Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Crude Oil Price

কমতে কমতে ৭১ ডলারে নামল অশোধিত তেল, তবু দেশের বাজারে কেন কমছে না জ্বালানির দাম?

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকে। ব্যারেল প্রতি পৌঁছে যায় ১৩৯ ডলারে। কিন্তু এখন সেই চাকা উল্টো দিকে ঘুরছে। তেলের দাম সেই সময়ের প্রায় অর্ধেক।

An image of Crude Oil

অশোধিত তেল ডব্লিউটিআই-এর ব্যারেল ঠেকেছে ৬৬.৪৬ ডলারে। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩২
Share: Save:

পেট্রল-ডিজ়েলের দাম না কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বরাবর বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া দরের দিকে আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। সেই ব্রেন্ট ক্রুড সোমবার এক সময় নামল ৭১ ডলারের নীচে। ফলে দেশ জুড়ে প্রশ্ন, এ বার বিশ্ব বাজারে জ্বালানি সস্তা হওয়ার সুবিধা কবে পৌঁছে দেওয়া হবে সাধারণ মানুষের ঘরে। বিশেষত এক সময় আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেখানে তা চড়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, দেশবাসীকে সুরাহা দেওয়ার বদলে দীর্ঘ দিন ধরে তেলের থেকে আদায় হওয়া চড়া করে রাজকোষ ভরিয়ে চলেছে মোদী সরকার। নিস্তার মিলছে না অশোধিত তেল সস্তা হওয়ার পরেও। অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানোর এটাই সুবর্ণ সুযোগ। তাতে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকে। ব্যারেল প্রতি পৌঁছে যায় ১৩৯ ডলারে। কিন্তু এখন সেই চাকা উল্টো দিকে ঘুরছে। তেলের দাম সেই সময়ের প্রায় অর্ধেক। এ দিন বিকেলে ব্রেন্ট ক্রুড ৭১ ডলারের নীচে নামে। রাতের দিকে ছিল ৭২ ডলারের আশেপাশে। আর এক অশোধিত তেল ডব্লিউটিআই-এর ব্যারেল ঠেকেছে ৬৬.৪৬ ডলারে। অথচ গত প্রায় ১০ মাস ধরে দেশে তেলের দাম স্থির। কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রল ১০৬.০৩ টাকা। ডিজ়েল বিকোচ্ছে ৯২.৭৬ টাকায়। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করাচ্ছে, তেলের চড়া দরের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা যখন তা বিদেশে রফতানি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছিল, তখন গত জুলাইয়ে সেই পড়ে পাওয়া মুনাফায় কর (উইন্ডফল ট্যাক্স) বসিয়েছিল কেন্দ্র। অশোধিত তেল ৭৫ ডলারের উপরে থাকলে সংস্থাগুলির বাড়তি মুনাফা হয় ধরে সেই করের হিসাব কষা হয়। তেলের দাম কমায় সেই করের হারও এখন সর্বনিম্ন। কেন্দ্র সংস্থাগুলির উইন্ডফল কর কমিয়েছে। কিন্তু তেলের দাম কমার সুফল সাধারণ মানুষের পকেট পর্যন্ত পৌঁছয়নি।

ভারতের তেলের চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম যেমন কমেছে, তেমনই এই আমদানিকৃত তেলের ৩৫% এখন রাশিয়া থেকে আসছে। যে দাম ৬০ ডলারের আশেপাশে। ফলে তেলের আমদানি খরচও কমাতে পেরেছে ভারত। বিরোধীদের প্রশ্ন, তার সুবিধা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া না গেলে লাভ কার?

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সুদ বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে যে রাশ টানা যাচ্ছে না সেটা পরিষ্কার। এই অবস্থায় তেলের দাম কমানো এর বিকল্প রাস্তা হতে পারে। তাতে জিনিসপত্রের দাম কমবে। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের কথায়, ‘‘মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে তেলের দাম ছাঁটাই। বিশেষত খাদ্য-সহ অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ যেহেতু দামি জ্বালানি। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল সস্তা হয়েছে। ফলে দেশেও দাম কমানোর সুযোগ এসেছে। এর সদ্ব্যবহার করা উচিত।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সুদের হার বাড়িয়ে চাহিদা কমানো যায়। কিন্তু ভারতে মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ ছিল জোগানের অভাব। এই অবস্থায় সুদ বাড়াতে গিয়ে আর্থিক অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার মুখে।’’

অর্থনীতির অধ্যাপক মহানন্দা কাঞ্জিলালের বক্তব্য, ‘‘ভারতে মূল্যবৃদ্ধির হার ধারাবাহিক ভাবে চড়া থাকার অন্যতম কারণ পেট্রল-ডিজ়েলের অতিরিক্ত দাম। যা সরাসরি ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল এখন নিম্নমুখী হলেও দেশে পেট্রোপণ্যের দাম কমেনি। কেন্দ্র ও রাজ্য, তেলে দুই সরকারের করের হারই চড়া।’’ তিনি আরও বলেন, সুদ বাড়িয়ে সব সময় মূল্যবৃদ্ধিকে যে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না তা প্রমাণ হচ্ছে। বরং এতে আর্থিক বৃদ্ধি শ্লথ হয়। এ ক্ষেত্রে জোগান বৃদ্ধির পাশাপাশি পেট্রোপণ্যে করের হার কিছুটা কমালে তা মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে সাহায্য করবে।

অন্য বিষয়গুলি:

crude oil price Fuel Price Indian Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE