Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

পরিযায়ীদের আইন থেকেও নেই, তোপ ইউনিয়নগুলির

সাধারণ শ্রম আইনগুলির পাশাপাশি ১৯৭৯ সালে শুধু পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ আইনও প্রনয়ন করেছিল কেন্দ্র।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০৩:৩৫
Share: Save:

এ রাজ্য থেকে দিল্লিতে নির্মাণ শিল্পের কাজ করতে গিয়েছেন কামালুদ্দিন। দক্ষ শ্রমিক হিসেবে বেতন মাসে ১৩,০০০ টাকা। অথচ ন্যূনতম বেতন আইন অনুযায়ী, তাঁর পাওয়ার কথা ১৭,৮০০ টাকা। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে পিতলের সামগ্রী তৈরি কারখানায় কাজ করেন ওড়িশার ব্রজমোহন সাহু। অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে পান মাসে ৬২০০ টাকা। যেখানে আইন মানলে, পাওয়ার কথা কমপক্ষে ৮৪০০ টাকা।

করোনার আবহে কামালুদ্দিন, ব্রজমোহনের মতো কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিককে প্রতি দিন চিনছে দেশ। কেউ কাজ খুইয়ে, কপর্দকশূন্য অবস্থায় মাইলের পর মাইল হেঁটে ঘরে ফেরার পথ ধরায়, কেউ বাসে-ট্রাকে রওনা দিয়েও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আর নিজস্ব আস্তানায় ফিরতে না-পারায়। তবে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, পরিযায়ীদের দুর্দশার ছবিটা করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও, বঞ্চনা তাঁদের বরাবরের সঙ্গী। ঠিক ওই কামালুদ্দিন আর ব্রজমোহনের মতো। শুধু যে ন্যূনতম বেতন কম তা নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ইএসআইয়ের সুবিধাও পান না তাঁরা। অথচ দেশের শ্রম আইন অন্যান্য শ্রমিকদের মতো পরিযায়ীদের ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, বাস্তবে ওই আইনের সব সুবিধা থেকে বেশির ভাগ পরিযায়ী শ্রমিকই বঞ্চিত। সেই নালিশ শোনার কোনও সরকারি ব্যবস্থাও কেন্দ্র বা রাজ্য স্তরে নেই।

সাধারণ শ্রম আইনগুলির পাশাপাশি ১৯৭৯ সালে শুধু পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ আইনও প্রনয়ন করেছিল কেন্দ্র। ইন্টারস্টেট মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কমেন (রেগুলেশন অব এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড কনন্ডিশন্স অব সার্ভিস) অ্যাক্ট, ১৯৭৯। তবে অভিযোগ, আইন আছে আইনের মতো। বাস্তবে কোনও প্রয়োগ নেই। সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ‘‘মোদী সরকার এক কদম এগিয়ে নতুন শ্রমবিধি চালুর নামে কার্যত এই আইনটিরও বিলোপ ঘটাতে কোমর বেঁধেছে। ফলে পরিযায়ীদের অবস্থা ফেরাতে কেন্দ্রের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।’’

রক্ষাকবচ খাতায়-কলমেই

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ১৯৭৯ সালে তৈরি বিশেষ আইনে বলা অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল—

ধারা ৬:
কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে সব শ্রমিককে নথিভুক্ত
করতে হবে।
ধারা ১৩:
অন্যান্য স্থায়ী কর্মীদের সমান হারে বেতন ও তাঁদের মতোই অন্যান্য সুবিধা দিতে হবে।
ধারা ১৪:
ডিসপ্লেসমেন্ট (এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা আসার) ভাতা হিসাবে প্রথম কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে মাসিক বেতনের ৫০% এককালীন অনুদান দিতে হবে।
ধারা ১৫:
কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার যাতায়াতের ভাড়া দিতে হবে।
ধারা ১৬:
এ— বেতন নিয়মিত দিতে হবে।
বি— লিঙ্গের ভিত্তিতে বেতনের অঙ্কে ফারাক
থাকা চলবে না। অর্থাৎ সমান কাজে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রমিককে সমান টাকা দিতে হবে।
সি— কাজের পরিবেশ হতে হবে স্বাস্থ্যকর।
ডি— কাজে থাকাকালীন ব্যবস্থা রাখতে হবে বাসস্থানের।
ই— থাকতে হবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা।
এফ— কাজের ক্ষেত্রে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবস্থা করে দিতে হবে সে সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পোশাকেরও।
জি— শ্রমিকের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা বা গুরুতর শারীরিক আঘাতের ক্ষেত্রে উভয় রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকের নিকটতম আত্মীয়কে জানাতে হবে।
ধারা ১৮:
ঠিকাদার বেতন না-দিলে যে-সংস্থায় কর্মী কাজ করেন, তার মালকিকেই তা মেটাতে হবে।

*আইন অনুযায়ী, উপরে উল্লিখিত সব দায়িত্ব হয় শ্রম দফতরে নথিভুক্ত ঠিকাদারকে অথবা মূল নিয়োগকারীকে পালন করতে হবে। যে সব ক্ষেত্রে মালিক সরাসরি পরিযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করেন, সেখানে পুরো দায়িত্ব তাঁরই।

এই বিশেষ আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, পরিযায়ী শ্রমিকদের নথিভুক্ত করে সেই তালিকা সংশ্লিষ্ট দুই রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব ঠিকাদার অথবা সংস্থার মালিকের। কিন্তু অভিযোগ, নথিভুক্তিই হয় না সিংহভাগ ক্ষেত্রে। ফলে পরিযায়ীদের চিহ্নিতকরণে যেমন সমস্যা হয়, তেমনই বন্ধ হয়ে যায় আইন মোতাবেক তাঁদের প্রাপ্য আদায়ের পথ। যে কারণে দেশে মোট কত পরিযায়ী শ্রমিক আছেন তারও ঠিক সরকারি তথ্য নেই। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, তাঁদের সংখ্যা ছিল ৩.৫ কোটি। কেন্দ্র বলছে, এখন তা প্রায় ৮ কোটি। কিন্তু ইউনিয়নগুলির দাবি, সংখ্যাটা ১৪ কোটির কম নয়। কর্মী-শ্রমিক মহলের আক্ষেপ, ওই আইনে পরিযায়ীদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা বা অগ্রিম সংক্রান্ত আরও অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবই তাকে সাজিয়ে রাখা।

তপনবাবু এবং এআইইউটিইউসির সভাপতি শঙ্কর সাহার অভিযোগ, ‘‘পরিযায়ীদের এই অবস্থার জন্য মূলত দায়ী কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিই। কারণ, তাঁরা প্রাপ্য ঠিক মতো পাচ্ছেন কি না, সেটা দেখার কোনও সরকারি ব্যবস্থা নেই।’’ তিনি জানিয়েছেন, পরিযায়ীদের অবস্থার উন্নতির জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি যৌথ ভাবে কেন্দ্রের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। তাতে অন্যান্য কিছুর সঙ্গে পরিযায়ীরা তাঁদের প্রাপ্য ঠিক মতো পাচ্ছেন কি না দেখার জন্য বিশেষ দফতর গঠনের দাবি করা হয়েছে।

এ দিকে, শ্রমিক উন্নয়নের সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান তুলে ধরতে বিশেষ ‘টুইটার হ্যান্ডল’ চালু করল কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার তার উদ্বোধন করেন শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গোয়ার। কিন্তু অনেকের প্রশ্ন, পরিযায়ী শ্রমিকদের বরাতে কতটুকু জুটল বা কাজের বাজারের হাল কেমন, তার সঠিক ছবি সেখানে ফুটবে কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy