—প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব অর্থনীতির যা অবস্থা, তার নিরিখে খুব একটা খারাপ কাটেনি সম্বৎ ২০৭৯। বিশ্বে জোগান-শৃঙ্খল নিয়ে সমস্যা, মূল্যবৃদ্ধির চড়া হার এবং সেই কারণে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে নাগাড়ে সুদ বৃদ্ধি, পশ্চিমী দুনিয়ায় ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতির মতো নানা কারণে বছর জুড়েই চঞ্চল ছিল শেয়ার বাজার। তবে এত সমস্যা সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতি ভাল জায়গায় থাকায় বাজার কিন্তু অনেকটাই লাভের সন্ধান দিয়েছে শেয়ার ও ফান্ডে লগ্নিকারীদের। পাশাপাশি সুদ বেড়েছে বেশ কিছু আমানত প্রকল্পেরও। ফলে সব মিলিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির লগ্নিকারীরাই গত বছরের প্রাপ্ত রিটার্নে খুশি বলা চলে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত সম্বতে সেনসেক্স বেড়েছে ৮.৪৮% বা ৫০৭৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ, মূল্যবৃদ্ধির হারকে ছাপিয়ে রিটার্নের মুখ দেখা গিয়েছে। বিএসই-র লগ্নিকারীদের সম্পদ বেড়েছে ৪৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। একই সময়ে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে নিফ্টিও। তবে শেয়ারমূল্যের বিচারে হিসাব করলে সব চেয়ে বেশি রিটার্ন দিয়েছে মাঝারি ও ছোট সংস্থাগুলি। গত এক বছরে নিফ্টি মিডক্যাপ বেড়েছে ৩২% এবং নিফ্টি স্মল ক্যাপ ৩৭%। যার হাত ধরে শেয়ার ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা ন্যাভ-ও মাথা তুলেছে বেশ আকর্ষণীয় হারে।
সম্বতে বাজার
· সেনসেক্স উঠেছে ৫০৭৩.০২ পয়েন্ট। সদ্য সমাপ্ত ২০৭৯ সম্বতে থেমেছে ৬৪,৯০৪.৬৮ অঙ্কে।
· নিফ্টির উত্থান ১৬৯৪.৬ পয়েন্ট। বছর শেষ করেছে ১৯,৪২৫.৩৫ অঙ্কে।
· বিএসই-র লগ্নিকারীদের সম্পদ বেড়েছে ৪৩.৮১ লক্ষ কোটি টাকা। হয়েছে ৩,২০,২৯,২৩২.২৪ কোটি।
· তবে সেনসেক্স ৬৭ হাজারের উপরে উঠে নতুন রেকর্ড করলেও, সেই উত্থান বছর শেষে ধরে রাখতে পারেনি।
· বন্ডের ইল্ড বা প্রকৃতআয় ৭.৫১% থেকে কমে হয়েছে ৭.৩০%।
· বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শেয়ারে নিট পুঁজি ঢেলেছে ৮০,৫০০ কোটি টাকা।
· বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নি পৌঁছেছে ১.৩৮ লক্ষ কোটি টাকায়।
শুধু তা-ই নয়, রবিবার নতুন ২০৮০ সম্বতের শুরুতেও বাজারে উত্থান দেখা গিয়েছে। সেনসেক্স ও নিফ্টি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৫৫ এবং ১০০ পয়েন্ট। তা আগামী দিনেও লগ্নিকারীদের খুশি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত গত এক বছরের পরিসংখ্যান উৎসাহ দিচ্ছে তাঁদের। যা বলছে, এই সময়ে বেশ কিছু দিন ভারতের বাজার থেকে লগ্নি তুলে নিলেও, সামগ্রিক ভাবে এ দেশের শেয়ারে ৮০,০০০ কোটি টাকারও বেশি ঢেলেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। পিছিয়ে থাকেনি মিউচুয়াল ফান্ডও। সব ফান্ড মিলিয়ে শেয়ারে ঢালা হয়েছে ১.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা। এই সমস্ত লগ্নির কারণেই মাঝেমধ্যে পতন সত্ত্বেও একেবারে ঝিমিয়ে পড়েনি সূচক।
অর্থনীতি কোথায় দাঁড়িয়ে
· সেপ্টেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৫.০২%।
· ওই মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি শূন্যের ০.২৬% নীচে।
· ডলারের দর ৮৩.২৮ টাকা।
· রেপো রেট ৬.৫%।
· পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট ১০ গ্রাম) ৬০,৪৫০ টাকা।
· বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দর ব্যারেলে ৮১.৪৩ ডলার।
· কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে পেট্রল লিটারে ১০৬.০৩ টাকা।
· ডিজ়েল ৯২.৭৬ টাকা।
· গত মাসে জিএসটি আদায় ১.৭২ লক্ষ কোটি টাকা। যা এ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বাধিক।
লগ্নিকারীরা ভারতের অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজার সম্পর্কে বিশেষ আশাবাদী। যে কারণে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শুধু অক্টোবরেই এই ফান্ডে এসেছে ১৯,৯৫৭ কোটি টাকা। যা কি না সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৫৮৬৬ কোটি টাকা বেশি। ফলে ফান্ড সংস্থা পরিচালিত সম্পদের পরিমাণও বেড়ে পৌঁছেছে ৪৮.৫২ লক্ষ কোটি টাকায়।
মানুষের মনে এখন প্রশ্ন জাগছে কেমন যাবে নতুন ২০৮০ সম্বৎ?
অর্থনীতি সম্পর্কে যা পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তা কিছুটা পরস্পর বিরোধী। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে উৎসবের মরসুমে বাড়ি, গাড়ি শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র বিপুল হারে বেড়েছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অথচ শিল্প এবং পরিষেবা বৃদ্ধির হারে তার প্রতিফলন সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। অক্টোবরে এই দুই ক্ষেত্রেই মাথা নামিয়েছে পিএমআই সূচক। গত শুক্রবার প্রকাশ হওয়া সরকারি পরিসংখ্যান আবার বলছে, অগস্টের ১০.৩ শতাংশের থেকে সেপ্টেম্বরে শিল্পোৎপাদন সূচক নেমে এসেছে ৫.৮ শতাংশে। যা কিছুটা চিন্তার কারণ।
এ দিকে, এই দফায় আমেরিকা সুদ বাড়ানো থেকে বিরত থেকেছে। কয়েক মাস হল ভারতেও সুদ বাড়ানো বন্ধ রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে এনে যদি দেশে পরের অর্থবর্ষের শুরুতে সুদ কমানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা হলে সেটা শেয়ার বাজারকে আরও মদত জোগাবে। এর প্রভাবে চাঙ্গা হতে পারে বন্ডের বাজারও। এর পরেই দেশে শুরু হবে লোকসভা ভোটের মরসুম। পরিস্থিতি অনুসারে তার আগে এবং পরে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে শেয়ারে। যদিও অর্থনীতি পাকাপোক্ত জায়গায় থাকলে, এই সব ঘটনার প্রভাব সাময়িক হওয়ারই কথা।
তবে এটা বলা যায় নতুন সম্বতে সূচকের চালিকা শক্তি হবে অর্থনীতিই। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞদেরই ধারণা, বাড়বে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার পিছু আয়। অনুকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে উপরের দিকেই থাকবে বাজার। তবে তাঁরা বলছেন, আপাতত আজ, সোমবার অক্টোবরের খুচরো মূল্যবৃদ্ধি জানা যাবে। মঙ্গলবার বেরোবে পাইকারি বাজার দর। ফলে এই সপ্তাহে এই দুই বিষয়ই চালনা করবে সূচককে। তার উপরে এ মাসে এখনও পর্যন্ত ৫৮০০ কোটি টাকারও বেশি তহবিল ভারত থেকে তুলে নিয়েছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। তাদের গতিবিধিতেও নজর রাখবে বাজার। উল্লেখ্য, অক্টোবরে তারা ২৪,৫৪৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছিল। সেপ্টেম্বরে সেই অঙ্ক ছিল ১৪,৭৬৭ কোটি। ফলে সব দিক দেখেই লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে হবে মানুষকে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy