখানায় উৎপাদন বাড়বে। অফিসে কর্মী বাড়বে। কারও আশা, যে বাজার ২০২০ সালের বেশির ভাগ সময় বিবর্ণ অর্থনীতিকে তোয়াক্কা না-করেই উঠল, এ বছর তার জমি হবে আরও মজবুত।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেনসেক্স ছিল ৪১,২৫৪ অঙ্কে। লকডাউন ঘোষণার পরে ২৪ মার্চ তা ৩৯৩৪ পয়েন্ট খুইয়ে তলিয়ে যায় ২৫,৯৮১-তে। অথচ বছর শেষ করে ৪৭,৭৫১ অঙ্কে উঠে। একই দিনে প্রথমবার ১৪,০০০ স্পর্শ করার পরে নিফ্টি হয় ১৩,৯৮২। অর্থাৎ ২০২০ সালে সেনসেক্স বেড়েছে ১৪.৭৫% এবং ২৩ মার্চের তুলনায় ৮৩.৭৯%। শেয়ার বাজার এতটা ওঠায় ভাল রকম বেড়েছে বিভিন্ন ইকুইটি ফান্ডের ন্যাভ।
ভাল
• ডিসেম্বরে রেকর্ড জিএসটি আদায়।
• অক্টোবর-ডিসেম্বর, তিন মাস ধরে পাইকারি বাজারে (সংস্থাগুলির থেকে যখন ডিলার কেনে) যাত্রিগাড়ি, মোটরবাইকের বিক্রি বৃদ্ধি বহাল থাকা।
• গত বছরের শেষ দিনে নতুন উচ্চতায় পা রেখেছিল সেনসেক্স ও নিফ্টি। নতুন বছরও শুরু হল উচ্চতার নতুন রেকর্ড দিয়ে।
• করোনার টিকা হাতে পেতে আর মাত্র কিছু দিনের অপেক্ষা।
• মূল্যায়ন ও আর্থিক সংস্থাগুলির পূর্বাভাস, ২০২১ সালে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৭.৬% থেকে ৯.৯%।
• ডিসেম্বরেও রফতানি কমেছে ০.৮%। তবে নভেম্বরের ৮.৭৪% সঙ্কোচনের তুলনায় এই হার অনেক কম।
• গত ফেব্রুয়ারির ২.৪৮ শতাংশের পরে ডিসেম্বরে এই প্রথম বেড়েছে আমদানিও। যার অর্থ চাহিদা বাড়ছে।
মন্দ
• নভেম্বরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ২.৬% সঙ্কোচন।
• রাজকোষে ঘাটতি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ১৩৫ শতাংশে।
• সরকারের দেনা সেপ্টেম্বরের শেষে ৫.৬% বেড়ে ছুঁয়ে ফেলেছে ১০৭ লক্ষ কোটি টাকা।
• অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম প্রমাণ যে বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি, তার বিক্রি এখনও বাড়েনি।
• খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার নভেম্বরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ৪ শতাংশের (+/-২%) সহনসীমার উপরেই ছিল (৬.৯৩%)। পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারও ছিল ন’মাসে সর্বাধিক (১.৫৫%)।
আমজনতাকে স্বস্তি দিল
• জানুয়ারি থেকে মার্চ, এই তিন মাসে সুদের হার কমছে না স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে।
• দীর্ঘ টালবাহানা ও অনিশ্চয়তার পরে গত (২০১৯-২০) অর্থবর্ষের জন্য ৮.৫% হারে সুদ জমার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে।
• গত অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল করার শেষ দিন আরও একটু বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ জানুয়ারি।
সেনসেক্স, নিফ্টি রেকর্ড উঁচুতে পা রাখে নতুন বছরের প্রথম দিনেও। বাজার মহলের সিংহভাগেরই ধারণা, এই ‘বুল মার্চ’ এখনই বন্ধ হওয়ার নয়। করোনার টিকা পাওয়া মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। সেই পর্ব শুরু হলে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে লগ্নিকারীরা আরও আশাবাদী হবেন।
কুড়ির শেষ এবং একুশের প্রথম দিনে পাওয়া একগুচ্ছ ভাল খবর আরও তাতিয়ে দিয়েছে আশাকে। প্রতিকূল হাওয়া যে বইছে না তা অবশ্য নয়। তবে আশাবাদীদের চোখ ভালগুলিতেই। যেমন—
জিএসটি চালুর পরে সর্বাধিক কর আদায় হয়েছে ডিসেম্বরে। ১,১৫,১৭৪ কোটি টাকা। গাড়ি বিক্রিও বাড়ার পথে। চাহিদা বাড়তে থাকায় ডিলাররা বেশি কিনেছেন সংস্থাগুলির কাছ থেকে। মারুতির বিক্রি ১৯.৫% বেড়ে পৌঁছেছে ১,৫০,২৮৮টিতে। হুন্ডাই মোটরসের বেড়েছে ২৪.৮৯%। বিক্রি বেড়েছে হোন্ডা কারস-এরও। এতে ব্যবসা বাড়ছে সহযোগী শিল্পেরও। জাপানের আর্থিক পরিষেবা সংস্থা নমুরার দাবি, ২০২১ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ছাপিয়ে যাবে এশিয়ার অন্যান্য সব দেশকে। তা ছুঁতে পারে ৯.৯%। বার্কলেজ়-এর অনুমান বৃদ্ধির হার হতে পারে ৯.২%। ডিবিএস ব্যাঙ্ক বলছে ৭.৬%।
যদিও খারাপ খবর নেই এমনটা বলা যাবে না। প্রথমেই যেমন বলব, বৃদ্ধি সম্পর্কে সমস্ত অনুমান কিন্তু আগের বছরের নিচু ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে। নভেম্বরে দেশের মূল আটটি পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে ২.৬%। এই নিয়ে টানা ন’মাস। রাজকোষে ঘাটতি বাড়ছে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে ধারও বাড়ছে সরকারের।
তবু প্রত্যাশায় ঘাটতি নেই। তাতে আগামী দিনে ঘি ঢালবে টিকা। কিছু দিনে মধ্যে শুরু হবে সংস্থাগুলির ২০২০-২১ অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক ফল প্রকাশের পালা। প্রত্যাশা বৃদ্ধির জ্বালানি হতে পারে সেটাও।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy