—প্রতীকী ছবি।
বহু দিন ধরে রান্নার গ্যাসের দাম হাজার টাকার উপরে। তেলের চড়া দরের কারণে যাতায়াতের খরচ অনেক বেড়েছে। দামি হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছু। বাজারে চাল, গম, ডাল, আনাজ ইত্যাদি কিনতে গিয়ে বাড়তি খরচের চোটে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা স্বল্প বা সাধারণ রোজগেরে নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত মানুষের। গোটা পরিস্থিতি তাঁদের পক্ষে কতটা উদ্বেগজনক, সোমবার তা উঠে এল মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিলের রিপোর্টেও। সেখানে জানানো হয়েছে, গত মাসে দেশে নিরামিষ থালি তৈরির খরচ জুনের তুলনায় ২৮% বেড়েছে। এর মূল কারণ টোম্যাটো। চড়া বাকি আনাজ এবং ডালও। তবে আমিষ থালি তৈরির খরচ তুলনায় কম পড়ছে। কারণ মাংসের দাম জুলাইয়ে একটু কমেছে। যদিও আমিষ পাতের রান্নার খরচও জুনের থেকে বেড়েছে ১১%। উল্লেখ্য, নিরামিষ থালিতে রাখা হয়েছে রুটি, ভাত, আনাজ, ডাল, দই এবং স্যালাড এবং আমিষে ডালের বদলে মাংস। বিভিন্ন রাজ্যের বাজার অনুযায়ী পণ্যগুলির দাম অবশ্য কিছুটা আলাদা হতে পারে।
ডয়েশ ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস, খাদ্যপণ্যের দাম জুলাইয়ে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারকে ৭ শতাংশের কাছাকাছি (৬.৭%) তুলে দিতে পারে। জুনে ছিল ৪.৮১%। মুম্বই থেকে সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট, জুলাইয়ে টোম্যাটোর দাম বেড়েছে ২৩৬.১%, পেঁয়াজ বেড়েছে ১৫.৮%, আলু ৯.৩%। এই তিনটি পণ্য মিলে মূল্যবৃদ্ধির হার ৮৭.১%। ২২টি অপরিহার্য খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে বেড়ে গিয়েছে ১২.৩%। জুনে এই বৃদ্ধি ছিল মাত্র ২.৪%।
খাদ্যপণ্যের দামের গতিপ্রকৃতি নিয়ে এ দিন প্রকাশিত হয়েছে ক্রিসিলের ‘রোটি রাইস রেট’ (ভাত-রুটির হার) রিপোর্ট। সংস্থার দাবি, আনাজ, ডাল, মাংস ইত্যাদি-সহ বিভিন্ন কাঁচামালের দামের ভিত্তিতে ভারতের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে গৃহস্থের বাড়িতে আমিষ-নিরামিষ খাবার রান্না করে থালি তৈরির খরচ হিসাব করা হয়েছে। ফলে সেখানে ধরা পড়েছে এক মাসের মধ্যে সাধারণ মানুষের আর্থিক বোঝা কতখানি বেড়েছে। রান্নার গ্যাস, ভোজ্য তেল এবং মশলার খরচও ধরা হয়েছে হিসাবে। এই নিয়ে টানা তিন মাস বাড়ল থালির দাম। তবে আগের অর্থবর্ষের সঙ্গে তুলনায় এ বার বৃদ্ধি এই প্রথম।
সংস্থার দাবি, নিরামিষ থালি তৈরির খরচ এত বেড়েছে টোম্যাটোর জন্য। তাকে আরও উপরে ঠেলে তুলেছে পেঁয়াজ, আলুর বেড়ে যাওয়া দর। লঙ্কা এবং জিরের মতো মশলাও গত মাসে চড়েছে বলে জানিয়েছে ক্রিসিল। তবে পরিমাণের নিরিখে রান্নায় তা লাগে কম পরিমাণে। ফলে থালি তৈরির খরচে তার প্রভাব পড়েছে কম। আমিষ থালির দাম বৃদ্ধির গতি অবশ্য নিরামিষের তুলনায় কম। ক্রিসিলের দাবি, এই পাতে খরচের ৫০ শতাংশের বেশি যায় মাংসেই। যা জুলাইয়ে খানিকটা সস্তা হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির এই উদ্বেগজনক আবহে ভোজ্যতেলের দাম কমাও কিছুটা স্বস্তির বলে দাবি তাদের।
আনাজের আকাশছোঁয়া দাম সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গরিবদের চূড়ান্ত সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছে, মন্তব্য আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে বহু মানুষ আছেন, যারা শুধু নিরামিষ খান। সরকারের উচিত অবিলম্বে তাঁদের সঙ্কট কমানোর ব্যবস্থা করা। কারও পক্ষে খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলা সহজ নয়, কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব। ফলে আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে অনেকের জীবনযাপন আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়বে।’’ পটনা আইআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের মতে, বেশ কিছু এলাকায় প্রয়োজনের তুলানায় বৃষ্টি কম হচ্ছে। যা সমস্যা আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই দ্রুত দাম কমানোর ব্যবস্থা না করলে আর্থিক এবং সামাজিক, দু’দিক থেকেই দেশে সমস্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy