রাণা কপূর
মুম্বইয়ের হাওয়ায় দাউদ ইব্রাহিমের যোগাযোগ যেন থাকবেই! রাণা কপূরের বাসভবনে তল্লাশি চালাতে গিয়েও উঠে এল ডি-কোম্পানির নাম!
ইয়েস ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রাক্তন সিইও রাণা কপূরের ওরলি-র বাড়ি ‘সমুদ্র ভবনে’ ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) গত রাত থেকেই তল্লাশি শুরু করেছিল। রাতভর তল্লাশির পরে ইডি-কর্তারা জানতে পারলেন, দেওয়ান হাউজিং ফিনান্স লিমিটেড (ডিএইচএফএল)-এর মালিক ধীরজ ওয়াধাবনের সংস্থা আর কে ডব্লিউ ডেভেলপার্স-কে ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক। যে আর কে ডব্লিউ ডেভেলপার্সের সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিমের একদা ডান হাত ইকবাল মেমন ওরফে ইকবাল মির্চির কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল বলে আগেই জানা গিয়েছে।
ইয়েস ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের তদন্তে নেমে গত রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত তল্লাশি চালায় ইডি। সঙ্গে রাণাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ সকালে তাঁকে বেলার্ড এস্টেটে ইডি-র দফতরে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এর পরে রাণার তিন কন্যার দিল্লি ও মুম্বইয়ের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সূত্রের খবর, রাণার গ্রেফতারি এখন সময়ের অপেক্ষা। তাঁর দেশ ছেড়ে পালানো আটকাতে লুক-আউট সার্কুলারও জারি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘টেম্পো এসেছে, তার মানে রুটি মিলবে এ বার!’
ইডি সূত্রের বক্তব্য, রাণা ইয়েস ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে থাকার সময় এমন বহু সংস্থাকে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল, যারা লোকসানে ডুবে রয়েছে। ঋণ শোধ না-হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও মূলত রাণার নির্দেশেই ব্যাঙ্কের কর্তারা ঋণ মঞ্জুর করেন। বিনিময়ে ওই সংস্থাগুলি রাণা, তাঁর স্ত্রী ও তিন কন্যার মালিকানাধীন বিভিন্ন সংস্থায় টাকা ঢেলেছিল। অর্থাৎ, ইয়েস ব্যাঙ্কে আমজনতার সঞ্চয়ের টাকা ঘুরপথে রাণা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সিন্দুকে চলে যায়।
কিন্তু ডি-কোম্পানির নাম কী ভাবে উঠে এল? ইডি-সূত্রের বক্তব্য, ডিএইচএফএল-এর সূত্র ধরেই ইয়েস ব্যাঙ্কের সঙ্গে ডি-কোম্পানির যোগাযোগ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইডির ব্যাখ্যা, ইকবাল মির্চি মূলত ডি-কোম্পানির মাদক ব্যবসা চালাত বলে অভিযোগ। মির্চি ২০১৩-য় লন্ডনে মারা যায়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডিএইচএফএল-কেলেঙ্কারি নিয়ে ইডির তদন্তে তার নাম ফের উঠে আসে। ডিএইচএফএল মির্চির পরিবারের থেকে ২,১৮৬ কোটি টাকার সম্পত্তি কিনেছিল। এই টাকা ভুঁইফোঁড় সংস্থা সানব্লিঙ্কের মাধ্যমে দুবাইয়ে ডি-কোম্পানির কাছে পৌঁছে যায়। যা পরে সন্ত্রাসবাদে মদত, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের কাজে লাগানো হয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। ২৭ জানুয়ারি ডিএইচএফএলের সিএমডি কপিল ওয়াধাবনকে গ্রেফতার করে ইডি।
ইডি সূত্রের খবর, মির্চির সঙ্গে লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল কপিলের ভাই ধীরজের সংস্থা আর কে ডব্লিউ ডেভেলপার্স। তাদের ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক। যার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা মেলেনি। আর কে ডব্লিউ-এর সঙ্গে লেনদেনের জেরে বলিউডের অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টি ও তাঁর স্বামী রাজ কুন্দ্রাকেও আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ঋণশোধের সম্ভাবনা নেই জেনেও রাণার নির্দেশে ইয়েস ব্যাঙ্ক ডিএইচএফএল-কে বিপুল পরিমাণ ঋণ মঞ্জুর করে। তার বিনিময়ে রাণার পরিবারের মালিকানাধীন সংস্থা ডু-ইট আরবান ভেঞ্চার্সকে আবার ডিএইচএফএল ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। তবে ইয়েস ব্যাঙ্কের টাকা তারা শোধ করেনি।
এই ডু-ইট আরবান ভেঞ্চার্সের ডিরেক্টর পদে ছিলেন রাণার স্ত্রী বিন্দু, তিন কন্যা রাখি কপূর টন্ডন, রোশনি কপূর ও রাধা কপূর। সংস্থার কোনও কর্মী না-থাকলেও অন্তত ২০টি শাখা সংস্থা ছিল। ইডি কর্তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, চন্দা কোছরের নেতৃত্বে আইসিআইসিআই যে সব সংস্থাকে ঋণ দিয়েছিল, তারা চন্দার স্বামী দীপকের সংস্থায় টাকা ঢেলেছিল। ইয়েস ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও লোকসানে চলা সংস্থাকে ঋণ পাইয়ে দিয়ে রাণা স্ত্রী-র অ্যাকাউন্টে ঘুষের টাকা নিয়েছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলায় ‘সিটিজেনস হুইসল-ব্লোয়ার ফোরাম’ আবার অভিযোগ করেছে, ইয়েস ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়াবুলস গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছিল। যার মধ্যে ২,১৮৩ কোটি টাকা এমন আটটি সংস্থাকে দেওয়া হয়, যাদের সম্পদের থেকেও দেনার পরিমাণ ছিল বেশি। ইন্ডিয়াবুলস তার বিনিময়ে রাণা, তাঁর স্ত্রী-কন্যার মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঢালে। ইন্ডিয়াবুলস অবশ্য সেই সময় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিল, ইয়েস ব্যাঙ্কের বকেয়া পাওনা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy