প্রতীকী ছবি।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকেই ধুঁকছিল গাড়ি শিল্প। শুরু হয়েছিল কর্মী সংকোচন। সেই সঙ্কট কাটার আগেই দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। দু’মাসেরও বেশি টানা লকডাউনের জেরে সেই অটোমোবাইল শিল্পে অশনি সঙ্কেত। বিক্রি নেই, উৎপাদন বন্ধ। ফলে চলছে বিপুল হারে কর্মী ছাঁটাই। শুধুমাত্র হরিয়ানার গুরুগ্রামের অটোমোবাইল হাবেই ২০ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষ চাকরি খোয়াতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে শিল্প মহল। আরও অন্তত ছ’মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তো নেই-ই, বরং সঙ্কট আরও গভীর হতে চলেছে বলেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষজ্ঞরা।
সবচেয়ে বেশি কোপ পড়ছে অস্থায়ী কর্মীদের উপর। কারণ, তাঁদের ছাঁটাই করার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধ্যকতা নেই সংস্থাগুলির। উপরন্তু স্থায়ী কর্মীদেরও কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে অনেক সংস্থা। সব মিলিয়ে সঙ্কট ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। কর্মী ইউনিয়নগুলি এই সব শ্রমিকের পাশে দাঁড়ালেও তারাও কার্যত পরিস্থিতির কাছে অসহায়।
গুরুগ্রাম-মানেসর-বাওয়াল-কে ঘিরে গড়ে উঠেছে দেশের অটোমোবাইল হাব। মারুতি, হিরো, হন্ডা থেকে শুরু করে অধিকাংশ গাড়ি শিল্পের প্রধান উৎপাদন ক্ষেত্র এই সব এলাকাতেই রয়েছে। এ ছাড়া এই অটোমোবাইল শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রচুর সহযোগী সংস্থা। এই হাবে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের। আর সারা দেশে সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ।
আরও পড়ুন: করোনার উপসর্গ নিয়ে কনস্টেবলের মৃত্যু, পুলিশ বিক্ষোভ গরফা থানায়
হরিয়ানার বণিকসভা সিআইআই-এর ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’-এর চেয়ারম্যান হরভজন সিংহের মতে, লকডাউনের ক্ষত এই অটোমোবাইল হাবে আগ্রাসী রূপ নিয়ে ধেয়ে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘অটোমোবাইল শিল্প অন্তত ৫০ শতাংশ সংকুচিত হতে চলেছে। তার প্রভাব অবশ্যই কর্মসংস্থানে পড়বে। সব ‘অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স’ (ওইএম)-এর বিক্রি তলানিতে নেমে গিয়েছে। বিক্রি কমলে উৎপাদনও কমবে। আর উৎপাদন না হলে কর্মীদের উপর কোপ পড়বেই। কারণ কর্মীদের বসিয়ে মাইনে দেওয়া সম্ভব নয়। কর্মী ছাঁটাই হতে পারে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।’’ আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘চার জন করে এক একটি পরিবার ধরলে সারা দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হবেন। ’’
লকডাউনের জন্য কর্মী ছাঁটাই করেছে এমন বহু সংস্থার মধ্যে রয়েছে বেলসোনিকা অটো কমপোনেন্ট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। মারুতির অন্যতম ‘ভেন্ডর’ এই সংস্থার ১৩০০ কর্মীর মধ্যে ৩০০ অস্থায়ী কর্মীকে ইতিমধ্যেই ছেঁটে ফেলেছে। বেলসোনিকার মানবসম্পদ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার রমেশ কুণ্ডু জানিয়েছেন, উৎপাদন ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। জুলাইয়ে সেটা পৌঁছে যেতে পারে ৪০ শতাংশে। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যে যে বকেয়া হয়েছিল, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে গুরুগ্রামের সব কর্মীকে তা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন ছাড়া কর্মীদের রাখা কঠিন।’’
আরও পড়ুন: ভাঙল প্রাচীন গাছ, যশোর রোডে শুধু সবুজের দেহ
‘রিকো অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ আবার ১১৯ জন স্থায়ী কর্মীকেও ছেঁটে ফেলেছে। তবে আইনি পথে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সংস্থার কর্মী সংগঠন। ইউনিয়নের সভাপতি রাজ কুমার জানিয়েছেন, ৭০ শতাংশ স্থায়ী কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই বিরুদ্ধে শ্রম দফতরে অভিযোগ জানাব।’’ তবে সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। শ্রমিক সংগঠন ‘ইনকিলাবি মজদুর কেন্দ্র’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামবীর শুক্লার মতে, লকডাউনের জেরে সংস্থাগুলি কর্মী ছাঁটাইয়ের অজুহাত পেয়েছে। এতে শ্রমিকদের উপর শোষণ আরও বাড়বে।
কিন্তু এই সঙ্কট যে অদূর ভবিষ্যতে কাটার নয়, তা এখনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, করোনাভাইরাসের জন্য নতুন নিয়মে (সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুরো কর্মীকে এক শিফটে কাজ করানো যাবে না) মালিকপক্ষ চাইলেও উৎপাদন ১০০ শতাংশ করতে পারবেন না। তা ছাড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরে যাওয়ায় দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। অধিকাংশ সংস্থাই ১০ থেকে ৪০ শতাংশ উৎপাদন করছে। পুরোদমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদন শুরু হতে সংস্থা ভেদে আরও অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে। আবার প্রতিটি পণ্যই চাহিদাভিত্তিক। লকডাউনের জেরে মানুষের আয় কমেছে। ফলে বিলাসিতা ভোগ্যপণ্যে মানুষ খরচ করতে চাইবে না। সব মিলিয়ে পর্যটন, বিমান পরিবহণের চেয়েও অটোমোবাইল সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy