আক্ষরিক অর্থেই তল পাচ্ছে না তেলের দাম। বছর তিনেক আগেও যে দর ব্যারেলে ১২০ ডলারের আশেপাশে ছিল, তা সম্প্রতি নেমেছিল ৩০ ডলারের নীচে। ১২ বছরে এই প্রথম। ঘোরাফেরা করছে ৩০-৩৫ ডলারে। তারপরেও চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যের যা হাল, তাতে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ২০ ডলারে নেমে গেলেও আশ্চর্য হবেন না অনেকে।
তখন বিশ্বাস হয়নি
গত বছর মার্কিন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক গোল্ডম্যান স্যাক্স যখন তেল ২০ ডলারে নামার সম্ভাবনার কথা বলেছিল, তখন তা ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছিলেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। অথচ কানাডায় তোলা অশোধিত তেল ইতিমধ্যেই নেমেছে ২০ ডলারে। মধ্য এশিয়ার ১৩টি তেল উৎপাদক দেশের সংগঠন ওপেক-এর তোলা তেলের গড় দরও সম্প্রতি নেমেছে ৩০ ডলারের নীচে। দাম এখন নীচে থাকবে বলে ধরে নিচ্ছে আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারও।
চাহিদা কম, জোগান বেশি
২০১৪ সালের মাঝ পর্যন্তও বিশ্ব বাজারে তেল ছিল ১০০ ডলারের বেশি। সেখান থেকে তা এ ভাবে নেমে আসার কারণ চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি জোগান।
কব্জা কায়েমের যুদ্ধ
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের বাজার দখলের জন্য আসলে ‘রক্তক্ষয়ী’ যুদ্ধ চলছে উৎপাদক দেশগুলির মধ্যে। ছ’বছরে অশোধিত তেলের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ করেছে আমেরিকা। তা এশিয়ার লোভনীয় বাজারে বেচতে চায় তারা। বাজারে নিজেদের কব্জা কায়েম রাখতে বদ্ধপরিকর সৌরি আরব-সহ ওপেক দেশগুলিও। তাই দাম ক্রমাগত কমা সত্ত্বেও উৎপাদন ছাঁটাই করেনি তারা। চলছে টানটান স্নায়ুর লড়াই।
শেল বনাম শেখ
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, লড়াইয়ের শুরুটা শেল বনাম শেখ থেকে। পাথরের খাঁজে আটকে থাকা শেল গ্যাসকে তেলের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছিল আমেরিকা। প্রমাদ গুনলেন আরব শেখেরা। শঙ্কিত রাশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়ার মতো দেশও। তেল-গ্যাসই যাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। দামের লড়াইয়ে শেল গ্যাসকে হারাতে শুরু হল তেলের উৎপাদন বাড়ানো। যাতে সেই বাড়তি জোগানে তেলের দর কমে। পিছু হটে শেল গ্যাস। সেই সঙ্গে, তেলের বাজারের দখল কার হাতে কতখানি থাকবে, তা নিয়েও লড়াই জোরালো হতে থাকে ক্রমশ।
নাক কেটে যাত্রাভঙ্গ
২০১৫ সালে তেলের দর টানা কমতে থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটেনি প্রায় কোনও দেশই। এমনকী এখন, যেখানে তেল বেচে তা তোলার খরচ জোগাড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনও উৎপাদন কমানোর নাম নেই কারও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিপুল লোকসান গুনেও গত বছর উৎপাদন না-কমানোর পিছনে রয়েছে স্নায়ুর লড়াই। সকলেই মনে করছে, ক্ষতির বোঝা আর টানতে না-পেরে রণে ভঙ্গ দেবে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী। জোগান কমবে। ফের বাড়তে শুরু করবে দামও।
আশায় বালি, নড়বড়ে চিন
২০১৫ সালের শেষ দিকে এসে ওই আশাও জোর ধাক্কা খেল। তেল উৎপাদক দেশগুলি মনে করেছিল, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ছন্দে ফিরবে বিশ্ব অর্থনীতি। চাহিদা বাড়বে তেলের। কিন্তু হল উল্টোটা।
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাথমিক লক্ষণ চোখে পড়লেও, এখনও পুরোপুরি চাঙ্গা নয় মার্কিন অর্থনীতি। যেখানে তেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চাহিদায় শৈত্য বহাল ইউরোপীয় দেশগুলিতেও। আর এই সবের সঙ্গে বিরাট ধাক্কা চিনের অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে পড়া। তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম খরিদ্দার ওই দেশে শেয়ার বাজার টালমাটাল। কমছে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের দর। ফলে অদূর ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা বাড়ার লক্ষণ নেই। অথচ উল্টো দিকে, গত বছরের অতিরিক্ত উৎপাদনের জেরে জমে রয়েছে ৩০০ কোটি ব্যারেল।
ষড়যন্ত্র!
অনেকে অবশ্য বলছেন, তেল তলানিতে ঠেকার কারণ অন্য এক কূটনৈতিক লড়াই। তাঁদের মতে, রাশিয়ার অর্থনীতির মূল স্তম্ভ তেল ও গ্যাস। তেলের দর তলানিতে ঠেলে আসলে তাদের খাদের কিনারায় পৌঁছে দিতে চায় আমেরিকা। যাতে তেলের বাজারে কায়েম করা যায় আধিপত্য। রাশিয়া, ব্রাজিলের পায়ের তলার জমি কেড়ে আগামী দিনে মোটা মুনাফার মুখ দেখতে চায় ওপেক দেশগুলিও। বিশেষজ্ঞদের মতে, তেল ঘিরে এ-ও এক ঠাণ্ডা লড়াই। যার মীমাংসা না-হওয়া পর্যন্ত দরের তল খোঁজা শক্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy