চৈত্রের আকাশে সঙ্কটের মেঘ ঘনাচ্ছে উত্তরের চা বলয়ে। কাঁচা পাতার দাম পড়ছে, কমছে উৎপাদন। ছোট চা বাগানের মালিকপক্ষ শ্রমিক সংগঠনকে জানিয়েছে, এর ফলে চুক্তি অনুযায়ী এপ্রিল থেকে মজুরি বৃদ্ধি সম্ভব নয়। তা বাড়বে জুন থেকে। গত বছর হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ছোট বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ১৩ টাকা করে বেড়ে ২১৫ টাকা হওয়ার কথা। শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে একাংশের বক্তব্য, পাতার দাম কম থাকলেও চায়ের বাজার খারাপ নয়। যে কারণে মালিকপক্ষের প্রস্তাব না মানারই দাবি উঠছে।
কিছু দিন ধরে ছোট বাগানের কাঁচা পাতার দাম কেজি প্রতি ১৮ টাকার আশপাশে। যা এই সময়ে ৩০ টাকা হওয়ার কথা। সূত্রের দাবি, পাতার মানও ভাল নয়। পরিমাণ মতো বৃষ্টি না পাওয়া চৈত্র মাসে চা পাতা ‘খসখসে’ হয়ে গিয়েছে। তাতে স্বাদ-গন্ধ নেই। ছোট বাগানের পাতা কিনে চা তৈরি করে বটলিফ কারখানা। সেগুলির পরিচালকদের সংগঠনের দাবি, অনেকটা পাতা ফেলে দিতে হচ্ছে। ফলে দাম কম। এই পরিস্থিতিতে চা চাষিরা কাঠগড়ায় তুলেছেন চা পর্ষদের সিদ্ধান্তকে। গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে, মরসুম শেষের আগেই পাতা তোলা বন্ধ করেছিল পর্ষদ। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “মরসুম শেষ হওয়ার আগেই পাতা তোলা বন্ধ হওয়ায় আমাদের ক্ষতি হয়েছে। এখন পাতার দাম কম। অথচ রোগপোকা মারা থেকে জলসেচের খরচ বাড়ছে। কী ভাবে শ্রমিকদের বর্ধিত হারে মজুরি হবে?”
তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হারাধন দাস বলেন, “অবশ্যই শিল্পের স্বার্থ দেখতে হবে শ্রমিকদের। তবে গরিব শ্রমিকদের কথাও ভাবতে হবে মালিককে। মরসুমের শুরু থেকে চায়ের বাজার খারাপ ছিল না বা এখনও খুব খারাপ নেই। দীর্ঘদিন আগের সিদ্ধান্তে নড়চড় হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তা ছাড়া ছোট বাগানের পিএফ-সহ আনুষঙ্গিক খরচ কম, তাই লাভও বেশি। মজুরির প্রস্তাব নিয়ে আমাদের এখনও আলোচনা হয়নি।” বাগান মালিকদের অবশ্য দাবি, এপ্রিল থেকে না বাড়লেও, অগস্টের মধ্যে বকেয়া বর্ধিত হারের মজুরি মেটানো হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)