ভারত ৭.৩ শতাংশ। চিন ৬.৭ শতাংশ। বুধবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাতীয় আয় বৃদ্ধির এই তুল্যমূল্য বিচারে দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির দেশের তকমা আপাতত ধরে রাখল ভারত।
কিন্তু প্রদীপের নীচেই রয়েছে অন্ধকার, এমনটাই আঁচ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তার কারণ, সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্স অফিস-এর ওই পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, স্থায়ী মূলধন তৈরি বা ‘গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফর্মেশন’ কমেছে, যা লগ্নি কমা অর্থাৎ অর্থনীতির পক্ষে অশনি সঙ্কেতেরই ইঙ্গিত বলে তাঁরা জানিয়েছেন। আর্থিক বৃদ্ধিতে মূলত ইন্ধন জুগিয়েছে সাধারণ মানুষের খরচ ও সরকারি লগ্নি। এর উপর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকেই পড়বে মোদী সরকারের বড় অঙ্কের নোট বাতিলের প্রভাব, যা ভারতের মতো নগদ নির্ভর অর্থনীতি থেকে অক্সিজেন শুষে নেওয়ারই সামিল বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। কারণ, তা টেনে নামাবে ওই সাধারণ ক্রেতার খরচকেই, ভারতের আর্থিক কর্মকাণ্ডে যার অবদান ৫৫ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ টিসিএ অনন্ত বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘নোট বাতিলের বিরূপ প্রভাব নিয়ে অনেকেই যা বলছেন, তার পিছনে তথ্যের কোনও ভিত্তি নেই। অনেক কিছু ধরে নিয়ে তাঁরা মন্তব্য করছেন। পরিসংখ্যান হাতে এলে তবে বিবৃতি দেব।’’
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি বৃদ্ধির হার ছুঁয়েছে ৭.৩ শতাংশ, যার জন্য সাধারণ ভাবে ৩.৩ শতাংশ হারে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকেই কৃতিত্ব দিয়েছে সরকারি পরিসংখ্যান। আগের ত্রৈমাসিক এপ্রিল থেকে জুনে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.১ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে অবশ্য এই হার ছিল ৭.৬ শতাংশ। পাশাপাশি, এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে রাজকোষ ঘাটতি বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ৭৯.৩ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে বলেও বুধবারের পরিসংখ্যানে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। টাকার অঙ্কে তা ৪.২৪ লক্ষ কোটি। ২০১৭-র মার্চ পর্যন্ত ধরা লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে এই হিসেব দাখিল করা হয়েছে। গত বছর এই একই সময়ে রাজকোষ ঘাটতি ছিল ওই লক্ষ্যের ৭৪ শতাংশ।
এ দিন প্রকাশিত জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যান অনুসারে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ, খনন ক্ষেত্রে তা পড়েছে ১.৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জল সরবরাহ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উৎপাদন বেড়েছে ৩.৫ শতাংশ, নির্মাণ শিল্পে ৩.৫ শতাংশ। আগের বছরে বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ৭.৫ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ। কল-কারখানার উৎপাদন বেড়েছে ঢিমেতালে। গত বছরের ৯.২ শতাংশ থেকে তা কমে হয়েছে ৭.১%।
স্থায়ী মূলধন তৈরির পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বাজার দরের ভিত্তিতে তা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে সরাসরি কমেছে ৩.২ শতাংশ, যেখানে গত বছর একই সময়ে তা বেড়েছিল ৭.৫ শতাংশ। আর, মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব এড়াতে ২০১১-’১২ সালের দরকে ভিত্তি করে হিসেবে ধরলে তা কমেছে ৫.৬ শতাংশ, যেখানে গত বছরের বৃদ্ধির হার ৯.৭ শতাংশ।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের আর্থিক বৃদ্ধির হার ভাল হলেও নিশ্চিন্ত থাকার যে কারণ নেই, সাধারণ ভাবে সেই ইঙ্গিতই এ দিন দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা। যেমন, মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার বলেন, ‘‘আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে কম হারেই বেড়েছে জিডিপি। কৃষি উৎপাদন বাড়লেও তা ছিল পূর্বাভাসের চেয়ে কম, খনন শিল্পে উৎপাদন পড়েছে।’’ ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র কুমার পন্থের মতেও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধির হার নিয়ে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘‘এই হার শুধু যে প্রত্যাশার চেয়ে যথেষ্ট নীচে, তা-ই নয়, স্থায়ী মূলধন তৈরি কমেছে এই তিন মাসে, যা উদ্বেগজনক। বৃদ্ধি শুধু ক্রেতার গৃহস্থালির খরচের উপর ভর করেই এগিয়েছে। লগ্নির চাকায় গতি ফেরেনি। নোট বাতিলের পরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হবে। ফলে তৃতীয় ও চতুর্থ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার যে কমবে, তাতে সন্দেহ নেই।’’ গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকনমিক্স-এর অর্থনীতিবিদ শিলান শাহ বলেন, ‘‘অর্থনীতির নগদ-নির্ভর কাজকর্মের উপর আগামী দিনে নোট নাকচের প্রভাব বেশি পড়বে।’’
সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ইতিমধ্যেই বলেছেন, নোট বাতিলের বিরূপ প্রভাব আগামী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের আর্থিক বৃদ্ধির উপর পড়লেও, সেই ধাক্কা হবে সাময়িক।
আগাম হিসেব। চলতি অর্থবর্ষের আর্থিক বৃদ্ধির আগাম হিসেব আগামী ৭ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন অনন্ত। অন্য বছরের তুলনায় তা এক মাস এগিয়ে আনা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy